সোমিত্র সৌম্য
শিলং থেকে ডাউকির দুরত্ব যেহেতু একটু বেশি সেজন্য আমরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রওনা দিলাম সকাল ১১ টায়। শিলং থেকে ডাউকির দূরত্ব ৮২ কি.মি। একটা সাত সিটের জ্বীপ ভাড়া করা হল ২০০০ রুপিতে। গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে মন খারাপ ভর করলো সবার মধ্যেই। আমরা একে একে ছেড়ে যেতে থাকলাম সাজানো গোছানো এক রাজ্য যেখানে যেখানে ঘুম ভাঙে মেঘের মাঝে, সন্ধ্যা হয় ঝি ঝি পোকার সাথে।
পাহাড় কেটে পিচ ঢালাই রাস্তা তখন আমাদের নিয়ে চলেছে আপন নিবাসের ঠিকানায়। মাথা উঁচু করে থাকা পাইন গাছগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতেই আমরা চলে আসলাম বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি থাকা পাহাড়ি রাস্তায়। সেখান থেকেই ড্রাইভার আমাদের জানালো ঐ যে দূর থেকে যে সমতল ভূমি সেটাই বাংলাদেশ।
মেঘালয়ের পরবর্তী গন্তব্য আমাদের যেহেতু ক্রাংসুরি ঝর্ণা সেহেতু আমরা বায়ে মোড় নিলাম। অবশ্য তার একটু আগেই ডান দিকে চলে যাওয়া একটা সাইনবোর্ডে আমাদের চোখ আটকালো সেটি হচ্ছে মাউলিনং। এই গ্রামটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে ২০০৩ সালে স্থান করে নিয়েছে।
আগের পর্ব পড়তে : মেঘের বাড়ি ‘মেঘালয়’ (৫ম দিন)
সময় ছিল না বলে সেটা আমরা এভোয়েড করলাম। এরপর আমাদের গাড়ি ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল ক্রাংসুরি ঝর্ণার সামনে। সেখানে ঝর্না দেখে চটজলদি করে আবার রওনা দিলাম ডাউকি বর্ডারের উদ্দেশ্যে। বর্ডার ৬টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় তাই আমরা আর সোনাংপ্যাডেং দেখার রিস্ক নিলাম না।
রাস্তায় যাবার সময় আমরা পাহাড়ের গা ঘেষে চললাম ডাউকি বোটিং পয়েন্টের পাশ দিয়ে। জাফলং থেকে আমরা যে ব্রিজটা দেখি সেটাই হচ্ছে ডাউকি বোটিং পয়েন্ট। নীল সবুজ জলরাশির উপর ভেসে চলেছে নৌকা।
অবশেষে আমরা সাড়ে পাঁচটার দিকে পৌঁছে গেলাম বর্ডারে। সেখানে ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশের বর্ডারের কার্যক্রম সেরে উঠে গেলাম সিলেটের বাস স্ট্যান্ডের বাসের উদ্দেশ্যে। জাফলং থেকে ডাইরেক্ট সিলেটের লাস্ট বাস ছাড়ে ৬:৩০ টায়। এরপর সিলেটে পৌঁছে ঢাকার বাসে উঠলাম রাত ১১:৩০ এ। শেষ হলো আমাদের মেঘালয় যাত্রা।
প্রয়োজনীয় কিছু টিপস-
#আগে থেকেই ভ্রমণ ট্যাক্স কেটে নেবেন। #সেখানে যেহেতু অধিকাংশ সময় বৃষ্টি হয় তাই অবশ্যই মনে করে ছাতা অথবা রেইনকোট নিয়ে নিবেন। #ডাউকি বাজারে তেমন মানি এক্সচেঞ্জ চোখে পড়েনি তাই আপনি যদি ইন্ডিয়ান রুপি না নিয়ে যান তবে স্থানীয়রা বিএসএফ এর চোখের আড়ালে তাদের দোকানে মানি এক্সচেঞ্জ করে থাকেন সেখান থেকেও করে নিতে পারেন। #শিলং, চেরাপুঞ্জিতে আবহাওয়া ঠান্ডা তাই অবশ্যই হালকা গরম কাপড় সাথে নিয়ে নিবেন। #প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে নিতে ভুলবেন না। পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেহেতু হাঁটবেন সেহেতু মশা বা পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে অডোমাস নিতে পারেন। #এছাড়া পলিব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চলাইট নিয়ে নিবেন। #ইন্ডিয়াতে সিম কিনে চালু হতে ২ দিন সময় লাগে তাই দুই দিনের আগে কেউ যদি পুরাতন ইন্ডিয়ান সিম দিয়ে যোগাযোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই ইন্ডিয়ান বর্ডারে ঢুকে কাস্টমার কেয়ার থেকে সিমটি চালু করে নিবেন। # মেঘালয় খুব সুন্দর একটা রাজ্য। সেখানে রাস্তায় ময়লা আবর্জনা দেখা যায় না বললেই চলে। তাই দয়া করে কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলবেন না। #আপনার আচরণ আপনার ব্যক্তিত্ব, পরিচয় বহন করে। তাই স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
ভ্রমণ মানুষের তৃতীয় চোখ খুলে দেয়। তাই বেশি বেশি ঘুরুন, নিজেকে আবিষ্কার করুন প্রতিনিয়ত এই বিশালতার মাঝে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড