• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেঘের বাড়ি ‘মেঘালয়’ (৫ম দিন)

  সোমিত্র সৌম্য

১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০৫
লাইটলুম
অপরূপ সৌন্দর্যে মোড়ানো লাইটলুম

ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে শান্ত শিলং কে না দেখার লোভ আমি সামলাতে পারিনি তাই একাই বের হয়ে গেলাম হাঁটতে। শিলং তখনো আড়মোড়া দিয়ে ঘুম ভাঙেনি। পাইন গাছের ফাঁকে তখনো লেপ্টে আছে কুয়াশারা, তাও হেঁটে হেঁটে দেখলাম এখানকার রামকৃষ্ণ আশ্রম। যেখানে ভোরেই প্রার্থনা শুরু হয়ে যায়।

এরপর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল শিলং এর সিএম এর বাসভবন, পুলিশ ভবন, হাইকোর্টসহ আরও অনেক কিছু। এখানে বেশ কিছু বাঙালি খাবারের হোটেল আছে তার মধ্যে হোটেল সুরুচি অন্যতম। সুস্বাদু খাবারের জন্য এটা বিখ্যাত। সকালে এখানে আলু পরোটা খেলাম। থালির দাম পড়লো ৭০ রুপি।

way

পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালানোর ফাঁকে

সকাল ১০ টার দিকে আমরা দু ভাগে বিভক্ত হয়ে শিলং এর দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে বের হয়ে গেলাম। একদল যারা পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালিয়ে যেতে চাইল তারা দুইটা royel enfild ভাড়া করল ১৮০০ রুপী দিয়ে যার জন্য বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে হলো এবং একজনের পাসপোর্ট জমা দিতে হল। আর একদল যে দলে আমিও ছিলাম তারা সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করলাম ১৫০০ রুপি দিয়ে। ড্রাইভার প্রথমেই প্রায় দেড় ঘণ্টা ড্রাইভ করে নিয়ে গেল লাইটলুম ক্যানিয়ন দেখাতে।

লাইটল্যুম ক্যানিয়নের বিশালতা আসলে বলে বুঝানো যাবে না। এই ক্যানিয়ন এতটাই বিশাল যে এর সামনে একজন মানুষকে শূন্য মনে হয়। একের পর এক সবুজ, বাদামী পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারা যায় অনায়াসে। সবুজ ঘাসের কার্পেটে শুয়ে শিশুতোষ আচরণ করলেও আশেপাশের কেউ মনেই করবে না, কারন এখানে হারিয়ে যেতে নেই মানা।

এখান থেকে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখা যায় একই সাথে মেঘ রোদ বৃষ্টির খেলা। আমরা যখন পৌছালাম রোদ ছিল বেশ। হঠাৎ যেন কোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে ঢেকে দিলো আমাদের। ঘন মেঘের ভিড়ে আমরা যখন আনন্দে মাখামাখি তখনই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমরা পড়িমড়ি করে ছুটে আশ্রয় নিলাম আমাদের গড়িতে। আধা ঘন্টা পর যখন বৃষ্টি থামল এ এক অন্য লাইটলুম।

lightloom

লাইটলুমের অপরূপ সৌন্দর্য

কোথাও পাহাড় ছায়ার কারণে ঘন সবুজ বর্ণ আবার কোথায় রোদের কারণে উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করেছে। এ যেন দিন দুপুরে আলোছায়ার লুকোচুরি খেলা। অদ্ভুত সুন্দর সে দৃশ্য! নিচ দিয়ে বয়ে চলা নদীটিও তখন চকচক করে জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব।

আগের পর্ব পড়তে : মেঘের বাড়ি ‘মেঘালয়’ (৪র্থ দিন)

এখানে অনেকে এসেছে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে। আবার কেউ কেউ এখানে এসে চাদর বিছিয়ে আয়োজন করছে পিকনিকের। এরমধ্যে একদলকে দেখলাম প্রি ওয়েডিং শ্যুটিং করতে। প্রায় দেড় ঘণ্টা থেকে আমরা রওনা দিলাম আবার শহরের দিকে। একে একে ঘুরে দেখলাম ডন বস্কো মিউজিয়াম যেখানে প্রদর্শিত হয়েছে মেঘালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পটভূমি।

চার্চ

স্থানীয় চার্চ

ঘুরে দেখলাম এখানকার চার্চ। এর বিশাল লনে বসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন এক বিকেল। স্থানীয় পার্ক আর চিড়িয়াখানায় ঢু মারলাম কিছুক্ষণের জন্য। বিকেলে চলে গেলাম সুন্দর করে সাজানো পার্কে। সন্ধ্যার একটু আগে গাড়ি যখন ছেড়ে দিলাম তখন প্রায় সাড়ে পাঁচটা। পেটে ভীষন ক্ষিধে এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে যায় বলে তাড়াতাড়ি করে কিছু স্ট্রিট ফুড খেয়েই রওনা দিলাম বড় বাজারের উদ্দেশ্যে।

ট্যুরের শেষ দিন তাই শপিং এর জন্য সন্ধ্যার পর সময় রেখেছিলাম, সবাই যে যার মত ছিল ব্যাস্ত। বড় বাজার হচ্ছে পাইকারী বাজার। তাই বিভিন্ন শপিং এর জন্য এ জায়গাটাই বেষ্ট। এখানে একটা সুবিধা হল ইংরেজী আর হিন্দির পাশাপাশি অনেকেই বাংলা জানে। তাই রাস্তাঘাটে চলতে, বুঝাতে সমস্যা হয়নি। আমি ট্যুরে গেলে ব্যাক্তিগতভাবে শপিং বিরোধী তবুও বাকিদের সময় দেয়ার পাশাপাশি মেঘালয় রাজ্যের দুইটি স্যুভেন্যুর কিনলাম।

রাতে ডিনার হল স্ট্রিট ফুড দিয়ে। আমি প্রত্যেক ট্যুরেই খুব অল্প টাকায় আহারই পছন্দ করি তাই ৭০ রুপিতে দারুণ এক বিরিয়ানি খেয়েই সেদিনের ডিনার শেষ করলাম।

চলবে...

প্রয়োজনীয় কিছু টিপস-

#আগে থেকেই ভ্রমণ ট্যাক্স কেটে নেবেন। #সেখানে যেহেতু অধিকাংশ সময় বৃষ্টি হয় তাই অবশ্যই মনে করে ছাতা অথবা রেইনকোট নিয়ে নিবেন। #ডাউকি বাজারে তেমন মানি এক্সচেঞ্জ চোখে পড়েনি তাই আপনি যদি ইন্ডিয়ান রুপি না নিয়ে যান তবে স্থানীয়রা বিএসএফ এর চোখের আড়ালে তাদের দোকানে মানি এক্সচেঞ্জ করে থাকেন সেখান থেকেও করে নিতে পারেন। #শিলং, চেরাপুঞ্জিতে আবহাওয়া ঠান্ডা তাই অবশ্যই হালকা গরম কাপড় সাথে নিয়ে নিবেন। #প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে নিতে ভুলবেন না। পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেহেতু হাঁটবেন সেহেতু মশা বা পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে অডোমাস নিতে পারেন। #এছাড়া পলিব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চলাইট নিয়ে নিবেন। #ইন্ডিয়াতে সিম কিনে চালু হতে ২ দিন সময় লাগে তাই দুই দিনের আগে কেউ যদি পুরাতন ইন্ডিয়ান সিম দিয়ে যোগাযোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই ইন্ডিয়ান বর্ডারে ঢুকে কাস্টমার কেয়ার থেকে সিমটি চালু করে নিবেন। # মেঘালয় খুব সুন্দর একটা রাজ্য। সেখানে রাস্তায় ময়লা আবর্জনা দেখা যায় না বললেই চলে। তাই দয়া করে কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলবেন না। #আপনার আচরণ আপনার ব্যক্তিত্ব, পরিচয় বহন করে। তাই স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।

ভ্রমণ মানুষের তৃতীয় চোখ খুলে দেয়। তাই বেশি বেশি ঘুরুন, নিজেকে আবিষ্কার করুন প্রতিনিয়ত এই বিশালতার মাঝে।

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড