• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেঘের বাড়ি ‘মেঘালয়’ (প্রথম দিন)

  সৌমিত্র সৌম্য

০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:১১
মেঘালয়
মেঘালয়ের অপূর্ব রূপ

কাশ্মীর যদি হয় পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ তবে মেঘালয় হচ্ছে সে স্বর্গের দরজা। যে গৃহ আপনাকে স্বাগত জানাবে আপন আলয়ে, আপন মহিমায়। যার নামের মধ্যেই মিশে আছে নামের স্বার্থকতা। মেঘালয় হচ্ছে এক মায়ার নাম। যাকে ঘিরে আছে জানা, অজানা অনেক পাহাড়। যাদের বসনের রঙ শুধুই সবুজ। সেই সবুজ চিড়ে খেলা করে স্নিগ্ধ, শুভ্র ঝড়না।

বাংলাদেশের একদম গা ঘেঁষেই অবস্থান ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত রাজ্যের অন্যতম সদস্য 'মেঘালয়ের'। পাহাড়ের কোলে মেঘের নিত্য খেলা আর জলপ্রপাতের গর্জনের সাথে অপরূপা মেঘালয় ঘুরতে হবে সৌন্দর্য পিপাসু মন নিয়ে। আর মেঘালয় হচ্ছে এমন এক জায়গা যা আপনার পিপাসাকে বৃথা যেতে দেবে না, বরং তার আজলা পেতে আপনাকে পান করতে দেবে তার সৌন্দর্যের অমৃত।

ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জল পাহাড়ের 'মেঘালয়'। বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই আপনি মেঘালয় যেতে চাইলে প্রথমেই আপনার পাসপোর্টে ভারতীয় টুরিস্ট ভিসাতে এন্ট্রি পোর্ট হিসাবে থাকতে হবে “ডাউকি” বর্ডার। কারন বাংলাদেশের সিলেটের তামাবিলের অপর পাশেই তার অবস্থান।

শুরুতেই বলে রাখি, মূলত আমাদের ট্যুরটি ছিল বাজেট ট্যুর এবং মেঘালয়ের প্রচলিত কিছু স্পটের পাশাপাশি কিছু অপ্রচলিত স্পটের সৌন্দর্য অবগাহন করা, যা সঞ্চয় হিসাবে রাখতে চেয়েছি সারাজীবন। সেক্ষেত্রে আমরা চড়েছি লোকাল ট্রান্সপোর্টের পাশাপাশি জীপ, ট্যাক্সি , প্রাইভেট কারের মত যানবাহনেও। সময় এবং ঝামেলা বাঁচানোর জন্য আমরা আগে থেকেই ভ্রমন ট্যাক্স কেটে নিয়েছিলাম। আর আমরা সংখ্যায় আটজন হওয়াতে সব কিছু শেয়ার করতে পেরেছিলাম আরামে এবং সস্তায়।

দিন ১-

ঢাকা থেকে আমরা সিলেটগামী বাসে করে ভোরে নামলাম কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে। বাস ভাড়া ছিল ৪৬০ টাকা। ভোরে সেখানে নেমে বাসের কাউন্টারে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। চা আর বিস্কিট খেয়ে সেখান থেকে লোকাল বাসে চড়ে চলে গেলাম তামাবিল বর্ডারে। ভাড়া ছিল শুধুমাত্র জনপ্রতি ৬০ টাকা।

বর্ডারে গিয়েই প্রথমে লোকাল দোকানে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিলাম। নাস্তা হিসাবে রুটি ভাজি আর ডিম খেলাম ৫০ টাকায়। এরপরে তামাবিল বর্ডারে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বর্ডার পার হয়ে চলে গেলাম ভারতের ডাউকি বর্ডারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্ডারে খরচা পানি বাবদ আমাদের দিতে হল জনপ্রতি ২০০ টাকা।

তো ডাউকি বর্ডার থেকে ইমিগ্রেশন আর কাস্টমস ক্লিয়ার হয়ে হাঁটা শুরু করলাম এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডাউকি বাজারের উদ্দ্যেশে। এরমধ্যে বাঁধ সাধলো বৃষ্টি। রেইনকোট থাকায় সেটা পরেই পৌঁছে গেলাম ডাউকি বাজারে। এখান থেকেই বাস ছাড়ে চেরাপুঞ্জির উদ্দ্যেশে। আমাদের বর্ডারে দেরি হওয়াতে আর লোকাল বাস না পাওয়াতে আমাদের ট্যুর ম্যাপ চেঞ্জ হল। সিন্ধান্ত হলো, জীপে চড়ে আমরা চেরাপুঞ্জি যাব এবং যাবার পথে স্থানীয় ট্যুরিস্ট স্পট গুলো ঘুরব। এখানে বলে রাখা ভাল, বেলা বাড়ার সাথে সাথে ড্রাইভাররা তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দেয় তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দরদাম করে গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া।

তো, আমরা ৩৮০০ রুপিতে জীপ ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম এবং দরদাম করার আগে ড্রাইভার কে বুঝিয়ে দিলাম আমরা কোন স্পটগুলো কভার করব। গাড়ি যখন চলতে শুরু করলো তার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে তখনি চোখে পড়ল নাম না জানা কত ছোট ঝড়না, হয়ত তারা চোখ টিপে জানান দিচ্ছিল, ‘এই তো মাত্র শুরু’।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম উমিক্রেম, বিশাল বুক চিতিয়ে বইতে থাকা এই ঝড়না শুধু আপনাকে চোখের প্রশান্তিই দেবে না বরং তার জলকণার স্পর্শে দূর থেকেও ভিজিয়ে দেবে শরীর। এরপর যাত্রা পথে আমরা থামলাম বড় হিলের পাশে, যাকে আমরা বাংলাদেশ অঞ্চলে পান্থুমাই জলপ্রপাত হিসাবেই চিনি। যার ফেনিল সাদা স্রোত দেখে আপনার মনে একটু হলেও আফসোস জাগবে, ‘ইশ এই ঝড়নাটা কেন আমাদের হল না?’

মেঘালয়

এই আফসোস নিয়ে যখন আমরা আবার গাড়িতে চড়ে যাত্রা শুরু করেছি তখনই আমাদের শুরু হল বিস্ময়! প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় আছে আমাদের। এ পাহাড় থেকে ও পাহাড় ছুটে বেড়াচ্ছে মেঘ। মাঝেমধ্যে আমাদের শরীর ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে এ পাশ থেকে ওপাশ। এ এক আনিন্দ্য সুন্দর!

কখনো দুপাশে দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠ আবার কখনো একপাশে পাহাড় তো অন্যপাশে গিরিখাত। যার নিচে বয়ে চলে গেছে কোনো এক নদী। আলো আঁধারি খেলা আর পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে হেডলাইটের আলোয় আমরা পৌঁছে গেলাম চেরাপুঞ্জিতে। এখানে প্রচুর হোম স্টে পাওয়া যায়। আমরা আমাদের জন্য একটা কটেজের দোতালা ভাড়া নিলাম ২২০০ রুপিতে।

সেখানে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাজারে গিয়ে খাবার খেয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে। বাংলাদেশে এই সময়ে যেখানে গরমে অতিষ্ট সেখানে চেরাপুঞ্জিতে বেশ ঠান্ডা। তাই কম্বল গায়ে, আরাম জড়াতেই কেউ একজন বলে উঠল ‘শুভ রাত্রি মেঘালয়া’।

চলবে...

প্রয়োজনীয় কিছু টিপস-

#আগে থেকেই ভ্রমন ট্যাক্স কেটে নেবেন। #সেখানে যেহেতু অধিকংশ সময় বৃষ্টি হয় তাই অবশ্যই মনে করে ছাতা অথবা রেইনকোট নিয়ে নিবেন। #ডাউকি বাজারে তেমন মানি এক্সচেঞ্জ চোখে পড়েনি তাই আপনি যদি ইন্ডিয়ান রুপি না নিয়ে যান তবে স্থানীয়রা বিএসএফ এর চোখের আড়ালে তাদের দোকানে মানি এক্সচেঞ্জ করে থাকেন সেখান থেকেও করে নিতে পারেন। #শিলং , চেরাপুঞ্জি তে আবহাওয়া ঠান্ডা তাই অবশ্যই হালকা গরম কাপড় সাথে নিয়ে নিবেন। #প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে নিতে ভুলবেন না। পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেহেতু হাটবেন সেহেতু মশা বা পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে অডোমাস নিতে পারেন। #এছাড়া পলিব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চলাইট নিয়ে নিবেন। #ইন্ডিয়াতে সিম কিনে চালু হতে ২ দিন সময় লাগে তাই দুই দিনের আগে যদি কেউ যদি পুরাতন ইন্ডিয়ান সিম দিয়ে যোগাযোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই ইন্ডিয়ান বর্ডারে ঢুকে কাস্টমার কেয়ার থেকে সিমটি চালু করে নিবেন। # মেঘালয় খুব সুন্দর একটা রাজ্য। সেখানে রাস্তায় ময়লা আবর্জনা দেখা যায় না বললেই চলে। তাই দয়া করে কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলবেন না। #আপনার আচরণ আপনার ব্যাক্তিত্ব, পরিচয় বহন করে। তাই স্থানীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন।

ভ্রমন মানুষের তৃতীয় চোখ খুলে দেয়। তাই বেশী বেশী ঘুরুন, নিজেকে আবিস্কার করুন প্রতিনিয়ত এই বিশালতার মাঝে।

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড