• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপরাষ্ট্র ‘মালদ্বীপ’

  লামিয়া আলভী

২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩৭
মালদ্বীপ
মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য (ছবি : ইন্টারনেট)

পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্য্যমন্ডিত দেশ ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র "মালদ্বীপ"। সরল, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ,আদিম সমুদ্র সৈকত মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। যেখানে পানির রং নীল আর বালির রং সাদা।

শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ১১৯২টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। এর মধ্যে ২০০টি দ্বীপ ব্যবহারযোগ্য। এতে রয়েছে ২৬টি অ্যাটোল। মালদ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। বিষুবরেখার কাছে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মাত্র একটি ঋতু আছে। সারাবছরের গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অপরূপ সুন্দর দেশ মালদ্বীপ

দেশ পরিচিতি-

আয়তন : ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার রাজধানী : মালে রাষ্ট্রীয় ভাষা : ধিবেহী মুদ্রা : মালদ্বীপীয় রুপাইয়া রাষ্ট্রপতি : ইব্রাহীম মোহাম্মদ সালেহ জনসংখ্যা : ৩,৯৩,৫০০ ধর্ম : ইসলাম মাথাপিছু আয় : ৯,১২৬ ডলার (সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি)

মালদ্বীপ সম্পর্কে কিছু তথ্য-

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১২০০ খ্রিস্টাব্দে আবুল বারাকাত নামে একজন মরক্কান ধর্ম প্রচারক মালদ্বীপে আসেন।তার প্রভাবে দ্বীপের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইবনে বতুতা মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে পর্তুগিজ ও ব্রিটিশরা পর্যটক হিসেবে, বাণিজ্য কুঠি স্থাপন, সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য এখানে আসে।

১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে "সালাতানাতে মালদ্বীপ" থেকে "রিপাবলিক মালদ্বীপে" পরিণত হয়।

মালদ্বীপে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে ২০০৫ সালে। তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই।

মালদ্বীপের অর্থনীতি-

প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূলভিত্তি। মালদ্বীপ টুনা মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে দেশটির বড় শিল্প হলো পর্যটন। বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে। বর্তমানে দেশটির জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার গড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি।

স্কিপজ্যাক টুনা

খাদ্যাভাস-

মালদ্বীপের মানুষের খাদ্যাভাস মূলত মাছকেন্দ্রিক। "স্কিপজ্যাক টুনা" মাছ হিসেবে মালদ্বীভিয়ানদের পছন্দ। এছাড়া টুনা মাছ দিয়ে রান্না করা কারি "ম্যাসরিহা" তাদের অন্যতম পছন্দের খাবার।

মালদ্বীপের পর্যটন-

এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ মালদ্বীপকে বিধাতা যেন দু'হাত ভরে সাজিয়েছেন। প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে আসে। অনেকের কাছেই হানিমুনের জন্য সবচেয়ে পছন্দের দেশ মালদ্বীপ। মালদ্বীপের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সহজেই এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে ঘুরে বেড়ানো যায়। মালদ্বীপকে "হানিমুন ডেস্টিনেশন" ও বলা যায়।

হানিমুন ডেস্টিনেশন ‘মালদ্বীপ‘

একমাত্র মালদ্বীপেই বিশালাকার সাবমেরিনে করে সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়ানো যায়, পর্যটকদের প্রায় ১২০ ফুট পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যায়। গভীর সমুদ্রের সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবে।

মালদ্বীপে বেড়াতে এলে আপনি থাকতে পারেন সমুদ্রের পানির উপর বিশেষভাবে নির্মিত বাড়িতে। যেখান থেকে আপনি সমুদ্রের বিভিন্ন রঙের মাছ খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন, শুনতে পারবেন সামুদ্রিক পাখির ডাক।

ইথা আন্ডার সি রেস্টুরেন্ট

মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো “ইথা আন্ডার সি রেস্টুরেন্ট” যা সমুদ্রের ৬ মিটার গভীরে স্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে নির্মিত। এ রেস্টুরেন্টে একসাথে ১২ জন অতিথি বসা যায়। সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে দেখতে পাবেন বিভিন্ন মাছ আপনার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই রেস্টুরেন্টে সবচেয়ে কম মূল্যে লাঞ্চ করার জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ২০০ মার্কিন ডলার।

মালদ্বীপ ঘুরতে গেলে অবশ্যই "ভাদহু" দ্বীপে যেতে ভুলবেন না। কারণ সূর্যাস্ত যাওয়ার পর ঢেউয়ের তালে তালে জ্বলজ্বলে করতে থাকে এ দ্বীপের বালুময় সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের পানি থেকে বিচ্ছুরিত হয় অদ্ভুত আলো। সে এক অসাধারণ দৃশ্য যা দেখে চোখ বিস্ময়ে আটকে থাকবে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়, যে এটা কীভাবে সম্ভব!

"ভাদহু" দ্বীপ

ফাইটোপ্লাংকটন নামে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র প্রাণী এ ধরনের আলো তৈরি করে। এরা অন্ধকারে জ্বলতে থাকে এবং পানির সাথে মিশে এক অদ্ভুত সুন্দর আলোর সৃষ্টি করে। এ সমুদ্র সৈকতে একরাত কাটালে অবশ্যই মনে হবে স্বর্গের রূপ কিছুটা হলেও আপনার চোখের সামনে হাতছানি দিচ্ছে।

এছাড়া "হলুমালে" দ্বীপ মালদ্বীপের আরেকটি অন্যতম সুন্দর দ্বীপ। মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট থেকে একদম কাছাকাছি এ দ্বীপ শহরটি। হলুমালে দ্বীপ থেকে অন্য যেকোনো দ্বীপে যাওয়া সহজ। এ দ্বীপে গেলে আপনার মনে হবে সাগরকন্যা মালদ্বীপ আপনাকে দু'হাত বাড়িয়ে ডাকছে তার অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। বিশাল জলরাশি, সমুদ্রের গর্জন, নির্মল বায়ুপ্রবাহ পর্যটকদের অশান্ত মনকে শান্ত করে দেয়। আপনি যদি "বীচ প্যালেস" হোটেলে থাকেন তবে সমুদ্র সৈকত দারুণভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

আর যদি সাগরের নিচে স্কুবা ডাইভিং করতে চান তাহলে আপনি হলুমালে বিচ প্যালেস থেকে ৫-৭ মিনিট হাঁটলেই একটি ডাইভিং ক্লাব পেয়ে যাবেন।

মালদ্বীপের আরেকটি জনপ্রিয় আইল্যান্ড হলো "বান্দোস আইল্যান্ড রিসোর্ট"। হলুমালে থেকে বান্দোস আইল্যান্ডে যেতে স্পিডবোটে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। স্নরকেলিং,ডীপ সি ডাইভিং, সার্ফিং ইত্যাদি এক্টিভিটির জন্য এ দ্বীপ জনপ্রিয়।

এছাড়াও আরও বেশকিছু সুন্দর রিসোর্ট রয়েছে মালদ্বীপে।

সময় সুযোগ বুঝে ঘুরে আসতে পারেন এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র থেকে। রিসোর্টগুলো একটু ব্যয়বহুল হলেও মালদ্বীপের প্রকৃতি আপনাকে নিরাশ করবে না। সৌন্দর্যে চোখ ভরানোর পর মনে মনে অবশ্যই বলবেন, পয়সা উশুল।

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড