ইসরাত জাহান পান্না
আপনাকে চেনা হয়েছিল ঠিক এমন একটা দিনে, যে দিন আপনার চির বিদায়। আপনার একটা কথা আমার খুব পছন্দের, ‘প্রিয় মানুষদের সাথে সবসময় দেখা হতে নেই। তাদের সাথে দেখা হতে হয় মাঝে মাঝে।’
সেখান থেকেই আপনার সাথে দেখা না হওয়াটার ব্যথা ছিল না। তবে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার একটা প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে একবার গিয়েছিলাম গাজীপুর। দুর্ভাগ্যবশত সেবার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তখন থেকেই একরাশ অপেক্ষা জাগতে থাকে কখন যাব? কখন যাব আপনার কাছে?
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার উত্তর বাড্ডায় এক আত্মীয়র বাসায় যাই। যদিও লক্ষ্য নুহাশ পল্লী। তারা আমাকে একা যেতে না দেওয়ায় ১৩ নভেম্বর আপনার জন্মদিনে আর যাওয়া হয়নি। গিয়েছি ১৪ নভেম্বর। আর সেখানেই হতাশা!
দুশ টাকা করে টিকেট থাকায় যেহেতু আমার সাথে দুই কাজিন ছিল তাই আমি আর টিকেট কাটতে পারিনি। কারণ, ওদের উত্তর বাড্ডায় থেকে গাজীপুর আবার ফিরে আসার সব খরচ আমার।
খুব চিন্তিত হয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। নুহাশ পল্লীর সামনে বাম পাশে যে চায়ের দোকানটা আছে সেই দোকানী (নাম জিজ্ঞাস করা হয়নি) আমার কাছে এগিয়ে আসল। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে আমি টিকেট আনতে গিয়ে না এনে ফিরে এসেছি। আমার চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর গিয়ে নুহাশ পল্লী যাওয়ার আনন্দ দেখে তিনি বললেন, খুব সাহস তোমার! এতদূর থেকে একা আসতে চাও। আবার বলছ হুমায়ূন স্যার তোমার প্রিয়, তাকে প্রিয় করার কী দরকার ছিল?
আমি উত্তর না দিয়ে একটু হেসে বললাম, বই পড়তে ভালো লাগে। তিনি স্মিত হেসে বললেন, দুশ টাকা দাও। কালকে আসলে ফ্রিতে ঢুকতে পারতে। শাওন ম্যাডাম ও এসেছিল। দুশ টাকা দিয়ে তিনটি টিকেট এনে আমার হাতে দিলেন। কাজিনরা ওনার দোকান থেকে চা আর বিস্কুট খেল, তার টাকা না দিয়েই আমি ছুটলাম।
সেখানে কি কি আছে বললাম না। আমার মতে, দেখার মতো কিছু নেই। কিন্তু অনুভব করার জন্য আছে অনেক কিছু। বারোটা থেকে চারটা পর্যন্ত ভেতরে থাকলাম। তাড়াহুড়ার মধ্যে খাবার আনতে ভুলে গেছিলাম। এত খিদে পেল, মাথায় তখন যাতা ঘুরছে। হুমায়ূন আহমেদের সমাধির পাশে গিয়ে বললাম, ‘আপনার বাড়িতে আসলাম আর আপনি নেই। সংবর্ধনা না হয় চা ওয়ালা করল। তবে, খাওয়াবে কে?’
তিনি কোনো জবাব করলেন না, শুয়ে আছেন। কাজিনরা আমায় পাগল বলতে বলতে, চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘আপু তেঁতুল গাছ আর বড়ই।’ আমার আনন্দের আর সীমা থাকল না। এই যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম। ভাই গাছে উঠল। বোন আর আমি বড়ই আর তেঁতুল গুলো কুড়িয়ে নিলাম। মহানন্দে তিনজনে মিলে খেতে বসে গেলাম।
সেদিন একটা ইচ্ছা পূরণ হলেও ফেরার সময় কিসের যেন একটা হাহাকার ছিল ভেতরে। নিজের মধ্যে কেমন হচ্ছিল। জানা ছিল না কী! ভোটের সময় রাস্তায় মারামারি চলায় আমাদের আসতে আসতে রাত নয়টা হয়ে যায়। এ দিকে মোবাইল বন্ধ পেয়ে চাচীরা চিন্তায় শেষ। যখন ঘরে ঢুকলাম। আমার মুখ চেয়ে সবার ক্ষোভ। খুব কষ্ট লেগেছিল তখন। চাচী বললেন, ‘তুই যে এতো দস্যি! আমি জানলে আমার ছেলে মেয়েকে তোর সাথে যেতে দিতাম না!’
এটা শুনে, কান্না করার মতো কোনো জায়গা ছিল না বলে চেপে গেলাম। রাত এগারোটা। কাজিনরা আমাকে বলে, ‘আপু একটা কথা বলি?’ - বলো। - আপনি যে এই রকম জানতাম না! তাদের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তবুও বললাম, ‘কী করেছি বল তো?’ - এই যে একজন মানুষকে না দেখে তার প্রতি এত ভালোবাসা। আজকে আপনার সাথে না গেলে বুঝতাম না। আপনার জন্য আমিও হুমায়ূন আহমেদের পল্লী আর তার প্রেমে পড়ে গেলাম। অনেক ধন্যবাদ।
ওদের ভক্তি দেখে আমার সব কষ্ট উধাও। তাদের মুচকি হেসে বললাম, ‘আরে আমরা তো মুসলমান। যেমনটা আল্লাহ আর রাসূলকে (স.) না দেখে বিশ্বাস করতে পারি। তেমন আমাদের ভালোবাসা, মানুষদের প্রতিও এভাবে হয়ে থাকে।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড