নিশীতা মিতু
মেহেদির নকশায় হাত রাঙাতে ভালোবাসেন না এমন নারী খুঁজে পাওয়া ভার। কেউ কেউ তো হাতের নকশা আবছা হলেই আবার মেহেদি দেন। বিয়ে কিংবা ঈদের মতো উৎসব আসলেই মেহেদির কথা চলে আসে। বিয়ের কনে মানেই হাত ভর্তি মেহেদির নকশার মায়া।
সবাই মেহেদি দিতে ভালোবাসলেও কেউ কেউ রয়েছেন যারা মেহেদি দিতে নয় বরং মেহেদি লাগিয়ে দিতে ভালোবাসেন। এই যেমন শরীফা সুমাইয়া মাহমুদ। ছোটবেলা থেকেই অন্যদের মেহেদি লাগিয়ে দেন তিনি। পাড়ার ছোটরা ঈদের আগের রাতে বাড়িতে ভিড় জমাতো মেহেদি পরিয়ে দিতে, সুমাইয়াও ভালোবেসে তাদের হাতে এঁকে দিতেন মেহেদির আলপনা।
বর্তমানে নিজের একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে সুমাইয়ার। “মেহেন্দি গ্যালারি বাই সুমাইয়া” নামের সে প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু সময় কথা হয় তার সঙ্গে। জানান, ছোটবেলায় শখের বসে করা কাজগুলো একসময় অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। বান্ধবীদের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেওয়া, স্কুলের সায়েন্স ফেয়ারের সময় স্টলে বসে মেহেদি লাগানো এভাবেই শুরু হয়। কলেজে উঠে একজনে বিয়ের কনের হাতে মেহেদি আগিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শখটা পেশায় রূপ নেয়।
২০১২ সালে কোনো কিছু না ভেবে ঝোঁকের বসে ফেসবুকে নিজের মেহেদির পেজ খোলেন সুমাইয়া। পেজে দেওয়ার জন্য নিজের মোবাইল গ্যালারিতে মেহেদির ছবি খুঁজছিলেন। গ্যালারিতে খুঁজতে খুঁজতেই নিজের পেজের নাম ঠিক করে ফেলেন- “মেহেন্দি গ্যালারি বাই সুমাইয়া”। পেজ খোলার পর টুকটাক কাজ পেতে শুরু করেন তিনি। তবে পরিচিতদের মধ্যে ব্রাইডাল মেহেদির কাজ বেশি করা হতো তখন।
নিজের মেহেদি দেওয়ার এই প্রতিভার মূল্যও পেয়েছেন সুমাইয়া। ২০১৩ সালে অংশ নিয়েছিলে ‘মুমতাজ মেহেদি রঙে আঁকো আলপনা’ নামের প্রতিযোগিতায়। সেখানে সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হন তিনি। জয় করেন চ্যাম্পিয়ন’স ট্রফি। আর তারপর কাজের প্রতি নেশা বেড়ে যায় আরও অনেকখানি।
পড়াশোনার পাশাপাশি মেহেদির কাজ করেন সুমাইয়া। এ কাজে তার কোনো ক্লান্তি নেই। টানা অনেকক্ষণ কাজ করে যান প্রায়ই। সুমাইয়া বলেন, ‘মেহেদি আমার নেশা। এর রং, ঘ্রাণ সবকিছুই আমার কাছে নেশার মতো। মেহেদি দেওয়ার কাজটা করতে হয় ধৈর্য নিয়ে। কারণ তাড়াহুড়া করলে কখনই কাজটা ভালো হয় না। আর আমি আমার কাজ ধৈর্য নিয়েই করতে ভালোবাসি।’
বিয়ের কনের হাতে মেহেদি দিতে বেশি ভালোবাসেন সুমাইয়া। তাই ব্রাইডাল মেহেদির কাজই করা হয় বেশি। সুমাইয়া মনে করেন, একজন নববধূর সাজে পূর্ণতা এনে দেয় হাতভর্তি মেহেদির আলপনা। আর এই কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখাতে রয়েছে আনন্দ।
মেহেদির কাজ সবচেয়ে বেশি করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। এছাড়াও ঈদ, পূজা, ফাল্গুন উৎসব, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি সময়ে মেহেদির আবেদন থাকে বেশি। এসব কাজে গিয়ে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে ভালোবাসেন সুমাইয়া।
ভবিষ্যতেও ভালোবাসে মেহেদি দেওয়ার কাজ করতে চান তিনি। সুমাইয়া বলেন, ‘পড়াশোনা কিংবা চাকরী যাই করি না কেন, মেহেদির প্রতি আমার ভালোবাসা অন্যরকম। এখনও ছোট পরিসরে কাজ করছি। আস্তে আস্তে কাজের পরিধি বাড়ছে। ইচ্ছে আছে একসময় নিজের হেনা টিম থাকবে।’
পুরোপুরি সততার সঙ্গে যেন নিজের কাজ করতে পারেন এটিই সুমাইয়ার কামনা। মেহেদি নিয়ে এগিয়ে যেতে চান বহুদূর।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড