• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মোড়া তৈরি করে স্বাবলম্বী পাহাড়ি রমণীরা

  খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:০৭
নারী
মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত পাহাড়ি নারীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর হাতিয়াপাড়া গ্রাম। যেখানে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। নাগরিক জীবনের বেশ কয়েকটি সুবিধা থেকে এখনো বঞ্চিত সেখানকার বাসিন্দারা। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে নেই তেমন কোনো ফসলি জমিও। এখান কার বেশিরভাগ মানুষেরই অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নিচে। সেখানেই মোড়া তৈরি করে কোন রকমে চলা সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন নারীরা।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

নিখুঁত মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মোড়া তৈরি করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন নিভৃত পল্লীর এসব নারীরা। শুধুমাত্র হাতিয়াপাড়া নয়, পাশের গ্রাম কাজীপাড়া, বটতলী ও পলাশপুরের নারীরাও মোড়া তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে মাটিরাঙ্গার বেশ কয়েকটি পাহাড়ি পল্লীর প্রায় শতাধিক নারী ঘরে বসে মোড়া বানানোর কাজ করছেন। কোনো ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পাহাড়ের এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প।

সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার হাতিয়াপাড়ায় গেলে দেখা যায় বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন রাহেনা আক্তার। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মোড়া তৈরি করছেন। আগে স্বামীর আয়ে সংসার চলতো। আর এখন স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আয় করছেন। এ টাকাতেই নতুন ঘর করেছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন। একটু দূরেই পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছেন মুন্নী আক্তার।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত মোড়া (ছবি : দৈনিক অধিকার)

তিনি জানান, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। আগে অবসরে স্থানীয় নারীরা গল্প করে সময় কাটালেও এখন মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। মোড়া তৈরি করে সকলের পরিবারেই কমবেশি আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে বলে জানান তিনি। নারীদের তৈরি মোড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় পাইকাররা। বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে মোড়া তৈরির কাজ। দিন দিন স্কুল-কলেজের ক্লাস শেষে মায়ের সঙ্গে মোড়া বানানোর কাজে ঝুঁকছে মেয়েরাও।

জানা গেছে, সপ্তাহে একজন দুই থেকে তিন জোড়া মোড়া তৈরি করতে পারে। ছোট আকারের এক জোড়া মোড়া ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের মোড়া বানাতে আড়াইশ আর বড় আকারের মোড়া তৈরিতে খরচ পড়ে সাড়ে ৩০০ টাকা। আকার ভেদে এসব মোড়া প্রতি জোড়া সাড়ে তিনশ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। যা থেকে প্রতিজন সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন।

পাহাড়ের এসব নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি এসব মোড়া ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে সমতলের জেলাগুলোতে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার মতো কাজটি করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মোহাম্মদ আলী ও রিপন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বাজারে এখানকার মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়ে মোড়ার স্থানীয় পাইকার মো. আশরাফ আলী বলেন, সপ্তাহে ৭০-৮০ জোড়া মোড়া বিপণন করা হয় এসব জেলাগুলোতে।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

মোড়া তৈরি করছেন দুই নারী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শামছুল হক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে ঋণ প্রদানসহ মোড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড