• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফটোহলিক : ছবিতে কল্পরাজ্যের ছোঁয়া

  নিশীতা মিতু

২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:২৬
ফটোহলিক
ফটোহলিক’র কর্ণধার আরিফুল ইসলামের তোলা ছবি

“ছবি যেন কথা বলে”— এই বাক্যটির সঙ্গে পরিচিত আমরা সবাই। মাঝেমধ্যে চোখের সামনে এমন কিছু ছবি এসে ধরা দেয় যেখানে একটি স্থিরচিত্রই একটি গল্প বলে দেয়। মানুষের আবেগ, ভালোবাসা কিংবা অনুভূতিকে ফ্রেমবন্দি করা কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ নয়। কেমন হবে যদি একটি ছবি দেখে আপনি মনের অজান্তেই বলে ওঠেন, ‘এ তো কল্পলোকের রাজকন্যা!’।

ফটোহলিক

আজ এমন একদল তরুণের গল্পই বলতে যাচ্ছি যারা কল্পনাকে বাস্তবের খাতায় তুলে ধরে সুন্দর কিছু মুহূর্তকে সময়বন্দি করার কাজ করেন। বলছিলাম ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান “ফটোহলিক” এর কথা। কেমন ছিল ফটোহলিকের যাত্রার শুরুর সময়টা? এ পথ কি মসৃণ ছিল নাকি ছিল ভঙ্গুর? সবকিছু জানতে কিছুটা সময় কথা হয় “ফটোহলিক”র কর্ণধার আরিফুল ইসলামের সঙ্গে।

আরিফ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আলোকচিত্র বা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে— এটা দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আনন্দিত হই। কিন্তু একটা সময় ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। আমি পাহাড়ের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় হয়েছি। এখন ভাবতেই অদ্ভুত লাগে যে আমার গ্রামে থেকে আসলেই এমন স্বপ্ন দেখাও সম্ভব ছিল? তবে এখন বিশ্বাস করি যে, মানুষ আসলেই তার স্বপ্নের সমান বড়।

কারণ, যে গ্রামে আধুনিকতা হয়তো এখনও সেইভাবে পৌঁছাতে পারেনি, যে গ্রাম মাত্র কিছুদিন আগে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার আওতায় এসেছে, যেখানে দুর্গম বলে এখনও চলাচলে রাস্তা তৈরি হয়নি— সে গ্রামে থেকে কেউ নিশ্চয়ই আলোকচিত্র নিয়ে কাজ করবে এটা ভাবতে পারার কথা না।’

ফটোহলিক

একজন ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আরিফ বলেন, ‘বেশ কিছু বছর আগেও ফটোগ্রাফির জায়গাটা সেভাবে তৈরি না হলেও আমি শুধু চেয়েছি যে কাজটা আমি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি সেটা যেন করতে পারি। তবে সময়ের সাথে সাথে বুঝতে পেরেছি যে এটা আসলেই এতটা সহজ না যতটা সুন্দর করে পৃথিবীর অনেক বড় বড় সফল উদ্যোক্তারা বলেছেন তাদের বড় হওয়ার গল্পগুলো।

এই পথটা অনেক বেশি কঠিন। এখানে প্রতি পদে পদে নিজের সঙ্গে নিজেকে যুদ্ধ করতে হয়। আমার শুধু এটুকুই জানা ছিল বাঁকা পথে যে মানুষ হাঁটবে তার পথে বাঁধা একটু বেশি আসবেই কিন্তু কীভাবে যে আগাবো তার কোনোকিছুই আমি জানতাম না।’

এত অনিশ্চয়তার মাঝে ‘ফটোহলিক’র জন্ম হলো কী করে? জানতে চাই আরিফের কাছে। আরিফ বলেন, ‘আমি মনে প্রাণে কাজ করতে থাকলাম। ধীরে ধীরে কাজ বাড়তে লাগল, নিজের ছোট খাটো একটা কোম্পানি হলো, সাথে কিছু ফটোগ্রাফারও যুক্ত হলেন যাদের সবার মাঝেই ভালো কাজ করার একটা উদ্যম ছিল।’

ফটোহলিক

প্রতিষ্ঠানের নাম কেন ‘ফটোহলিক’ দিলেন জানতে চাইলে আরিফ জানান, তিনি এবং তার এক বড় ভাই মিলে মূলত প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে যদিও তিনি আর এতে যুক্ত থাকতে পারেননি। অনেক ভাবনা শেষেও নিজের ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কোনো নাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না আরিফ। ছবি তোলার নেশা রয়েছে তার, চাইছিলেন নামেও যেন এমন একটা ব্যাপারই থাকে। সবকিছু মিলিয়ে খোঁজ মেলে ‘ফটোহলিক’ শব্দটির, যার অর্থ ‘ছবির নেশাগ্রস্ত’। আর তাই এই নামই দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের।

ফটোহলিক

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতেও কাজ করেছে ‘ফটোহলিক’। কেমন ছিল সে কাজের অভিজ্ঞতা? আরিফ বলেন, ‘এক আপু আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমরা দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চাই কি না। আমি মনে মনে যেন এমন কিছুরই অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ আমি দেশ আর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়াবো— এমন স্বপ্নই দেখি।

যাইহোক আমি দেশের বাইরে প্রথম কাজ করতে চলে গেলাম ভারত। কাজ করে ফিরে আসলাম, সবাই খুশিও হলো। এমন আরও অনেক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।’

২০১৪ সালে ‘ফটোহলিক ফটো আর্ট স্কুল’ নামে একটি স্কুল শুরু করেন আরিফ যেখানে শুরুতে তিনি বিনামূল্যে আলোকচিত্র বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম চালান। পরবর্তী সময় বিভিন্ন রকম প্রফেশনাল কোর্স করান। এখন পর্যন্ত পুরো দেশের এক হাজারেরও বেশি ফটোগ্রাফারকে আলোকচিত্র বিষয়ক সহযোগিতা দিয়েছেন তিনি, আরও করে যেতে চান এ কাজ।

কিছুদিন আগে বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ‘ফটোহলিক’। নতুন আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে কাজ করা শুরু করেছে তারা। এভাবেই ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে ‘ফটোহলিক’।

ফটোহলিক

অনেকদিন তো হলো, কাজ করতে গিয়ে কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে কি? কোনো খারাপ লাগা কিংবা ভালো লাগার মুহূর্ত? আরিফ বলেন, ‘ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যা অর্জন করা হয় তা হলো অভিজ্ঞতা। অনেক অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে বেশ ভালোলাগার একটি মুহূর্ত হচ্ছে, একবার ‘ফটোহলিক’ বুক করতে একজন বিয়ের কনে তার বিয়ের তারিখই বদলে ফেলেছিল!’

অবশ্য ‘ফটোহলিক’র ফেসবুক পেজেই গেলে ধারণা পাওয়া যায় কেন তাদের প্রতি ক্লায়েন্টদের এত আস্থা। প্রতিটি ছবি যেন ভিন্ন ভিন্ন গল্পের প্রেক্ষাপট। এইতো কিছুদিন আগে গোলাপ গ্রামে ফটোশ্যুট করেছে ‘ফটোহলিক’। সবুজের মাঝে লাল গাউন পরা এক তরুণীর ছবি দেখলে মনে হবে যেন গোলাপ রাজ্যের রাজকন্যা!

একদিন হাজারও তরুণ ফটোগ্রাফির মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে- এমনটাই চান আরিফুল ইসলাম।

‘ফটোহলিক’ এর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক : Photoholic

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড