• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিনীর ‘পেপিলিশ ফ্যাশন’

  নিশীতা মিতু

২৮ নভেম্বর ২০২১, ১০:২৬
পেপিলিশ ফ্যাশন
পেপিলিশ ফ্যাশনের কর্ণধার ইসমত আরা চৌধুরী নন্দিনী

পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিনী। প্রায় ১১ বছর ধরে পোশাকে নতুনত্ব আনা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বিখ্যাত একটি ফ্যাশন হাউজের সঙ্গে কাজ করেছেন কিছুদিন, ফ্রিল্যান্সার ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেও একটি উঠতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সবই হচ্ছিল কিন্তু দিন শেষে নিজের নামটা যেন কোনো শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে পারছিল না। নিজের নাম আর প্রচারের লক্ষ্যে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ‘পেপিলিশ ফ্যাশন’ নামক অনলাইনভিত্তিক পোশাক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এই উদ্যোক্তা নারীকে নিয়ে আমাদের আজকের আড্ডা।

রাজধানীর ফকিরাফুলের টি অ্যান্ড টি কলোনিতে জন্ম ইসমত আরা চৌধুরী নন্দিনীর। কলোনির ছেলে-মেয়েরা একটু ডানপিটে স্বভাবের হয়ে থাকে। তবে অন্যরা যখন বৌচি বা বরফপানি খেলায় ব্যস্ত থাকতো তখন নন্দিনী ছুটতেন ফড়িং এর পেছনে। কখনোবা খোঁজ চলতো সন্ধ্যা মালতী ফুলের। ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নন্দিনী বলেন, মা হস্তশিল্প, সেলাই এসবের জন্য সরাসরি জড়িত থাকার এসব জিনিস শেখার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ কাজ করত। স্কুল ছুটির দিন কাটত মোম শিল্প কিংবা নতুন সেলাই শিখে। সেসঙ্গে প্রচণ্ড বই পোকা ছিলাম আমি। খেলাধুলার চাইতে তাই এসবই বেশি টানত আমাকে।

বর্তমানে ব্যবসা নিয়েই সময় কাটছে নন্দিনীর। অনলাইন ব্যবসায় আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, নিজের একটা শোরুম দেওয়ার ইচ্ছে বেশ পুরোনো। কিন্তু যেহেতু এখন এফ-কমার্স, ই-কমার্স দ্রুত বর্ধনশীল একটি মাধ্যম তাই আগে নিজের ভিত্তি এখানে তৈরি করে নিতে চাচ্ছি। নিজের নাম আর প্রচারের জন্যই অনলাইন ব্যবসায় আসা।

গত দেড় বছর ধরে ব্যবসাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন নন্দিনী। কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাই তার কাছে। নন্দিনী বলেন, আমার মূল পণ্য হলো ডিজাইন করা পোশাক। শাড়ি, বাচ্চাদের পোশাক, থ্রিপিস, গাউন, কস্টিউমসহ প্রায় সব ধরনের পোশাক নিয়েই কম-বেশি কাজ করছি। কাস্টোমাইজ ডিজাইনের পোশাক আমার বিশেষত্ব হলেও জামদানি আমার অন্যতম সিগনেচার পণ্য।

পেপেলিশ ফ্যাশনের কিছু পণ্য

ফিউশনধর্মী কাজ করতে ভালোবাসেন নন্দিনী। মোটিফ সিলেকশন, প্যাটার্ন থেকে শুরু করে সবকিছুতে আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেন। ফলে অন্যদের চেয়ে পেপিলিশ ফ্যাশনের পোশাকের প্রতি ক্রেতা আকৃষ্ট হয় বেশি।

ব্যবসার শুরুতেই করোনার মুখে পড়তে হয়েছিল নন্দিনীকে। ষড়রসের অভাবে প্রায় ৩/৪ মাস বন্ধ রাখতে হয়েছে কাজও। তবে বর্তমানে সব পরিস্থিতি সামলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ব্যবসাক্ষেত্রে ক্রেতার সমন্বয়কে কেমন চোখেন দেখেন? জানতে চাইলে নন্দিনী বলেন, যেহেতু আমি কাস্টোমাইজড কাজ বেশি করি সেক্ষেত্রে ক্রেতার চাহিদা আর নিজের ডিজাইন দুইয়ের মাঝে সমন্বয়টা মাঝে মাঝে একটু চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। ডিজাইনার পন্যের মূল্য বাজারের গড়পড়তা পন্য থেকে একটু বেশি পড়ে সেক্ষেত্রে সেটাও ক্রেতার সঙ্গে সমন্বয় করাটা কঠিন হয়ে পরে মাঝে মাঝে। আবার নিজের ডিজাইন কস্টিং আর ক্রেতার এক্সপেক্টেড মূল্য এই দুইয়ের মাঝে সমন্বয় করাটা একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে। ভালোমানের পণ্যের মূল্য অনেক ক্রেতাই বুঝেন না এটাও সমস্যা।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে মোটা বেতনের চাকরিতে না ঢুকে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার বিষয়টি শুরুতে পরিবারের কেউই সহজভাবে গ্রহণ করেননি। শুনতে হয়েছে কটুক্তি, হজম করতে হয়েছে বিরক্তি। তবে পথ চলা থামাননি নন্দিনী। পুরো যাত্রায় পাশে পেয়েছেন স্বামী আর বোনকে। তাদের উৎসাহই শক্তি জুগিয়েছে পথ চলার। তবে এখন প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। সবাই বুঝতে পেরেছে পছন্দ কাজ করে খুব সফল মানুষ না হলেও সুখী মানুষ হয়েছেন নন্দিনী— এমনটাই মনে করেন তিনি।

চারপাশের লোকের কথা সহ্য করেই আজকের উদ্যোক্তা হয়েছেন নন্দিনী। তিনি বলেন, ১০/১১ বছরের ক্যারিয়ারে বারবার আমাকে জানানো হয়েছে আমি ফেইলর। টাকা নষ্ট, মেধা নষ্টের উদাহরণ হয়েছি আমি। কিন্তু প্রতিটি কটুক্তি, ঠাট্টাকেই আমি শক্তি হিসেবে চেয়েছি। আমি জানি আমার কাছে মনের ভালো লাগাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটা করে আমি শান্তি পাই আর কাজ করার শান্তিটাই আমার বড় শক্তি।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে নন্দিনী বলেন, আপনার পন্য যাই হোক সেটা নিয়ে সম্পূর্ণ পড়াশোনা করে তারপর আসবেন। এখন অনলাইনে প্রচুর তথ্য আছে সেখান থেকেই শিখতে পারবেন। আপনার পন্য নিয়ে প্রচুর ঘাটবেন। কিছু না বুঝে কোনো পণ্য নিয়ে কাজ করবেন না।

পেপিলিশ ফ্যাশনকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন নন্দিনী। ইচ্ছে আছে নিজের একটি পরিপূর্ণ ই-কমার্স সাইট তৈরি করার। যার একটি অ্যাপও থাকবে। একজন মানুষ যেন নিজের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই সেই সাইটে গিয়ে পান। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আলাদা আলাদা কাজ করছেন নন্দিনী। সেসঙ্গে একটি শোরুমেরও স্বপ্ন দেখেই এই উদ্যোক্তা, যার একপাশে থাকবে ছোট একটি লাইব্রেরি। ফ্যাশন অনুরাগী মানুষরা সেখানে বসে কেনাকাটার পাশাপাশি ফ্যাশন সম্পর্কে জানবেন, পড়বেন। বাংলা ভাষায় ফ্যাশন সম্পর্কিত বই বা তথ্য খুবই কম। এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করার স্বপ্ন দেখেন নন্দিনী। তার স্বপ্নগুলো ধরা দিক হাতের নাগালে এমন কামনায় আড্ডা শেষ করলাম।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড