• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মণিপুরীর বুননে আঁখির ‘উমাইমাহ্‌’

  নিশীতা মিতু

২১ নভেম্বর ২০২১, ১৭:১৪
ফারজানা চৌধুরী আঁখি
উমাইমাহ্‌র কর্ণধার ফারজানা চৌধুরী আঁখি

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার দিগজান গ্রাম, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বলা চলে। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন ফারজানা চৌধুরী আঁখি। পড়াশোনার সূত্র ধরে কয়েক বছর নেত্রকোনায় থেকে আবারও ফিরে যান নিজ জেলায়। সেখান থেকেই শেষ করেন উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক। বিয়ের পর সিলেটের মৌলভীবাজারে আছেন আঁখি। দেশের এক কোণায় থাকলে পুরো বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন তিনি। অনলাইন পোশাক ‘উমাইমাহ্’র কর্ণধার এই নারী।

স্নাতক তৃতীয় বর্ষে বিয়ের পিড়িতে বসেন আঁখি। পড়াশোনা শেষ করতে না করতেই পান সন্তানের আগমনী বার্তা। স্বাধীনচেতা এখন মানুষ আঁখি। হঠাৎ নতুন সংসার, ছোট সন্তান সবকিছুর ভিড়ে হারিয়ে ফেলছিলেন নিজের স্বাধীন সত্তাকে। তার ভাষায়, নিজেকে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে ব্যবসা শুরু করি। শাড়ি, পোশাক, রঙ, ডিজাইন— এই বিষয়গুলোতে আগ্রহ থাকায় পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করি। এই জায়গাটা আমার জন্য স্বস্তির মনে হয়েছিল।

একমাত্র কন্যা উমাইমাহ্‌র নামেই আঁখির প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি দুই বছর পার করল আঁখির উমাইমাহ্‌। মণিপুরী তাঁত পণ্য নিয়ে (মণিপুরী শাড়ি, শাল, ওড়না এসব) ব্যবসার শুরু করেছিলেন তিনি। ক্রেতার চাহিদা আর নিজের কাজের পরিধি বাড়ানোর সূত্রে বর্তমানে কাজ করছেন নারীদের পোশাক যেমন বোরকা, খিমার, নিকাব, হিজাব এসব নিয়ে। পাশাপাশি কাস্টমাইজ কুর্তি, শিশুদের পোশাক, পাঞ্জাবি এসব নিয়েও মাঝেমধ্যে কাজ করেন।

মনিপুরী শাড়ি নিয়ে প্রচলিত ধারণা বদলে দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ শুরু করেন আঁখি। তিনি বলেন, আমি সেই প্রথম থেকেই চেষ্টা করছি প্রচলিত পণ্যগুলোকেই একটু ভালোভাবে উপস্থাপন করতে। মণিপুরী শাড়িকে অনেকে মনে করেন পাতলা, কোনো অনুষ্ঠানে পরা যাবে না, দেখতে ভালো না, রঙগুলো হয় ক্যাটক্যাটা এরকম। কিন্তু আমি ভালো বুননে, শাড়ির মাপ ঠিক রেখে, প্রচলিত রং থেকে একটু ভিন্ন রঙের শাড়ি ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর চেষ্টা করি আমি।

নারীদের শালীন পোশাকের ক্ষেত্রেও একই ধারণা পোষণ করেন তিনি। আঁখি বলেন, অনেক মানুষ মনে করে শালীন পোশাক বা পর্দা করা মানেই কালো পোশাক পরে আপাদমস্তক ঢেকে থাকা। আমি এই ধারণা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছি ক্রেতাদের। শালীন পোশাক পরেও নিজেকে আভিজাত্যপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায়। পর্দা ও স্টাইল/ফ্যাশন একই সঙ্গে হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

উমাইমাহ্‌র কিছু পণ্য

কাজের ক্ষেত্রে কার সাহায্য পেয়েছেন বেশি? প্রশ্নের জবাবে আঁখি বলেন, একদম পুঁজি থেকে কাস্টমারের হাতে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত একমাত্র ব্যক্তি যিনি পাশে ছিলেন, সাহায্য করেছেন, ভেঙে পড়লে অভয় দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন, তিনি আমার স্বামী। এই মানুষটা না থাকলে আমার অবস্থান অন্য কোথাও থাকত।

প্রথমদিকে অনেকবার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন আঁখি। নানা মানুষের আচরণে ভেঙে পড়েছেন বহুবার। তবে এখন আর থেমে যেতে ইচ্ছে হয় না। আঁখি বলেন, এখন কাজ করতে করতে কাজটা আমার এতো কাছের হয়ে গেছে যে, আমার আরেকটা সন্তান মনে হয় আমার প্রতিষ্ঠানটাকে। সন্তানকে কি মা ছাড়তে পারে?

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ না থাকলেও আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কাছে মন থেকে চাইলে, পরিশ্রম করে গেলে আল্লাহ কাউকে খালি হাতে ফেরান না। পৃথিবীর নিয়মই ভেঙে পড়া, কিন্তু আল্লাহ সবার মধ্যে একটা শক্তি দিয়ে রাখেন, এই ভাঙন ঠেকাতে। নিজের শক্তি সম্পর্কে জানুন, পরিশ্রম করুন, কারোর মুখাপেক্ষী হবেন না। আপনার যা রিজিক সেটা যেকোনো উপায় আপনার কাছে আসবেই আসবে।

পোশাকের জগতে দেশের প্রথম সারির ব্রান্ডগুলোর পাশে একদিন উমাইমাহ্'র নাম দেখার স্বপ্ন দেখেন আঁখি। ১০ বছরে হলেও যেন উমাইমাহ্'র নিজস্ব একটা শোরুম হয় তাও চান এই উদ্যোক্তা। স্বপ্ন দেখেন অনেক কর্মী, কারিগরদের কর্মসংস্থান হবে উমাইমাহ্‌।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড