• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশি গয়নার আভিজাত্যের ঠিকানা, আজরার ‘স্পার্কলি ক্লোজেট’

  নিশীতা মিতু

০৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৫
স্পার্কলি ক্লোজেট
স্পার্কলি ক্লোজেটের কর্ণধার আজরা নাওয়ার

এক সময় নতুন বউয়ের গয়না বলতে কেবল স্বর্ণের গয়নাকেই বোঝানো হতো। আজকাল সেই ধারণা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে সবাই। এখন নতুন বউয়ের সাজসজ্জায় স্বর্ণের গয়নার পাশাপাশি দেখা যায় গোল্ড প্লেটেড গয়নার উপস্থিতি। কখনো মুক্তা, কখনো মিনাকারী নকশা কখনোবা জয়পুরী ডিজাইন। নিত্যনতুন বাহারি নকশার এসব গয়না দেখে স্বভাবতই মাথায় প্রশ্ন আসে, কারা বানায় এসব গয়না? সব কি দেশের বাইরে থেকেই আসে নাকি আমাদের দেশেও তৈরি হয়?

ভূমিকা ছেড়ে আসি মূল প্রসঙ্গে। বর্তমানে দেশের কারিগররাই তৈরি করছেন আন্তর্জাতিক মানের এসব গয়না। বিয়ের গয়না বলতে স্বর্ণের গয়নার বাইরে যেসব গয়নাকে বুঝি সেসবেরই অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘স্পার্কলি ক্লোজেট’। একজন তরুণীর স্বপ্নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কীভাবে নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়ে বর্তমানে বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন প্রতিষ্ঠানে কাতারে এলেন তিনি তা নিয়েই দৈনিক অধিকারের এ পর্বের আয়োজন।

স্পার্কলি ক্লোজেটের কর্ণধার আজরা নাওয়ার। জন্ম ও পারিবারিক সূত্রে খাঁটি ঢাকার মেয়ে। পূর্ব পুরুষদের আবাসস্থল এখানেই। চাকরি থেকে ব্যবসাই ঢাকাইয়্যাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। আর তাই ছোটবেলা থেকে ব্যবসা করার বিষয়টি আজরার মাথায় ছিল।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে জীবনের প্রথম ইন্টারভিউতেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়ে যায় আজরার। ৬ মাস চাকরি করেনও। এরপর বুঝতে পারেন চাকরি তার জন্য নয়। তাই চাকরি ছেড়ে পুরোদমে শুরু করেন ব্যবসা।

বর্তমানে গয়নার প্রতিষ্ঠান হলেও একসময় স্পার্কলি ক্লোজেটে পাওয়া যেত পোশাকও। ব্যবসায় আসার গল্প বলতে গিয়ে আজরা বলেন, আমার আর আমার বোনের শখ হলো বিভিন্ন পোশাক কাস্টোমাইজ করে পরা। কোনো বিয়ে-শাদীর আয়োজন থাকলে আমরা শাড়ি আর গয়না কাস্টোমাইজ করে বানিয়ে পরতাম। নিজের করা ডিজাইনের পোশাক বা গয়না পরতে খুব ভালো লাগতো। অন্য সবার থেকে আলাদা বলে সবাই প্রশংসা করতো। শাড়ি আর গয়না নিয়ে এই ভালোলাগা বা ভিন্নভাবে কাজ করা থেকেই ব্যবসার শুরু বলা চলে।

২০১৬ সালের শেষের দিকে ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন আজরা। তখন পড়াশোনা শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বান্ধবী মিলে শখের বসেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই ভালো সাড়া মেলে। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আজরা বলেন, ‘আমার পরিবারের অনেকেই ব্যবসায় জড়িত তাই অন্যদের চেয়ে ব্যবসার শুরুটা আমার জন্য সহজ ছিল। প্রয়োজনীয় তথ্য কিংবা সোর্স পেতাম সহজেই। আর পারবারিকভাবেই ব্যবসাক্ষেত্রে জড়িত থাকায় এ কাজে উৎসাহও পেয়েছিলাম একদম শুরু থেকে।

বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে গয়নার প্রতিষ্ঠান স্পার্কলি ক্লোজেট। প্রতিষ্ঠানের প্রধান পণ্য দেশীয় গয়না। পাশাপাশি ভারত আর পাকিস্তানেরও কিছু গয়না পাওয়া যায় এখানে। তামা, দস্তাসহ বিভিন্ন ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় দেশীয় গয়নাগুলো। এর ওপর দেওয়া হয় স্বর্ণ বা রূপার প্রলেপ, যার ফলে বেড়ে যায় গয়নার স্থায়িত্ব। সব ধাপ পেরিয়ে গয়নাগুলো হয়ে ওঠে স্বর্ণের গয়নার মতই আকর্ষণীয়।

স্পার্কলি ক্লোজেটের কিছু গয়না

করোনা ব্যবসায় কতটা প্রভাব ফেলেছে জানতে চাই আজরার কাছে। তিনি বলেন, ‘করোনার প্রথম দিকে অনলাইন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ায়। কারণ তখন সবাই অনলাইনে কেনাকাটার ওপরই বেশি নির্ভরশীল হয়ে যায়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, করোনার প্রথম দিকে লস হলেও পরবর্তীতে তা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তবে হ্যাঁ, যাদের শোরুম আছে তারা অবশ্যই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ব্যবসা ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া আর সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন আজরা। তিনি বলেন, যেহেতু অনলাইন ব্যবসায় ম্যাসেজের মাধ্যমেই অর্ডার গ্রহণ বা তথ্য সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করা হয়, তাই কেনাকাটা করার আগেই ক্রেতাকে নিয়মকানুন সব জানিয়ে দেই। এতে করে পরবর্তীতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে না। ভুল পণ্য ক্রেতার কাছে বলে বলে সেক্ষেত্রে আফটার সার্ভিস রয়েছে। ভালোমানের এবং সঠিক পণ্য দেওয়ার কারণে এত বছরে ক্রেতাদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে। অনেক রিপিট ক্রেতা রয়েছে। আবার অনেকের কাছেই গয়নার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান মানেই স্পার্কলি ক্লোজেট। এটি অনেক বড় পাওয়া।

কিছুটা অভিমানের সুরে আজরা বলেন, কিছু ক্রেতা নিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাও আছে। এর জন্য আমি দায়ী করবো আমাদের বর্তমান মার্কেটের অবস্থাকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে গয়নার বাজার সস্তা আর নিম্নমানের পণ্যে সয়লাব। কমদামী রং, অতিমাত্রায় নিকেলের ব্যবহার, নকল পাথর ব্যবহার, ধাতুর মিশ্রণে তারতম্য, বাজে ফিনিশিং দেওয়া পণ্য বাজারে ভর্তি। বেশিরভাগ মানুষই কমদামী পণ্য কিনতে চায় আর গুণগত মান যাচাই করে না। তাই দামের তুলনা করে বসে।

তিনি আরও বলেন, কমদামী জিনিসের ব্যবহার করা উপাদানও যে কমদামী তা অনেকেই চিন্তা করেন না। আবার অনেকক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভুল হয়ে গেলে তা শোধরানোর সুযোগ দিতে চান না। এমন কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হই প্রতিনিয়ত। হাতে তৈরি গয়না তৈরি করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা অনেকটা মাংস রান্নার মতো। যত সময় নিয়ে সবগুলো ধাপ মানা যাবে, পণ্য তত ভালো মানের হবে।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে আজরা বলেন, আমি এটাই বলবো যে কোনো ব্যবসা সেটা ছোট হোক বা বড় তা শুরু করার আগে অন্তত ৬ মাস মার্কেট বিশ্লেষণ করবেন। পণ্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন। আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে আপনার সম্পূর্ণ ধারণা থাকা, মার্কেটে পণ্যের চাহিদা, মার্কেটিং/খরচ/অন্যান্য বিষয় নিয়ে আগে পড়াশোনা করতে হবে। কাজের প্রতি প্যাশন থাকতে হবে। তাহলে আপনি কাজ করে আনন্দ পাবেন, কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এভাবে সফলতা আসবেই।

স্পার্কলি ক্লোজেটের সূচনা থেকে দেশীয় পণ্যের প্রসার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন আজরা। তিনি বলেন, অনেক লম্বা সময় ধরে আমি অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম যে আমাদের দেশে অনেক ভালো কারিগর আছে যাদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন মিলছে না। ফলে তারা হারিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ভারতীয় গয়নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ কিন্তু আমাদের দেশে এমন অনেক কারিগর আছেন যারা এর চেয়ে বেশি সুন্দর ডিজাইনের নকশা গড়তে জানেন।

আজরা মনে করেন, দেশীয় কারিগরদের সঠিক সুযোগ দিলে গয়নার বাজারের সৌন্দর্য ফিরে আসবে। ভালোমানের গয়না তৈরির মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া কারিগরদের জৌলস আবার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন এই সফল নারী উদ্যোক্তা।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড