নিশীতা মিতু
খাটের ওপর ছড়ানো হরেক রকম শাড়ি। সেগুলোকে ভাঁজ করে সেলফে রাখছেন সচি। সেলফের এক পাশে রয়েছে বাহারি প্রিন্টের কাফতান কুর্তি। হাতে সময় কম, আগামী দিনের অর্ডারগুলোর প্যাকিং শেষ করতে হবে, নতুন কিছু শাড়ির আপডেটও দিতে হবে ফেসবুক পেজে। ব্যস্ততার ফাঁকেই কিছুক্ষণ গল্প হলো উদ্যোক্তা এই নারীর সঙ্গে।
সচির পুরো নাম যারিন রওনক সচি। শাড়ির অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনীর বসন’ এর কর্ণধার তিনি। সচির জন্ম ঢাকাতে। বাবার চাকরির সুবাদে বুয়েট কলোনির ধুলো গায়ে জড়িয়ে বড় হয়েছেন তিনি। বর্তমানে চাকরির পাশাপাশি সামলাচ্ছেন ব্যবসা।
ব্যবসার শুরুর গল্প বলতে গিয়ে সচি বলেন, আমি আগে চাকরিই করতাম। মাস্টার্স শেষ করার জন্য সেটা ছেড়ে দিতে হয়। কারণ অফিস ছিল বেশ দূরে। সেখান থেকে এসে ক্লাস করাটা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন ভাবলাম কী করা যায়। নিজে শাড়ি পরতে ভালোবাসি বলে শাড়ির প্রতি আলাদা ভালোবাসা ছিল। তাই সব ভেবে শাড়ি নিয়েই কাজ করা শুরু করি।
২০১৭ সাল থেকে ব্যবসায়ী হিসেবে সচি যাত্রা শুরু করেন। কুমুদিনীর বসন নামটি দেওয়া ছোট বোন রিচির। কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করেন জানতে চাই তার কাছে। সচি বলেন, প্রথমে শুধু শাড়ি নিয়েই কাজ করতাম এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাফতান কুর্তি নিয়েও কাজ করছি। আগে তাঁতিদের বোনা শাড়ি নিয়ে কাজ করতাম। এখন নিজে ডিজাইন পছন্দ করি, রং ঠিক করি। মানে নিজের মনের মতো করে শাড়ি বানাই। স্ক্রিনপ্রিন্ট কিংবা ব্লকের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি নিজের পছন্দের নকশা। এভাবেই একদম ভিন্ন এক শাড়ির জন্ম হয়। এইতো কিছুদিন আগে দুটো বিশেষ শাড়ি নিয়ে কাজ করেছি। একটির থিম সত্যজিৎ আর একটির থিম রাশি। দুটো শাড়িতেই ক্রেতাদের বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। অন্যান্যরাও প্রশংসা করেছেন।
সাধ্যের মধ্যেই শাড়ির দাম রাখার চেষ্টা করেন সচি। কুমুদিনীর বসনের বেশিরভাগ শাড়িই কিনতে পারবেন যেকেউ। এক্সক্লুসিভ শাড়িও পাওয়া যাবে এখানে। মূল্যের বিষয়ে সচি বলেন, আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম হাত খরচের টাকা থেকে বড় শোরুমগুলোতে গিয়ে সবসময় মনমতো পছন্দের শাড়ি কিনতে পারতাম না। সেটা মাথায় রেখেই কিন্তু আমার কাজ শুরু যাতে স্টুডেন্টরাও সাধ্যমতো দামে ভালো মানের পণ্য পায়। এমনকি তাদের জন্য আমি ইন্সটলমেন্টের ব্যাবস্থাও রেখেছি।
ব্যবসাক্ষেত্রে কাউকে যদি কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় তবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার কথা বলবেন? জানতে চাই সচির কাছে। হেসে সচি উত্তর দেন, অবশ্যই আমার স্বামী। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বাকিরাও সাপোর্ট করছে তবে প্রথম থেকে যে মানুষটা আমার পাশে আছেন তিনি হলেন আমার স্বামী।
মাঝেমধ্যে মন খারাপ হয়, কাজ বন্ধ করে দিতে মন চায়। তখন সচি ভাবেন তার এই উদ্যোগের সঙ্গে আরও কিছু মানুষের রুজিরুটি জড়িত। এই ভাবনাই তাকে কাজ ছাড়তে দেয় না বরং দিগুণ শক্তিতে কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে সচি বলেন, আমার পরামর্শ আগে নিজেকে বুঝতে হবে আপনি কোন পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারবেন, কোন পণ্য বা কোন কাজে আপনি পারদর্শী। ধরুন কেউ আঁকাআঁকিতে ভালো, তার উচিত এটি নিয়ে আগানো। হোক তা কাপড়ে কিংবা ক্যানভাসে। কারণ সে এটার নাড়ি নক্ষত্র জানে। সুতরাং ক্রেতাদের এ বিষয়ে বুঝাতেও সে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবে। আর কাজ নিয়ে খুব সৎ হতে হবে। আসলে ব্যবসা না, আমার মতে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই সৎ হওয়াটা জরুরি।
কুমুদিনীর বসন নিয়ে রোজ রোজ নতুন স্বপ্ন দেখেন সচি। এর মধ্যে সবচে বড় স্বপ্ন হলো নিজের একার একটা দোকান হবে, যেখানে শাড়ি কাপড় দেখতে এসে কেউ একটু চা খেতে খেতেও শাড়ি দেখে যেতে পারবেন। হয়ত দুই বান্ধবী শাড়ি দেখতে এসেছেন, দেখতে এসে যাতে একটু আড্ডাও দিতে পারেন। সবমিলিয়ে আড্ডা গল্পে মেতে উঠে নারীরা শাড়ি কিনবেন এমনটাই চান তিনি। আরেকটি স্বপ্ন দেখেন, সব বাঙালি নারীর সংগ্রহে অন্তত একটি হলেও কুমুদিনীর বসনের শাড়ি থাকবে।
সচির সব স্বপ্ন সত্য হোক খুব তাড়াতাড়ি। এই উদ্যোক্তা নারী সফলতার চূড়ায় উঠুক সততা, চেষ্টা আর সৃজনশীলতাকে সঙ্গী করে।
কুমুদিনীর বসনের ফেসবুক পেজের লিঙ্ক- কুমুদিনীর বসন -Kumudinir Boson
কুমুদিনীর বসনের ফেসবুক গ্রুপের লিঙ্ক- Kumudinir boson (কুমুদিনীর বসন)
ওডি/নিমি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড