• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বপ্নবাজ তরুণের স্বপ্নের ‘র‍্যাপিডো’

  নিশীতা মিতু

১২ অক্টোবর ২০২১, ১৪:০৮
র‍্যাপিডো
র‍্যাপিডোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামদানি তাব্রিজ (ফাইল ছবি)

স্বপ্ন দেখেন অনেকেই, তবে সেই স্বপ্নকে বাস্তবতায় পরিণত করেন অল্প কজন। যারা তা করেন তাদের আমরা দেখি সফল ব্যক্তি হিসেবে। এমনই এক স্বপ্নবাজ তরুণ সামদানি তাব্রিজ। পণ্য পরিবহণকারী প্রতিষ্ঠান ‘র‍্যাপিডো’র কর্ণধার তিনি। দৈনিক অধিকারের সঙ্গে আড্ডায় জানালেন তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা কথা।

সময় তখন ২০১৬। বাংলাদেশ সবেমাত্র ই-কমার্সের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। পুরো দেশের ই-কর্মাসকে ঘিরে তখন কেবল একটি কুরিয়ার কোম্পানি ছিল। একদিন অনলাইনে একটি পণ্য অর্ডার করেন তাব্রিজ। সেই পণ্য হাতে এসে পৌঁছায় ৫ দিন পর। ঢাকার মতো ছোট একটা শহরে পণ্য সরবরাহ করতে পাঁচ দিন লাগার বিষয়টি অবাক করল তাকে। ভাবলেন কিছু একটা করবেন।

ব্যস, এই ভাবনা থেকেই র‍্যাপিডোর জন্ম। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু তাব্রিজ ও তামজীদ শুরু করলেন পণ্য ডেলিভারি করা। ঢাকাকে দুই ভাগ করে এক বন্ধু দায়িত্ব নিলেন যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরার অংশের, আরেকজন দায়িত্ব নিলেন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশান এলাকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুরু করলেন পণ্য ডেলিভারি দেওয়া। প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন ‘র‍্যাপিডো ডেলিভারি’। প্রথম কদিন একটু কষ্টে কাটলেও ধীরে ধীরে সাড়া পেতে লাগলেন তারা। এভাবেই যাত্রা শুরু হলো র‍্যাপিডোর।

শুরুর দিকের কথা জানতে চাইলে তাব্রিজ বলেন, মাত্র ২ জন বন্ধু মিলে শুরু করা র‍্যাপিডো প্রথম ২ মাস নিজেরাই পরিচালনা করি। তারপর কোম্পানি যত বড় হতে থাকে, তত জনবল বৃদ্ধি করতে থাকি। প্রথম দিকে বেশ বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজকে আমাদের টিকে থাকা। সবচেয়ে বড় বাধা ছিল যখন বেশ কিছু ডেলিভারি ম্যান টাকা চুরি করে পালিয়ে গেল। মনোবল ভেঙে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আমাদের নিজেদের মার্চেন্টদের থেকেই এগিয়ে যাওয়ার সাহসটা পেলাম, যা আমাদের ফিরে দাড়াতে সাহায্য করেছে।

চার বছর পরের প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। বর্তমানে মার্কেটে একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে র‍্যাপিডোর। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় ৩৫০০ উদ্যোক্তা। ২০১৭ সালে বেসিস আইসিটি জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেছেন তারা।

তাব্রিজ বলেন, আমাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে আমাদের টিম ও টেকনোলজির ব্যাবহার। খুব সহজেই ক্লায়েন্টরা আমাদের মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে-স্টোর থেকে নামিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন। তারা বাংলাদেশের সব জেলাতে পণ্য হোম ডেলিভারির পাশাপাশি আমাদের থেকে পাচ্ছেন প্যাকেজিং, কাস্টোমার কেয়ার, প্রোডাক্ট স্টোরেজের মতো সুব্যবস্থা।

এই বছর এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ একই দিনে খুব দ্রুত পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সার্ভিস নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা পৌঁছে দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য।

সম্প্রতি ১ লাখ ডলারের একটি ইনভেস্টমেন্ট তুলেছে র‍্যাপিডো। ২০১৭ সালের সরকার থেকে পাওয়া এ টু আই ইনোভেসন, গ্রান্ট থেকে পাওয়া অনুদান এবং ব্রাক ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া ইন্টারেস্টবিহীন লোনের পর, এই প্রথম বাইরে থেকে টাকা নিয়েছেন তারা। ইনভেস্টমেন্ট নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য কোম্পানিকে ঢাকার বাইরে আরও শক্তিশালী করা ও টেকনোলোজির বিকাশ করা। শিগগিরিই গ্রোসারি ডেলিভারি ও এক্সপ্রেস ডেলিভারির মতো নতুন মার্কেটে প্রবেশের ইচ্ছা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

তাব্রিজ বলেন, আমাদের ব্যবসার একমাত্র মন্ত্র হল 'কোয়ালিটি ওভার কোয়ান্টিটি'। অর্থাৎ সার্ভিস কতজনকে দিচ্ছি তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সার্ভিসের মান বজায় রাখা। আমাদের কুরিয়ার মার্কেটে অনেক কোম্পানি রয়েছে, সবাই নিজেদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছেন এই কুরিয়ারের অবকাঠামোকে আরও শক্ত করার।

এতো প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের টিকে থাকার কারণ হচ্ছে আমাদের সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ড ও টিমের নিজের কাজটুকু ভালো মতো করার আত্মবিশ্বাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের র‍্যাপিডোর টিম কাস্টোমারদের সব প্রশ্ন অথবা অভিযোগ শুনে তাদের দ্রুত উত্তর দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। অনেক কোম্পানি এই কল সেন্টারের জায়গাতে অটো রিপ্লাই দিয়ে থাকেন। এটা বুঝা উচিত যে কাস্টোমার বিপদে পড়েই কল করেছেন, তাই সেখানে যত দ্রুত সমাধান দেওয়া যায় ততই ভালো। তাই আমরা ৩ শিফটে ভাগ করে আমাদের কল সেন্টারটি পরিচালনা করে থাকি যেন দ্রুত আমাদের কাস্টোমারদের সমাধান দিতে পারি। আমাদের সঙ্গে থাকা অনেক কাস্টোমার র‍্যাপিডোকে তাদের নিজের ভেবে থাকে এই কারণেই।

নতুন করে যারা এই প্ল্যাটফর্মে আসতে চান তাদের উদ্দেশ্যে তাব্রিজ বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আলোর গতিতে, সেই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। কুরিয়ার সেবায় এখন অনেক জায়গা রয়েছে কাজ করার, যা আমাদের সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন সঠিক পদ্ধতিতে তা পরিচালনা করা হয়, যেমন সঠিক কুরিয়ারের লাইসেন্স নেওয়া, গ্রাহকদের টাকা দায়িত্ব নিয়ে সময়মত বুঝিয়ে দেওয়া ও নিষ্ঠার সাথে ব্যাবসা পরিচালনা করা। এখানে প্রচুর জায়গা আছে নতুন কোম্পানিদের ভালো করার।

র‍্যাপিডোকে একটি পূর্ণাঙ্গ টেকনোলোজি ভিত্তিক কুরিয়ারে রূপান্তর করার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে তাব্রিজের। ভবিষ্যতে নিজেদের ড্রোনের মাধ্যমে অতি দ্রুত হোম ডেলিভার‍ি দেখার স্বপ্ন দেখেন তারা। তাছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের জন্য কর্মস্থান তৈরি করতে চায় এই প্রতিষ্ঠানটি।

র‍্যাপিডোর ওয়েবসাইট লিঙ্ক- www.rapido.com.bd/

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড