• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিথির ‘আরশি’তে দেশীয় শাড়ি

  নিশীতা মিতু

০৮ অক্টোবর ২০২১, ১০:০৮
আরশি
‘আরশি’র কর্ণধার কাজী মাসুদা আক্তার তিথি

চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে তিথি। কথা বলেন খুব কম। প্রিয় পোশাকের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে শাড়ি। আর এই পোশাকটি নিয়েই কাজ তার। দেশীয় শাড়ির অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘আরশি’র কর্ণধার কাজী মাসুদা আক্তার তিথি। শাড়ি গোছাতে গোছাতেই কিছু সময় দিলেন দৈনিক অধিকারকে। কথা বললেন নিজেকে নিয়ে, নিজের প্রতিষ্ঠান আর স্বপ্ন নিয়ে।

তিথির জন্ম ঢাকাতে। ঢাকার ধুলোবালি গায়ে মেখেই বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকে অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়ায় ছেলেবেলা কেটেছে নিজের ঘরের মধ্যেই। বড় পরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদে ভাই-বোনদের সাথেই সময় কেটেছে বেশি।

বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিথি। শাড়ির প্রতি তীব্র ঝোঁক থেকেই অনলাইন ব্যবসাতে আসা। ২০১৭ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু হয় আরশির। শাড়ির প্রতিষ্ঠান কিন্তু আরশি শব্দের অর্থ আয়না। শাড়ির সঙ্গে আয়নার সম্পর্ক কী?

মৃদু হেসে তিথি বলেন, শাড়িতে যেকোনো মেয়েকেই অন্যরকম সুন্দর লাগে। এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শাড়ি পরে আয়নায় নিজেকে দেখে না। শাড়ি পরিহিতা নারীর আয়নায় দেখা নিজের সৌন্দর্যের এই মুহূর্তকে বোঝাতেই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছি ‘আরশি’।

আরশিতে কী কী শাড়ি পাওয়া যায়? জানতে চাইলে তিথি বলেন, বাংলাদেশের হাতে বোনা সুতির শাড়ি আরশির মূল পণ্য। মানিকগঞ্জের হাফ সিল্ক শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন কাজ করা হচ্ছে হাতে বোনা সুতির শাড়ি নিয়ে। শুরুর দিকে শুধু হাফ সিল্ক নিয়েই কাজ করা হতো। কিন্তু এখন হাতে বোনা সুতি শাড়ি, ন্যাচারাল ডাই শাড়ি, কাঁথা সেলাইয়ের শাড়ি, ডবি পাড়ে শাড়ি, কোড়া শাড়ি, পাটের শাড়ি, ব্লকের শাড়ি, স্কিনপ্রিন্টের শাড়ি, বুটি শাড়ি, জে এন্ড ডি শাড়ি, এন্ডি শাড়িসহ আরও অনেক রকমের শাড়ি নিয়ে কাজ করা হয়।

আরশির শাড়িতে ক্রেতারা

দেশীয় শাড়িরও যে এত রকমফের হয় তা তিথির সঙ্গে আড্ডা না দিলে জানা হতো না। সামনে থাকা ডবি পাড়ের একটি শাড়ি দেখালেন তিনি। নেভিব্লু শাড়িতে লাল আর কমলা রঙের চিকন পাড়। মিহি সুতার কাজ আর ধরতে নরম এ শাড়ির বিশেষত্ব। আবার কোটা কাপড়ে ন্যাচারাল ডাই শাড়ির পুরোটা জুড়ে বাটিকের নজরকাড়া নকশা।

শাড়ি রেখে আবার ফিরলাম আড্ডায়। তিথি জানালেন, ক্রেতার স্বাচ্ছন্দ্যই তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, আমি যেমন শাড়ি পরার ক্ষেত্রে আরাম বা স্বাচ্ছন্দ্যকে বেশি গুরুত্ব দেই, একইভাবে চাই আমার ক্রেতারাও যেন আমার ব্যবসার শাড়ি পরে আরাম পান। যে কারণে আমি হাতে বোনা নরম শাড়ির প্রতি গুরুত্ব বেশি দেই। প্রচণ্ড গরমেও ক্রেতা যেন শাড়ি পরতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ না করেন, সেই চিন্তা করেই আমি শাড়ি আনি।

করোনার জন্য কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় তিথিকে। শাড়ি স্টক করতে বেশ সময় তো লেগেছেই সে সঙ্গে শাড়ি তৈরিতেও আগের তুলনায় বেশি সময় লেগেছে। এমনও হয়েছে যে, কোনো একটি বিশেষ উপলক্ষে শাড়ি বানাতে দিয়েছেন কিন্তু কাঁচামাল সময়মতো হাতে না পাওয়ায় সেই উপলক্ষ পার হয়ে যাওয়ার পরও শাড়ি তৈরি হয়নি।

ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে সমন্বয়কে কেমন চোখে দেখেন? জানতে চাই তিথির কাছে। তিথি বলেন, যেকোনো ব্যবসাতেই ভালো-মন্দ ক্রেতা থাকবেই। কিছু ক্রেতা একদম শুরু থেকে এখনো আরশির সাথে আছেন। নতুন ক্রেতাও হয়েছে অনেক। ক্রেতাদের কাছে একটা ভরসার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। তবে মাঝেমধ্যে প্রি-অর্ডারে শাড়ি অর্ডার করে শাড়ি আসার পর ক্যান্সেল করে দেওয়া, শাড়ি ডেলিভারির পর বিভিন্ন অজুহাতে প্রোডাক্ট রিটার্ন করে দেওয়া– এগুলো হয়েছে।

সবমিলিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা বেশি। এই যেমন, আমার একজন ক্রেতা আছেন মুম্বাইয়ের। যে প্রতি মাসেই শাড়ি বুকিং দিবে। যদিও ওই দিদি শাড়ি হাতে পান বছরখানেক পর। আর শাড়ি পেতেও তার অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। পেমেন্ট ইস্যু, শিপিং ইস্যু আরও কত কী। তবুও তিনি আরশির শাড়ির জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন। সবচেয়ে যেটা ভালো লাগে সেটা হলো দিদি প্রতি পূজায় আরশির শাড়ি পরেন। আর দিদি সবসময় বলেন, ভারতের শাড়ির চেয়ে বাংলাদেশের হাতে বোনা সুতির শাড়িগুলো তার অনেক পছন্দ। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিবারের পূর্ণ সহায়তা পেয়েছেন তিথি। করোনাকালীন সময়ে কখনো কখনো থেমে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু পরিবারের উৎসাহে আবার নতুন করে কাজ করার শক্তি পেয়েছেন।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিথি বলেন, কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়া অনেকেই শখের বশে ব্যবসা শুরু করছেন। কোনো কাজ করার আগে অবশ্যই সেই কাজ নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করা লাগে, আর যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য অনেক বেশি দরকার। আশেপাশের মানুষ যা নিয়ে কাজ করে, সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে নিজে যেটা নিয়ে কাজ করতে আনন্দ পান, সেই কাজটাই করা উচিত।

আরশিকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিথি। সে সঙ্গে চান ছোট, ছিমছাম একটা ষ্টুডিও হোক। খুব জলদি তার এ স্বপ্ন পূরণ হোক সেই কামনায় আড্ডার ইতি টানলাম।

আরশির ফেসবুক পেজ লিঙ্ক- Aarshi - আরশি

আরশির ফেসবুক গ্রুপ লিঙ্ক- Aarshi - আরশি

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড