• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাতার গায়ে তুলিতে গল্প লেখা ‘ফারিহা’

  নিশীতা মিতু

৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৫৬
ফারিহা
নিজের শিল্পকর্মের সঙ্গে ফারিহা

সবার কাছে যা ফেলনা বস্তু ফারিহার কাছে তা দারুণ কিছু। হোক সেটা চটের বস্তা, আচারের বয়াম কিংবা ফিউজড বাল্ব। নিজের মনের মতো রং এই জিনিসগুলোর গায়ে বুলিয়েই তৈরি করেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। বলছিলাম ইংরেজি সাহিত্যে পড়ুয়া মারগুবা তাবাসসুম ফারিহার কথা।

বাস্তবতা আর মন সবসময় এক সুতোয় গাঁথা থাকে না। এই যেমন ফারিহার বাস্তবতা ঘিরে রয়েছে ইংরেজি সাহিত্যের মোটা মোটা বই আর ভারী ভারী মানুষদের কথা। কিন্তু মনজুড়ে রয়েছে নানা রঙের খেলা। রং, তুলি আর প্রকৃতি সেখানে বাস করে হেসে খেলে।

ফারিহার দেখার চোখ আর ভাবনার চোখ খুব সম্ভবত অন্যদের থেকে ভিন্ন। এই যেমন গাছের পাতা। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে তা কেবলই পাতা। কিন্তু ফারিহার দৃষ্টিতে তা জীবন্ত ক্যানভাস। হোক ক্ষণিকের, হোক তা অল্প সময়ের জন্য। নিজের মনের মতো আঁকতে গেলে তো এত কিছু ভাবতে নেই।

ফারিহা

পাতা ও ফিউজড বাল্বে আঁকা ফারিহার শিল্পকর্ম

ফারিহা তাই গাছের পাতায় এঁকেছেন নিজের ইচ্ছেমতো। কখনো এঁকেছেন নকশা, কখনোবা ফুটিয়ে তুলেছেন কোনো নারীর অবয়ব। ছবি আঁকার শুরু নিয়ে ফারিহা বলেন, ছোটবেলায় মা যখন পেন্সিল ঘুরিয়ে আঁকা শেখাত, তখন থেকেই আমার আঁকাআঁকির শুরু। তবে এই পথটা সহজে পাড়ি দেওয়া হয়নি। অনেকবার অনেক কারণে থামিয়ে দিয়েছি ছবি আঁকা। কখনো পড়ালেখার জন্য, কখনোবা ব্যক্তিগত কারণে।

রং খুব পছন্দের ফারিহার। ছোটবেলায় অবশ্য রং আর তুলি দিয়ে কখনো আঁকা হয়নি। তখন চর্চা করেছিলেন রং পেন্সিল দিয়ে। মায়ের দেওয়া আইডিয়ায় ছবি এঁকে অংশ নিয়েছেন নানা প্রতিযোগিতায়, জিতেছেন পুরস্কারও। কবি আল মাহমুদ, মিলি রহমান, ভাস্কর রাসাসহ অনেকের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন ফারিহা।

সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর আস্তে আস্তে সব ছেড়ে দেন। ইচ্ছে ছিল চারুকলায় পড়বেন। কিন্তু মা বাবা না চাওয়ায় সেই পথেও আগানো হয়নি আর। একসময় পড়াশোনা আর পারিবারিক বাধায় আঁকাআঁকি বন্ধই করে দেন তিনি।

শিল্পী কি চাইলেই মনকে বোঝাতে পারেন? নিজেকে দূরে রাখতে পারেন সবকিছু থেকে? না পারেন না। ফারিহাও নিজেকে দূরে রাখতে পারেননি। ২০১৯ সালের শেষে এসে রং আর তুলি কিনে আবার নতুন করে শুরু করেন আঁকাআঁকি।

ফারিহা

ফারিহার কিছু শিল্পকর্ম

বাসার দেয়াল, জানালার কাঁচ, ফিউজড বাল্ব, সসের বোতল, সাফির বোতল, গাছের কাঁচা পাতা, ক্যানভাস, নিজের টি শার্ট, চট, পর্দা, কাঠের ফেলে দেওয়া টুকরা সবকিছুই হয়ে ওঠে ফারিহার ক্যানভাস।

ফারিহা বলেন, ‘জীবন হঠাৎ করেই বদলে যায়, চমকে দেয় আমাদের। আমাকেও এভাবে চমকে দিয়েছে আঁকাআঁকিতে পা দেওয়ার পর।’

ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই ফারিহার। বর্তমান নিয়ে বাঁচতে ভালোবাসেন তিনি। তবে আঁকাআঁকি কখনো ছাড়তে চান না। রং আর তুলির ঘ্রাণে শান্তি খুঁজে পান তিনি।

এখনো নেশা আর শখের গণ্ডিতেই রয়েছে ফারিহার আঁকাআঁকি। তবে নিজেকে কখনো যোগ্য মনে হলে এই কাজটিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করার কথা ভাববেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফারিহা বলেন, ‘আমাদের দেশে শিল্প ও শিল্পী দুইয়ের কদরই খুব কম মানুষ করে। আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসি। যতটা আগাব, সবার ভালোবাসা আর দোয়া নিয়ে আগাতে চাই। খুব মহৎ বা বড় কিছু হতে চাই না। চাই শুধু ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া আর অগাধ ভালোবাসা ও সন্মান নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে।’

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড