নিশীতা মিতু
নারীদের জীবন যেন ছকে বাঁধা। জন্মের পর পড়াশোনা, বড় হলে বিয়ে আর তারপর সংসার সামলানো। কেউ কেউ এই ছক থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মতো সাজান জীবন। বেলাশেষে করতালিতে তাদের গ্রহণ করে নেন সবাই।
একজন নারী মনিকা আহমেদ। পরিচয় যার হতে পারত সাধারণ গৃহিণী। তিনি এখন সামলাচ্ছেন ব্যবসা। সঙ্গে ঠিকই সামলে নিচ্ছেন সংসারও। অনলাইনভিত্তিক নারী পোশাকের প্রতিষ্ঠান ‘কন্যাসুন্দরীর' কর্ণধার মনিকাকে নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
মনিকা তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সে সময় থেকেই হাতের কাজ, ব্লক, বাটিকের প্রতি নিজের আগ্রহ খুঁজে পান। তখনই ভাবতেন বড় হয়ে বুটিকের কাজ করবেন। পড়াশোনাও করেছেন স্বপ্নকে ছুঁতে সহজ হবে এমন বিষয়ে। হোম ইকোনোমিকস কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন গৃহ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে।
পড়াশোনা চলাকালীন ২০০৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মনিকা। অনার্স শেষ করার পর ২০১০ সালে কন্যা সন্তানের জননী হন। মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে ২০১২ সালে জন্ম দেন ছেলের। দুই সন্তানকে লালনপালন করার কাজে ব্যস্ত থাকায় বাইরে গিয়ে আর চাকরি করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু কেন জানি মনকে শান্ত করতে পারতেন না মনিকা। নিজেকে কিছু একটা করতে হবে— এমন ভাবনা সবসময় তাড়িয়ে নিচ্ছিল তাকে।
বাচ্চারা যখন কিছুটা বড় হলো তখন নিজের জন্য একটু সময় খুঁজে পেলেন তিনি। অবসর সময়ে ফেসবুক ব্রাউজ করে সময় কাটত। তখন দেখতেন, অনেক মেয়েই অনলাইন ব্যবসা করছে। ঠিক এমন কিছুই যেন চাচ্ছিলেন মনিকা। এমন কিছু করতে চাচ্ছিলেন যাতে কাজও হয় আবার সন্তানদের পালনে কোনো সমস্যাও সৃষ্টি না হয়। আর অনলাইন ব্যবসা ছাড়া এমনটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
কন্যাসুন্দরীর কিছু শাড়ি
সব ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল অনলাইন ব্যবসায়ীদের খাতায় নাম লেখান মনিকা। থ্রি পিস বিক্রির মাধ্যমেই ব্যবসা শুরু করেন। সাড়াও মেলে দারুণ। ক্রেতারা পণ্য দেখে কিনতে চাইত। তাই ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর ডিওএইচএসে একটি শপিং মলে দোকান ভাড়া নেন।
কিন্তু মার্কেট রানিং না হওয়ায় ৫ মাস পর দোকানটি ছেড়ে দেন তারা। দোকানজনিত কারণে প্রায় ৭/৮ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন মনিকা। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন ব্যবসাই ছেড়ে দেবেন। আবার মনে হচ্ছিল, এত ভালোবাসার জায়গা কী করে ছেড়ে দেবেন। দুই মিলে ভীষণ দোটানায় পড়েন তিনি।
যেখানে একটি বিষয়ের ইতি ঘটে, সেখান থেকেই অন্য কিছুর সূচনা হয়। মনিকার বেলাতেও তাই হলো। কয়েকদিন সময় নিয়ে ঠিক করেন নতুন করে সব সাজাবেন। এবার আর থ্রি পিস নয়, শাড়ি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা জাগে মনিকার। এরপর চলতি বছরের শুরুতে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইনভিত্তিক এই শাড়ির প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘কন্যাসুন্দরী’।
নামটা শোনার পথ থেকেই কৌতূহল ছিল। কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের নাম। জানতে চাইলাম নামকরণের গল্প। মনিকা বললেন, ‘আমার শাড়িগুলোর ডিজাইন সম্পূর্ণ আমি নিজে করি। তাই চাচ্ছিলাম কাজের সঙ্গে মিলিয়ে নামটাও যেন সুন্দর হয়। প্রতিটি মেয়েই তার মা-বাবার কন্যা। এই কন্যারা যখন দেশীয় শাড়ি পরেন তখন প্রত্যেককেই অসম্ভব সুন্দরী লাগে। এই ভাবনা থেকেই প্রতিষ্ঠানের নাম কন্যাসুন্দরী রাখা।’
মূলত দেশীয় শাড়ি নিয়ে কাজ করেন মনিকা। কন্যাসুন্দরীতে রয়েছে হ্যান্ডলুমের শাড়ির ওপর ব্লক আর বাটিকের কাজ। সে সঙ্গে রয়েছে হ্যান্ডলুমের থ্রি পিসও। সম্প্রতি হ্যান্ডলুমের হিজাবও এনেছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরও নতুন পণ্য যোগ করার ইচ্ছা রয়েছে।
কন্যাসুন্দরীর কিছু শাড়ি
নিজের কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছেন যার কাছ থেকে তিনি হলেন মনিকার স্বামী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর সাপোর্ট আর সাহায্য ছাড়া আমি কখনোই ব্যবসা দাঁড় করাতে পারতাম না।’
ক্রেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞ মনিকা। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ডিজাইন করা শাড়ি পেয়ে কাস্টমার যখন খুব খুশি হয় এবং শাড়ি পরে ছবি দেয় কিংবা পেইজে রিভিউ দেয় তখন আমার খুবই ভালো লাগে। আমি নিজে খুব একটা শাড়ি পরি না, কিন্তু অন্য কেউ যখন শাড়ি পরে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। শাড়িতে নারীকে দেখতে খুব ভালো লাগে।’
কন্যাসুন্দরী নিজ পণ্যের গুণে অনেক দূর যাবে তাই চান মনিকা। দেশীয় পণ্যের বাজারে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে চান তিনি। নিজের স্বপ্নকে মেলে ধরা এই নারী উদ্যোক্তার জন্য ‘দৈনিক অধিকার’ এর পক্ষ থেকে রইল শুভকামনা।
কন্যাসুন্দরীর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক- KonnyaSundori :: কন্যাসুন্দরী
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড