• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এটিএম কার্ড জালিয়াতি : কতটা সচেতন আপনি?

  লাইফস্টাইল ডেস্ক

১১ জুন ২০১৯, ২২:৪১
এটিএম বুথ
নতুন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াত চক্র। (ছবি : সংগৃহীত)

গত সপ্তাহেই ছয় জন ইউক্রেনের নাগরিক গ্রেফতার হয়েছে এটিএম বুথে জালিয়াতি করে ১৬ লাখ টাকা বের করে নেওয়ার কারণে। ঈদের দীর্ঘ সময়ের ছুটিটাকে টার্গেট করে এই বুথ গুলোতে অভিযান চালিয়েছিল এই চক্রটি। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ঈদের সময়ে গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই সময়ে বুথে টাকা রাখার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ব্যাংকগুলো। এই সুযোগে এই চক্রটি হাতিয়ে নেয় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই ঘটনার পর অনেক স্থানেই এটিএম বুথ এর সেবা বন্ধ রাখে কয়েকটি ব্যাংক।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন জানান, ‘জালিয়াত চক্রের সদস্যরা এমন এক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা তুলে নিচ্ছিলো যে প্রযুক্তি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। ব্যাংক একাউন্ট থেকে কোন টাকা যায় নি কিন্তু বুথ থেকে টাকা বের হয়ে যাচ্ছিল।‘

এমন একটি প্রযুক্তি হ্যাকাররা ব্যবহার করেছিল একটি কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়ে গেছে কোন অ্যাকাউন্টের সাথে যোগ না রেখেই। প্রযুক্তি বিশারদরা এটিকে সরাসরি মানি ডিসপেন্সার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই ঘটনার পরই ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম বুথের প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করেছে।

এটিএম কার্ড

দিনে দিনে বাড়ছে এটিএম কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা। (ছবি : সংগৃহীত)

এটিএম বুথ বাংলাদেশে প্রথম আসে ১৯৯২ সালে। অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম বুথের ব্যবহার অবশ্য বেড়েছিল ২০০০ সালের পরে। বর্তমানে বাংলাদেশে দশ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে। যার অধিকাংশই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। এটিএম বুথ থেকে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা যায়। মোবাইল দিয়েও টাকা তোলার প্রযুক্তি চালু হয়েছে কয়েক বছর হলো।

কিন্তু একটি এটিএম বুথ কিভাবে হ্যাক হয়ে যেতে পারে? কিংবা একজন ব্যবহারকারী কি করে বুঝবেন যে তার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে?

জ্যাকপট ম্যালওয়ার :

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে , বেশ কিছু উপায়ে একটি এটিএম বুথ হ্যাকিং এর শিকার হতে পারে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি ঘটে থাকে তা হলো, জ্যাকপট ম্যালওয়ার দিয়ে হ্যাক করা। এটি একটি হ্যাকিং এর মাধ্যমে চুরির নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতরা টাক তুলে নেয়। একটি নির্দিষ্ট কার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট এটিএম বুথকে ব্যাংকের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। তারপর সেই এটিএম থেকে অগণিত পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়ে ভেগে যায় হ্যাকাররা।

কার্ড স্কিমিং :

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মূলত এটিএমের ক্যাশ মেশিনের সাথে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়ে কার্ডের পিন এবং পাসওয়ার্ড জেনে নেয় হ্যাকাররা। এর জন্য এটিএম মেশিনের সাথে ছোট্ট একটি যন্ত্র বসানো থাকে। যাতে কার্ডের সব ধরণের তথ্য কপি হয়ে যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশ কিছু অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল বেশ কিছু চক্র। এরপরই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালে গ্রাহকের কার্ডে সুরক্ষা দিতে প্রতিটি বুথে এন্টি স্কিমিং এবং পিন শিল্ড ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এটিএম কার্ড

এটিএম বুথেও বসানো থাকতে পারে স্কিমিং মেশিন। (ছবি : সংগৃহীত)

কার্ড ক্লোনিং :

কার্ড ক্লোনিং করে জালিয়াতির শুরুটা অনেক পুরনো। এই পদ্ধতিতে কোন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সব রকম তথ্য চুরি করে নেওয়া সম্ভব। এর দ্বারা হ্যাক করা অ্যাকাউন্টের সব নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারের কাছে। মূলত শপিং মল বা যেসব জায়গায় কার্ডের মাধ্যমে বিল দেওয়া হয় সেখান থেকে এটি হ্যাক হতে পারে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, যে মেশিনে কার্ড সুইপ করে বিল দেওয়া হয়, সেখানে কার্ড রিডার থাকতেও পারে। এসব কার্ড রিডার নানান আকারের হতে পারে। এমনকি পাতলা এক প্রস্ত পলিথিনের মতোও হতে পারে। যার মাধ্যমে ঐ কার্ডের তথ্য কপি করে নেওয়া সম্ভব মুহূর্তেই। আর এই কপি করা তথ্য দিয়ে হুবহু আরেকটি কার্ড বানিয়ে ফেলা কোন ঘটনাই না হ্যাকারদের কাছে। তাই গ্রাহকদের উচিৎ কার্ডের মাধ্যমে বিল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখা বিল মেশিন স্বাভাবিক কীনা।

এটিএম কার্ড

জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যাংকের পাশাপাশি গ্রাহককেও সচেতন হতে হবে। (ছবি : সংগৃহীত)

কতটা সচেত আপনি :

বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে ডেভিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দশ লাখের বেশি। এত বিপুল গ্রাহকের সাথে সাথে এটিএম বুথে জালিয়াতির পরিমাণও বাড়ছে। যার প্রমাণ গত সপ্তাহের ঘটনাটি।

অনেকেই কেনাকাটা, বেতন সহ নানান কাজে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। নাজিয়া পারভীন শখের বশত মডেলিং করেন। তিনি তার সাংসারিক কেনাকাটা থেকে শুরু করে সন্তানের স্কুলের বেতন সহ যাবতীয় কিছু সারেন কার্ডের মাধ্যমে। তিনি জানান, "দুই তিন বছর আগে যখন প্রথম কার্ড জালিয়াতির কথা শুনেছি, প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তখন কয়েকদিন টিভিতে খবরে, টকশোতে এবং ওয়েবসাইটগুলোতে খালি খুঁজেছি গ্রাহকের নিরাপত্তার পথ কী।"

নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি অনেকটাই উদ্বিগ্ন থাকেন। তিনি আরও জানান, ‘প্রতিটি লেনদেনের সময়তো আর খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না মেশিনের সাথে কিছু জুড়ে দেয়া হয়েছে কীনা।‘ এরকম বহু মানুষ আছেন যারা আস্তে আস্তে সচেতন হচ্ছেন। কিন্তু চোখ কান খোলা রাখলেই কী প্রযুক্তির চৌর্যবৃত্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব?

প্রযুক্তি বিশারদদের মতে, এক্ষেত্রে গ্রাহকের চেয়ে ব্যাংকে সতর্ক থাকতে হবে বেশি। এখনো বাংলাদেশে এটিএম কার্ড এক স্তরের নিরাপত্তা দেয়া। এটিকে বাড়িয়ে দুই বা তিন স্তর করতে পারলে জালিয়াতি অনেক কমিয়ে ফেলা যাবে। বিশেষ করে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করলে নিরাপত্তা জোরদার হবে। আর গ্রাহককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এটিএম মেশিনের কী-প্যাডের আশেপাশে কোন ছোট্ট যন্ত্র আছে কীনা যা সাধারণত থাকার কথা না।

এছাড়া পাসওয়ার্ড সবসময় গোপন রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে যাবেন না।

সূত্র : বিবিসি

ওডি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড