• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মন্দ স্পর্শ : কতটা সচেতন আপনি?

  লাইফস্টাইল ডেস্ক

২৩ মে ২০১৯, ১০:২৪
স্পর্শ
ছবি : প্রতীকী

স্পর্শ হলো এমন এক অনুভূতি যা আমরা খুব সহজে অনুমেয় হতে পারি যে গোপনে লুকিয়ে থাকা পরিচিত বা অপরিচিত শিহরণে জেগে উঠে শরীর। তবে স্পর্শ হলো পৃথিবীর সকল শ্রেণির মানুষের এক প্রকার গোপন কথোপকথন। যদিও সেটা আমরা খুব একটা বিবেচনা করি না। কারণ-

আমরা সাধারণ দুই ধরণের স্পর্শের সাথেই পরিচিত। এক হলো আপন জনের কাছ থেকে ভালোবাসা, মায়া কিংবা স্নেহপূর্ণ স্পর্শ আর একটা হলো খারাপ বা মন্দ স্পর্শ, যা সাধারণত আমরা অপরিচিত মানুষ দ্বারা বাস, ট্রেন, রাস্তায় কিংবা ঘরেও অপ্রস্তুত অবস্থায় পেয়ে থাকি৷

কোথায় কোথায় স্পর্শ পেলে আমাদের ভেতরে নিউরন শেল তা প্রবাহিত করে মস্তিষ্ক আঘাত করে তা জেনে নেই। যেমন- হাত, কাঁধ, নিতম্ব, ঠোঁট, স্তন, মাথা, চুল, পা, পেট এবং পিঠ ইত্যাদি।

স্পর্শের ব্যপারটা আমরা সাধারণ সবাই নাক ছিটকিয়ে কিংবা এড়িয়ে চলি। কারণ সবাই সাধারণত লোক লজ্জায় ভয়ে থাকি। কেউ আমাদের স্পর্শ করলে, স্পর্শ যে করেছেন তার চেয়ে বেশি লজ্জা পাই আমরাই। কিন্তু কখনো অনুভব করি না যে একটা ভালো স্পর্শ আর একটা মন্দ স্পর্শ আমাদের জীবনে নিয়ে আসতে পারে কতটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বা পরিস্থিতি।

কিছু স্পর্শের সাথে পরিচত হই বা হওয়া দরকার-

ভালো স্পর্শ-

মনোবিজ্ঞানের ভাষায়- ছোট শিশুকে যখন তার মা হাত দিয়ে স্পর্শ করে, একজন স্ত্রীকে যখন স্বামী ভালোবাসার দৃষ্টিতে স্পর্শ করে, প্রেমিক প্রেমিকা যখন একজন আরেকজনের পাশে থাকার জন্য আজীবনের প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে কাঁধে হাতের স্পর্শ করে কিংবা ছোট বাচ্চাকে বাবা মা ভালো গল্প শোনাতে গিয়ে ঠোঁটে চুমু খাওয়া। এটিও ভালো স্পর্শের গুণ।

আর স্ত্রী এবং স্বামীর ভালোলাগার মুহূর্তগুলোতেই ঠোঁটে স্পর্শ করে থাকে, এটি খুব ইমোশনাল এবং আরামদায়ক। যা সম্পর্ককে গভীর করে। প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রের ঠোঁটে কিংবা গালে কিংবা কপালে চুমুর স্পর্শকে মনোবিজ্ঞানীরা পজেটিভভাবেই দেখছেন। আপনার চোখে টিপ দেওয়াও ভালো স্পর্শের গুণ।

ভালো স্পর্শ আরও রয়েছে। যেমন- সন্তান বড় হলে বাবা মা তাকে মাথায়, পিঠে, কাঁধে, হাতে স্পর্শ দিয়ে সামনে আগানোর কথা বলে, দেখায় ভবিষ্যতের পথ। কখনো কখনো মধ্যবয়সী মেয়ে বা ছেলেকে তার মা পুরনো দিনের গল্প বলতে বলতেও মাথার চুলে স্পর্শ করে থাকেন। এটাও মনোহর তৈরির ক্ষেত্রে পজেটিভ স্পর্শ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। আবার স্ত্রী তার স্বামীকেও মাথার চুলে স্পর্শ করতে করতে অনেক গোপন চাওয়া প্রকাশ করে থাকে এটাও ভালো স্পর্শ।

সবচেয়ে ভালো স্পর্শ হলো হাত ধরা। এই হাতে ধরার স্পর্শটা এতোই সুগভীর যে দুটো মানুষকে একে অপরের নিকট খুব বিশ্বস্ত করে তুলে। তবে আপন জনের কাছে থেকে জড়িয়ে ধরার স্পর্শটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। একটা ভালো স্পর্শ বা পজেটিভ টাচের মাধ্যমে তৈরি হয় সুন্দর বা সুশ্রী এবং গভীর সম্পর্ক।

এবার আশা যাক মন্দ স্পর্শে যা জানা খুব বেশিই দরকার-

মন্দ স্পর্শ-

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সী সকল নারী পুরুষের অপ্রস্তুত অবস্থায় কেউ যদি তার শরীরের যেকোনো স্থানে স্পর্শ করে থাকে তাই মন্দ স্পর্শ। মন্দ স্পর্শ মানসিক রোগের লক্ষণ হিসাবেও ধরা হয়। যেমন- নিতম্বে, স্তনে, পিঠে, পায়ে, হাতে স্পর্শকে বেশির ভাগ সময় মন্দ স্পর্শ বলা হয়। মন্দ স্পর্শের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি স্বীকার হয়ে থাকে শিশু, মধ্যবয়সী যুবক, যুবতী আর ৪৫ এর নিচের বয়সী নারীরা।

মন্দ স্পর্শের ক্ষেত্রে সাধারণ নারীরাই বেশি স্বীকার হয়ে থাকে। কারণ তাদেরকে বাস, ট্রেন, রাস্তায় খুবই একলা বা ভীড়ের মধ্যে পেলে একদল অসভ্য লোক নানান জায়গায় স্পর্শ করে থাকেন। এমন স্পর্শে মেয়েরা লোক লজ্জায় ভয়ে অনেক সময় এড়িয়েও যান কিংবা গোপনে কাঁদেন।

কিভাবে বুঝব যে একজন আরেক জনকে মন্দ স্পর্শ করছে?

যখন কোনো শিশুকে তার গোপন জায়গাগুলোতে কেউ হাত, আঙুল, বা ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করে থাকে আদরের নামে সেটাকে মন্দ স্পর্শ হিসাবেই ধরা হয়। কারণ একটা শিশু কথা বলতে না পারলেও তার ভেতরের লজ্জাকর অনুভূতিতে খুব গভীরভাবে আঘাত করে, একসময় সে ঘরের ভেতরে চুপসে যায় আর মানুষ দেখলেই ভয় পেতে শুরু করে। এতে করে বাবা মাও নানান টেনশনে পড়েন।

আবার নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণ কেউ যদি স্তন, পিঠ, নিতম্ব, পা, হাতে বা কাঁধে স্পর্শ করে তাহলে বুঝতে হবে সে মন্দ স্পর্শ করছে। এমন কি একজন প্রেমিক, স্বামীও যদি অনুমতি ছাড়া এই জায়গা গুলোতে স্পর্শ করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে মন্দ স্পর্শ করছে।

মন্দ স্পর্শ থেকে একজন নারীকে বাঁচতে হলে নিজেকে খুব সচেতন করতে হবে। ভীড়ে যাওয়া যাবে না, একলা একলা হাঁটা যাবে না। হ্যাঁ তবে যদি প্রতিবাদী হওয়া যায়। নিজের মনোবল শক্ত থাকে। ভেতরে মানুষের চরিত্র চলে আসে তাহলে একলা চলা, ভীড়ে যাওয়া সম্ভব এবং মন্দ স্পর্শ পেলেই সাথে সাথে প্রতিবাদ করতে হবে। চুপ করে থাকা যাবে না।

স্বামী বা প্রেমিকের কাছ থেকে মন্দ স্পর্শ পেলে তাকে বুঝাতে হবে যে এইরকম স্পর্শে আমি বিরক্ত। আমাকে এরকম স্পর্শ আর করবা বা করবেন না। এমনকি এরকম স্পর্শ করলে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। কারণ মন্দ স্পর্শ সুস্থ মস্তিষ্ককে নষ্ট করে দেয়।

পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ৭৫% নারী ৫৪% শিশু আর ২৩% পুরুষ মন্দ স্পর্শের স্বীকার হয়ে থাকেন।

স্পর্শ বা টাচ নিয়ে কখনো তেমন বেশি আলোচনার দরকার হয় নাই। কারণ স্পর্শের ব্যপারটা বরাবর ছোট করে দেখতে দেখতে আমরা ভুলেই গেছি একটা স্পর্শ কতোটা ভালো আর কতোটা খারাপ নিয়ে আসতে একজন সুস্থ মানুষের জীবনে।

মনোবিজ্ঞান বলছে- একটা শিশু আর একটা মেয়ে বা ছেলেকে ( যুবক যুবতীর পর) যেকোনো বয়সে যদি বসিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভেতরে ভালো ও মন্দের স্পর্শের পরিমাণ হবে ১০% আর ৮৭%। মানে শিশুটিকে মন্দ স্পর্শ করাই হবে বেশি।

আবার মধ্যবয়সী মেয়ে আর ছেলেকে এক সাথে থাকতে দিলে তাদের মধ্যে স্পর্শের পরিমাণ ৩৩% ও ৮৯%। মানে ছেলেটি মেয়েটিকে ৮৯% ভাগ মন্দ স্পর্শ করতে চেষ্টা করবে। আর ৩৩% ভালো স্পর্শ করবে দুজন অনুমতি নিয়েই।

ছোট কথা, একটা মেয়ে আর একটা মেয়ে, একটা ছেলে আর একটা ছেলেকে, একটা শিশু আর একটা শিশুকেও মন্দ স্পর্শ করে থাকে। বা করতে পারে।

তাই আমাদের উচিত স্পর্শের ব্যপারে সচেতন হওয়া। বন্ধু, প্রেমিক, স্বামী এবং প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেতন করা। স্পর্শের ব্যাপারে নিজের অনুমতির বাহিরে হলে তাকে এড়িয়ে চলা, এমনকি সম্পর্ক ছিন্ন করা।

একটা মেয়ের মনে রাখতে হবে তাকে যে মন্দ স্পর্শ করবে বা করছে সে আরও দশটা মেয়েকে মন্দ স্পর্শ করবে। সুতরাং তার চোখে ভালো ভবিষ্যত দেখার কোনো সুযোগই নেই।

আজকের এই আলোচনা করার কারণ হলো আমাদের দেশে মেয়েরা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি এই মন্দ স্পর্শের স্বীকার হচ্ছে বা হয়ে আসছে। ভালো আর মন্দ স্পর্শের চাপে তারা খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে। মনেই করতে পারছে না আসলে তার কী করা উচিত!

পরিশেষে বলে রাখি মন্দ স্পর্শও ধর্ষণের মতো সমতুল্য অপরাধ।

হ্যাঁ আমাদের সমাজে স্পর্শচালিত শিহরণে একজন অন্ধলোক চলাচল করে, কিংবা মুখের ইরাশায় কেউ কেউ গোপন কথা বলে। ইশারাও এক ধরনের স্পর্শ বলা হয়। যেমন- চোখের ইশারায় মানুষের ভেতরে ভালো মন্দ স্পর্শের উত্তোলন হয়।

আসুন আমরা স্পর্শ সম্পর্ক অবগত হই। সবাইকে স্পর্শের ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সচেতন করি। কারণ একটা শিশু, একটা মেয়ে, একটা ছেলের স্বাভাবিক আচরণ নির্ভর করে স্পর্শের উপর।

মন্দ স্পর্শ এড়িয়ে নয়, প্রতিবাদ করে চলার চেষ্টা করব। বুঝানোর চেষ্টা করব যা করছে তা ঠিক নয়। মনে রাখবো আমি, আপনি পরিবর্তন হলেই পরিবর্তন হবে সমাজ, দেশ ও পৃথিবী। ধন্যবাদ।

লেখক : আদিব হোসাইন।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড