নিশীতা মিতু
এবার ক্লাস টু তে উঠেছে নীরব। মা-বাবা আর দাদা ভাইয়ের মতো এবার সেও রোজা রাখতে চায়। এতটা সময় না খেয়ে থাকা কি ওর মতো ছোট মানুষের পক্ষে সম্ভব? যদি অসুস্থ হয়ে যায়? তার ওপর আবার গরম। সবকিছু ভেবে মা-বাবা রাজী হচ্ছেন না। ওদিকে নীরবও নাছোড়বান্দা, এবার রোজা রাখা চাই ই চাই।
আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মুসলিমদের অন্যতম বড় ইবাদত ‘মাহে রমজান’। এক মাসব্যপী আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় সুবেহ সাদিক থেকে মাগরিবের আজান অব্দি না খেয়ে থাকবেন মুসলিমরা। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও এসময় রোজা রাখার বায়না ধরে। কিন্তু প্রায় ১৫ ঘণ্টা কি তারা না খেয়ে থাকতে পারবে? এ ব্যাপারে কী বলেন চিকিৎসকেরা?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন শিশুর বয়স ৭/৮ বছর বা তার বেশি হলে রোজা পালনে শিশুর শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না খুব একটা। এক্ষেত্রে শিশু যদি রোজা রাখার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে তবে তাকে সুযোগ দিতে পারেন। তবে শিশুদের রোজা পালনে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
শুরুতেই পুরো রোজা নয়-
এখন দিন বড় হওয়ার কারণে বড় একটা সময় না খেয়ে থাকতে হয়। অভ্যাস না থাকলে শিশু হঠাৎ করে এত সময় উপোষ থাকলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তারচেয়ে প্রথম দিকে তাকে অর্ধেক সময় রোজা রাখতে বলুন। অর্থাৎ সেহেরি খেয়ে দুপুর অব্দি রোজা রাখতে বলুন। এতে সে ধীরে ধীরে রোজা ব্যাপারটির সঙ্গে অভ্যস্ত হবে।
খাবার দিন পরিমিত-
শিশু রোজা রাখতে চাইলে অনেক সময় অভিভাবকরা জোর করে সেহেরিতে বেশি খাবার খাওয়াতে চান। এ কাজটি করবেন না। একসাথে বেশি খাবার খেতে গেলে শিশু অসুস্থ হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং সে যতটুকু খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তাকে ততটুকুই খাবার দিন।
তবে শিশু যেন প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শিশুর দেহে জমা থাকা গ্লাইকোজেন কমতে থাকে, শরীরে গ্লুকোজ সরবরাহ কমে যায়। যার ফলে শিশুর প্রাত্যহিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুর খাবার হবে যেমন-
সেহেরিতে শিশুকে এমন খাবার দিন যা সে সহজেই খেতে পারবে এবং শরীরের ক্ষতির কারণ হবে না। খাদ্যতালিকায় রাখুন ভাত, ডাল, সবজি, মাংসজাতীয় খাবার। এসময় মাছ না দেওয়াই ভালো। কারণ অনেক শিশুই মাছ খেতে আপত্তি করে। চাইলে রাখতে পারেন ডিম বা মুরগির মাংস।
খাওয়া শেষে দিতে পারেন একটি মৌসুমি দেশি ফল। খাবার খাওয়ার পর এক গ্লাস দুধ পান করাতে পারলে সারাদিনের পুষ্টি নিয়ে আর ভাবতে হবে না। খালি দুধ খেতে না চাইলে দুধ আর কলা মিশিয়েও দিতে পারেন।
দুধ শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের জোগান দেয়। দুধের আরেকটি উপকারিতা হলো এটি অনেকক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে।
রোজা রাখলে শিশুর যত্ন নিন একটু বাড়তি-
অন্য সময়ের চাইতে রোজায় শিশুদের একটু বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। এসময় রোদে বা গরমে বেশি সময় বাইরে খেলাধুলা না করাই ভালো। রোজা রেখে বেশি খেলাধুলা করলে শিশু অসুস্থ হয়ে যাবে। বেশি সময় রোদে থাকলে শিশুর মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
পানি পান করতে বলুন-
বড়দের তুলনায় শিশুদের দেহে সহজেই পানির ঘাটতি দেখা যায়। তাই ইফতার ও সেহেরির মাঝে শিশু যেন সাত থেকে দশ গ্লাস পানি পান করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। সারাদিনের রোজা শেষে ইফতারে শরবত ও পানীজাতীয় খাবার দিন।
যেমন হবে শিশুর ইফতার-
ইফতারে শিশুকে মসলাযুক্ত ও ভাজা পোড়া খাবার না দেওয়াই ভালো। এসময় শিশুকে পাতলা খিচুড়ি, দই চিড়া, সবজি বা মাছ/মাংস দিয়ে রান্না করা নুডলস ইত্যাদি খেতে দিন। ইফতারে একবারে অনেক খাবার না দিয়ে অল্প সময় পর পর শিশুকে খেতে দিন।
ঘুম যেন পর্যাপ্ত হয়-
রোজা রাখলে শিশু যেন পর্যাপ্ত ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। রাতে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন। দিনের বেলায় দুপুরের পর কিছুক্ষণ ঘুমালে ক্লান্তি কম হবে।
শিশুর ইচ্ছাশক্তি আর শারীরিক শক্তির সমন্বয় ঠিক থাকলে তাকে রোজা রাখতে দিন। তবে রোজা রেখে অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড