সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মা বা বাবা হিসেবে কেবল শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও বেড়ে ওঠা নয়, মানসিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার দিকেও আপনার খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আমরা শিশুদের না বুঝেই অনেক কথা বলি, তাদের সাথে কথা বলার সময় এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করি যেটা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। অনেকসময় মা-বাবার এই কথাগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে শিশুর উপরে।
তবে, কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে একটু হলেও শক্ত কোন কথাকে শিশুর সামনে সহজভাবে প্রকাশ করতে পারবেন আপনি। বলছিলাম ‘কিন্তু বা তবে’ শব্দটির কথা। এমনিতে ‘কিন্তু’র আলাদা কোন মানে না থাকলেও, ‘এবং’ এর পরিবর্তে এটি ব্যবহার করলে অনেক কঠিন কথারই অর্থ বদলে যায়। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু উদাহরণ-
১। “ভাইয়া তোমাকে মেরেছে এবং তুমি সেটা আমাকে জানিয়ে ভালো করেছো”।
আপনার শিশুদের মধ্যে কোন ছোটোখাটো সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে উপরের কথাটি আপনি ব্যবহার করতেই পারেন। তবে কেমন হয়, যদি এর পরিবর্তে ব্যবহার করেন-
“ভাইয়া তোমাকে মেরেছে, তবে সেটা আমাকে বলে খুব ভালো করেছ”।
এই একটি শব্দের পরিবর্তন আপনার কথার আবেগকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। প্রথম লাইনটি বললে, আপনার শিশু কেবল দুটো ভিন্ন ভিন্ন আবেগ পাবে। প্রথম অংশটি তাকে এই অনুভূতি দেবে যে, কেউ একজন তার সাথে খুব খারাপ কাজ করেছে, এবং সে আপনাকে বলে খুব ভালো করেছে। এটা একরকমের নালিশের মতো মনে হবে তার কাছে।
অন্যদিকে, কিন্তু বা তবে শবটা ব্যবহার করলে লাইনটির অর্থ দাঁড়াবে খুবই কোমল। এতে করে শিশু বুঝবে যে, কেউ তার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে, তবে আপনি সবসময় আপনার শিশুর পাশে আছেন। তার কথা শোনার জন্য আছেন। তাই, আপনাকে সে কথাগুলো বলে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। এতে করে শিশুর খারাপ লাগার জায়গাটা একটু হলেও কমে যাবে। সে আপনাকে নালিশ করবে না, সে নিজের কষ্টটা দূর করবে।
২। “তোমার কাজটা ভালো এবং তুমি সফল নাও হতে পারো”।
এভাবে কথাটি বলা যায়। তবে এটি খুব কড়া একটি অর্থ প্রকাশ করবে। দুটো আলাদা ভাগ হয়ে যাওয়ায় এই লাইনের মাধ্যমে আপনার শিশু কাজ করতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।
“তোমার কাজটা ভালো, কিন্তু তুমি সফল নাও হতে পারো”।
এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু শব্দটি ব্যবহার করলে প্রকাশ পাবে যে, আপনি তার কাজ নিয়ে আশাবাদী। শুধু তাই নয়, আপনি আপনার শিশুর কাজের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত। নিজের কাজ নিয়ে যাতে আরো একটু ভেবে নেয় আপনার শিশু, বাড়তি মনোযোগ দেয় সেটাই বোঝানো হবে এই লাইনের মাধ্যমে। ফলে, নিজের কাজ বন্ধ করে দেবে না আপনার শিশু এই কথার পর, বরং, সে আরও গুছিয়ে কাজ করতে শুরু করবে। একইসাথে, আপনার সমর্থন যে তার সাথে আছে সেটাও বুঝতে পারবে সে।
৩। মনে হচ্ছে, তুমি ওকে কিছু বলতে চাচ্ছিলে এবং ও তোমার কথা শোনেনি”।
এই কথাটি অনেকটা অভিযোগের মতো। এখানে, আপনার শিশুকে আপনি ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, সে কারও কাছ থেকে মনোযোগ পায়নি। তাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এতে করে তার কষ্ট বাড়বে। একইসাথে, অপর মানুষটির প্রতিও রেগে যাবে সে।
“মনে হচ্ছে, তুমি ওকে কিছু বলতে চাচ্ছিলে, কিন্তু ও তোমার কথা শোনেনি”।
অন্যদিকে, এই কথাটি ব্যবহার করলে আপনার শিশু শুধু নিজের খারাপ লাগাটাই আপনার সাথে বিনিময় করার সুযোগ পাবে। নেতিবাচক কোন প্রভাব তার উপরে পড়বে না। পাশের মানুষটিকেও দোষারোপ করবে না সে।
তাই, এখন থেকে শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই ছোটোখাটো শব্দগুলোর দিকেও মনোযোগ দিন। এতে করে আপনার শিশু শারীরিকভাবে যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনি থাকবে মানসিকভাবেও।
মূল লেখক : জেসি বোরেলি, সহযোগী অধ্যাপক, সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড