নিশীতা মিতু
শাহেদ আর ফারজানা দম্পতির একমাত্র সন্তান আদিত্য। সোনামণির আদর যত্নে কমতি নেই মা-বাবার। নিজের জগতে, নিজের মতো করে বেড়ে উঠছিল আদিত্য। ঘর ভর্তি খেলনা, পোশাক, গেমস খেলার জন্য ট্যাব সবকিছুই আছে তার।
সমস্যার শুরু হলো আদিত্যকে স্কুলে ভর্তি করানোর পর। স্কুলের দু’ চারজন বন্ধু মাঝেমধ্যে বাসায় আসতে শুরু করল। তারা ওর খেলনাগুলো নিয়ে খেলতে চায়। কিন্তু তাতেই রেগে একাকার আদিত্য। নিজের জিনিস কিছুতেই অন্য কাউকে ধরতে দেবে না। এমনকি চকলেটের ভাগও অন্য কাউকে দিতে নারাজ সে। সন্তানের এমন আচরণে বেশ বিব্রত শাহেদ আর ফারজানা।
আদিত্যের মতো দেশের বেশিরভাগ শিশুরাই নিজের গণ্ডিতে নিজের মতো করে বেড়ে ওঠে। আপনার আদরের সন্তানটিও কি এমনভাবেই বড় হচ্ছে? অভিভাবক হিসেবে কতটা সচেতন আপনি? শিশুকে অন্যের সঙ্গে নিজের জিনিস ভাগ করা বা শেয়ারিং শেখাচ্ছেন কি?
শিশুরা হয় অনুকরণপ্রিয়। আপনাকে দেখেই সে শিখবে। সন্তানকে তার পছন্দের জিনিস চাইলেই কিনে না দিয়ে ধৈর্য ধরতে শেখান। এতে সে বুঝবে চাইলেই সব পাওয়া যায় না, তার জন্য কষ্ট করতে হয়। শিশুকে আপনি নিতে শেখাচ্ছেন ঠিকই, তার সঙ্গে দিতেও শেখাচ্ছেন তো? বেশিরভাগ মা-বাবাই অফিস শেষে সন্তানের জন্য চকলেট, খাবার জিনিস কিংবা অন্যকিছু নিয়ে আসেন। কখনো কি তাকে বলেছেন চকলেটগুলো বন্ধুদেরও দিতে। কিংবা আপনাদেরই ভাগ করে দিতে বলেছেন কি?
দোকানে সন্তানকে নিয়ে খেলনা কিনতে নিয়ে গেছেন নিশ্চয়ই। তাকে সবসময়ই নিজের জন্য পছন্দ করতে বলেছেন। কখনো কি অন্য কারও জন্য পছন্দের কথা বলেছেন? সববয়সী কাউকে উপহার দেওয়ার কথা কখনো কি বলেছেন তাকে?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা হয়ে পড়েছি আত্মকেন্দ্রিক। সে সঙ্গে শিশুদের শেখাচ্ছি কী করে কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে, নিজের জগত কেবল নিজেকে নিয়ে গড়তে হবে। আজ সন্তানকে অনুভূতি কিংবা কোনো কিছু অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে শেখাচ্ছেন না। খানিকটা বড় হয়ে আপনার আদরের সন্তান যখন নিজের আনন্দ বা কষ্ট আপনার সঙ্গে ভাগ করে নেবে না, তখন কি অবাক হবেন না?
সমাজে আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থানে অনেক মানুষ রয়েছে। আপনার সন্তানকে কি কখনো তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শিখিয়েছেন? ছোটবেলা থেকেই শিশুকে শেয়ারিং শেখানো উচিত অভিভাবকদের। কীভাবে সন্তানের মনে শেয়ারিং মনোভাব গড়ে তুলবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক-
শিশুকে বোঝান অন্য কাউকে কিছুর ভাগ দেওয়ার মানে নিজের অংশ কমে যাওয়া নয়। বরং, এতে করে নিজের ভালোলাগা বাড়ে।
সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধু কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য উপহার কিনুন। উপহার পছন্দ করার সময় সন্তানের মতামত নিন।
একের অধিক সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তুলুন। একজনের হাতে খাবার বা খেলনা দিয়ে অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলুন। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটবে।
শিশুকে প্রয়োজনের বেশি পোশাক বা খেলনা কিনে দেবেন না। সন্তানের পুরোনো পোশাকগুলো সুবিধাবঞ্চিতদের দান করুন। এতে সন্তানের মনে অন্যের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার স্বভাব গড়ে উঠবে।
একা একা থাকার চাইতে সবাই মিলে থাকাতে আনন্দ বেশি- এই কথাটি তাকে বুঝিয়ে বলুন।
শেয়ারিং এর ব্যাপারে কখনো শিশুর সঙ্গে জোরাজুরি করবেন না। বরং ভালোবেসে তাকে বোঝান। তাহলে নিজে থেকে এ বোধ তার মধ্যে সৃষ্টি হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড