সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আপনার ত্বকের ওপরে কি কিছু ভাঁজ ভাঁজ অংশ দেখতে পাচ্ছেন? ত্বকের উপরিভাগে ভাসমান এই ফ্যাটকে মূলত হলুদ চর্বি বা সেলুলাইট বলা হয়। শরীরের কোলাজেন ফাইবারের মধ্যকার ফ্যাট সেলের পরিবর্তনকে এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। প্রায় ৯০ শতাংশ নারীর শরীরের পশ্চাৎভাগ, উরু ও হাঁটুতে এই সেলুলাইট দেখতে পাওয়া যায়।
সেলুলাইট দূর করার জন্য অনেকেই নানারকম উপায় অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু এদের সবগুলোই কিন্তু কার্যকরী নয়। আপনি কি আপনার শরীরের সেলুলাইট দূর করতে এমন কোনো অকার্যকরী পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন?
আজ আমরা এ ব্যাপারেই জানব। আর সেটা বিস্তারিতভাবে জানার আগে চলুন, সেলুলাইটের পেছনে থাকা কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
কেন সেলুলাইট তৈরি হয়?
নানারকম কারণেই আমাদের ত্বকের উপরিভাগে সেলুলাইট তৈরি হয়। সেগুলো হলো-
১। খাদ্যাভাস
খাবারে অনেক বেশি পাস্তুরিত উপাদান গ্রহণ করলে সে ক্ষেত্রে ত্বকে সেলুলাইট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাজা খাবার এবং শাক-সবজি বা ফল খাচ্ছেন এমন মানুষের শরীরে সেলুলাইট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২। হরমোন
পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরে সেলুলাইট বেশি হতে দেখা যায়। এজন্য নারীদের এস্ট্রোজেন হরমোনকেই বেশি দায়ী করা হয়। শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলেই সেলুলাইটের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৩। রক্তচাপ
ত্বকের সেলুলাইটের পেছনে রক্তচাপের বেশ বড় ভূমিকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের মধ্যে রক্তচাপ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো থাকায় তাদের ত্বকে সেলুলাইট জন্ম নেয়। আবার নারীদের রক্তচাপ কম থাকার কারণেও নারীদের ত্বকে সেলুলাইট দেখা দেয়।
৪। অন্তর্বাস
অন্তর্বাসের ধরনের কারণে নারীদের শরীরে সেলুলাইট বেশি দেখা যায়। কারণ, নারীদের অন্তর্বাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আঁটসাঁট হয় এবং রক্ত চলাচল সঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে সেলুলাইট তৈরি হয়।
এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক যে, আপনি সেলুলাইট দূর করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করছেন সেগুলো কতটা সঠিক এবং কতটা সঠিক নয়-
১। ক্রিম ব্যবহার করা
বাজারে এমন হাজারটা ক্রিম পাওয়া যায় যেটি ত্বককে কিছুটা সময়ের জন্য উজ্জ্বল করে দেয় এবং টানটান করে। সেগুলো সেলুলাইট দূর করার জন্য উপযোগী বলে প্রচার করা হলেও এই ক্রিমগুলো মোটেও সেলুলাইট দূর করতে পারে না।
২। ব্রাশ ব্যবহার করা
অনেকেই ভাবেন যে, চিরুনি ব্যবহার করলে সেটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। ফলে, সেলুলাইট জন্ম নেয় না। কিন্তু মূলত, ত্বকের রক্ত সঞ্চালন সেলুলাইটের জন্ম যেখানে হয় সেই প্রক্রিয়াকে থামাতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। তাই এর ফলে আমাদের ত্বক সুস্থ থাকে।
৩। সেলুলাইট অন্তর্বাস পরা
সেলুলাইট দূর করার জন্য বিশেষ এক রকমের অন্তর্বাস ব্যবহার করা হয়। এটি কি আসলেই কার্যকরী? হ্যাঁ! কিছুটা কার্যকরী তো বটেই। তবে এটা নির্ভর করে আপনি টানা কতদিন, কতটা সময় অন্তর্বাস ব্যবহার করছেন তার ওপরে।
৪। রোলার-সাকশন ট্রিটমেন্ট
রোলার-সাকশন ট্রিটমেন্ট এমন একটি ট্রিটমেন্ট যেখানে ত্বকের ওপরে যান্ত্রিক উপায়ে ম্যাসেজ করার মাধ্যমে সেলুলাইট দূর করা হয়। এটি কিছুটা হলেও কার্যকরী। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য ব্যাপারের ওপর।
৫। লিপোসাকশন ও ক্রাইলিপোলাইসিস
লিপোসাকশনে ত্বকের ভেতরে থেকে সেলুলাইট বের করে আনা হয় এবং ক্ররাইলিপোলাইসিসের ক্ষেত্রে ফ্যাট জমিয়ে দেওয়া হয়। এর কোনোটাই কি শেষ পর্যন্ত সেলুলাইট ত্বক থেকে একেবারে দূর করতে পারে? উত্তরটা হলো- না! পারে না। সাময়িকভাবে এই ট্রিটমেন্টগুলো আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম।
৬। ওজন কমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
এই দুটো ব্যাপারই আপনাকে ধীরে ধীরে সেলুলাইট থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এজন্য কঠোর সাধনা করা আবশ্যক। হুট করে ওজন না কমিয়ে ধীরে ধীরে, স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন : ঠিকমতো কিডনির যত্ন নিচ্ছেন তো?
৭। পানি পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান করলে অনেকেই ভাবেন সেলুলাইট দূর হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন নয়। তবে, আপনার শরীরের ওজনকে ২ দশমিক ২ দিয়ে ভাগ করলে যে পরিমাণটি আসবে সেই পরিমাণ আউন্স পানি পান করলে সেলুলাইট থাকা সত্ত্বেও সুস্থ বোধ করবেন আপনি।
তাহলে, সেলুলাইট থেকে মুক্তির উপায় কি একেবারেই নেই? খুশির ব্যাপার হলো, ওয়েভ থেরাপি, লেজার ট্রিটমেন্ট, সাবসিশনের মতো পদ্ধতিগুলো আপনাকে সেলুলাইট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পারে। তাই, চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এই পদ্ধতিগুলো আপনি বেছে নিতেই পারেন!
সূত্র- এভিরিডেহেলথ
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড