সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
কাছের মানুষটির মৃত্যু সবসময়ই কষ্ট নিয়ে আসে। তবে এই কষ্ট আরও বেড়ে যায়, সঙ্গে রাগ, অপরাধবোধ আর নানাকিছু যোগ হয় যদি সেই প্রিয় মানুষটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেন সে এমন করেছিল? কেন সে আপনার সাহায্য নেয়নি? এই প্রশ্নগুলো বারবার মাথায় ঘুরে বেড়ায়। আর এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অনুভূতিগুলোর প্রচণ্ডতা নিয়ে বেঁচে থাকাটাও কঠিন।
কী করে ভালো থাকবেন, বাঁচবেন প্রিয় মানুষটির চলে যাওয়ার বেদনা, কষ্ট, রাগ আর অভিমান নিয়ে? নিজের বই 'লাইফ আফটার সুইসাইড : ফাইন্ডিং কারেজ, কমফোর্ট, এন্ড কমিউনিটি আফটার আনথিংকেবল লস' এ এবিসি নিউজের প্রধান মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট জেনিফার অ্যাশটন এমন সম্ভাব্য কিছু উপায়ই ফুটিয়ে তুলেছেন। হাতে সময় থাকলে দেখে নিন একবার-
১। আপনার কোনো দোষ ছিল না
কষ্টটা সবসময় অনেক বেড়ে যায়, যখন মনে হয় আপনি হয়তো মানুষটির এই ভুল সিদ্ধান্তের পেছনে দায়ী। তার পাশে থাকতে পারেননি দেখেই এমনটা হয়েছে। বাস্তবে, আপনার প্রিয় মানুষটির এমন সিদ্ধান্তের জন্য আপনি কোনোভাবেই দায়ী নন। নিজেকে যত দ্রুত এই সত্যিটা বিশ্বাস করাতে পারবেন ততটাই ভালো।
কারও চলে যাওয়ার কষ্ট যতটা আমাদের ওপরে প্রভাব রাখে, তারচেয়ে বেশি আমরা আক্রান্ত হই অপরাধবোধে। একটি কাগজে লিখুন, আপনি যে তার এই কাজের পেছনে দায়ী নন। আপনার মন হয়তো বারবার আপনাকে অপরাধবোধে ভোগাবে। কিন্তু সেখান থেকে নিজেকে মুক্তি দিন। আয়নার সামনে জোরে জোরে বলুন- ‘আমি তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলাম না। কোনোভাবেই না।’ ‘যদি আমি আরেকটু মনোযোগ দিতাম’, ‘যদি তাকে একটা ফোন করতাম’ এমন অনেক ‘যদি’কে পাল্টে দিয়ে সেসব ব্যাপারকে ভাবুন যেগুলো আপনি করেছেন।
২। স্বাভাবিক কাজকর্মের সাহায্য নিন
মানসিক কোনো বড় রকমের আঘাত পেলে এর ফলে একজন মানুষের স্বাভাবিক অন্যান্য কার্যক্রম, এই যেমন- খাওয়া, ঘুমানো, গোসল করা ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এতে করে তার শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আরও বেশি। তাই, প্রিয়জন হারানোর পর কোনো কাছের মানুষের সঙ্গে থাকুন। এতে করে সে আপনাকে একটু হলেও গুছিয়ে রাখতে পারবে।
৩। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন
প্রিয় মানুষের চলে যাওয়াটা কষ্টের। আর সেটা যদি হয় আত্মহত্যার মাধ্যমে, তাহলে সেই কষ্টের সঙ্গে আরও অনেক অনুভূতি মিশে থাকে। এই কষ্টকে একেবারে দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কষ্ট কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া যত দ্রুত শুরু করা সম্ভব ততটাই ভালো। এজন্য-
>> নিজের কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে সময় কাটান >> সাপোর্ট সিস্টেম, অর্থাৎ, আপনাকে মানসিকভাবে সাহায্য করতে পারে এমন স্থান এবং মানুষগুলোর সঙ্গে থাকুন >> নিজের অনুভূতিগুলোকে মেনে নিন এবং সেগুলোকে চেপে রাখার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন >> বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন >> একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন >> নিজের যত্ন নিন, নিজেকে ভালোবাসুন
আপনি কি এমন একজন মানুষের পাশে আছেন যিনি কাছের মানুষের চলে যাওয়ায় মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছেন? সে ক্ষেত্রে-
১। নিজের কথা এবং শব্দ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করুন। আত্মহত্যাকে আত্মহত্যাই বলুন। অন্য কোনোভাবে এই ঘটনাটিকে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করলে সেটি আপনার সামনের মানুষটিকে আরও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। এছাড়াও, নিজের জীবনে এমন কোনো ঘটনা থাকলে সেটাও পাশের মানুষটিকে বলুন।
২। আপনার পাশের মানুষটির সঙ্গে ঠিক সেভাবেই কথা বলুন যেভাবে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আছে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আপনি কথা বলতেন। কারণ, খুব কাছের মানুষটির আত্মহত্যার পর পাশের মানুষগুলোও মানসিকভাবে খুব নাজুক অবস্থায় থাকেন। তাই তাদের মধ্যে মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা, অতিরিক্ত রাগ, আত্মহত্যা বা হতাশা সংক্রান্ত কথা বলা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো দেখলে তাদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মিশুন। খেয়াল রাখুন।
আরও পড়ুন : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি হতাশা বাড়ায়?
ভালোবাসার মানুষের আত্মহত্যার মতো পথকে বেছে নেওয়াটা শুধু যে যন্ত্রণার তা নয়, একই সঙ্গে এই কথাগুলো বিশ্বাস করতেও সময় লেগে যায় অনেক। হয়তো আপনি এমন একজন মানুষের খুব কাছের কেউ যে মাত্রই চলে গিয়েছে, কিংবা আপনার সামনে যে মানুষটি আছে তিনি হয়তো ভালোবাসার কাউকে হারিয়েছেন।
তবে যেই পাশেই আপনি থাকুন না কেন, এটা সবসময় মনে রাখুন যে- যাকে নিয়ে এত কথা সে চলে গিয়েছে। বেঁচে আছেন আপনি এবং আপনার চারপাশের মানুষেরা। হয়তো অনেক সময় লাগবে, অনেক মানসিক আবেগ কাজ করবে। তবুও, জীবনকে ভালোবাসুন। যে চলে গিয়েছে তার কথা ভেবে হলেও জীবনটাকে আরেকটু ভালো করে তো সাজানোই যায়, তাই না?
সূত্র- এভরিডেহেলথ
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড