সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ছোট্ট শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে কতকিছুই না করে থাকি আমরা। কিন্তু শিশুর খাবার? সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বাজারে শিশুদের যে খাবার পাওয়া যায় তাতে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত থাকছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শিশুখাদ্যের শতকরা ৯৫ শতাংশে একটি বা একের বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে।
১৬৮টি শিশুখাদ্যের প্রতি চারটির একটিতে সীসা, পারদ, আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের চারটি ধাতুই পাওয়া গিয়েছে। এই পরিমাণ যদিও খুব অল্প। তবে উপরোক্ত ধাতব পদার্থগুলো শিশুর স্নায়ু বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে পরবর্তীকালে বেশ বড় সমস্যা তৈরি করে।
অনেক ক্ষেত্রে, এ ব্যাপারে উৎপাদনকারী সংস্থারও খুব বেশি কিছু করার থাকে না। এই যেমন, অনেকেই শিশুদের জন্য রাইস সিরিয়াল নিয়ে থাকেন। আর ভাত অনেক বেশি আর্সেনিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় এর ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করারও থাকে না। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি ওটমিল ব্যবহার করেন, তাহলে খাবারের শতকরা ৮০ শতাংশ আর্সেনিক থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু ভাত নয়, ভাতের মতোই ধাতব পদার্থের সঙ্গে সংযুক্ত খাবার, এই যেমন- ফলের রস, বিস্কুট, মিষ্টি আলু, গাজর ইত্যাদিও একই সমস্যা তৈরি করে।
শিশুর জন্য কোন খাবারটি সবচাইতে ভালো?
আপনার শিশুর জন্য কোন খাবারটি স্বাস্থ্যকর তা নির্ভর করবে খাবারের কোন ধরণটি আপনি বাছতে চাচ্ছেন তার ওপরে। ভাতের বিকল্প হিসেবে আপনি আপনার শিশুকে রাইস-ফ্রি স্ন্যাকস, ওটমিল ইত্যাদি দিতে পারেন। এছাড়া কলা বা শসাও এই তালিকায় রাখতে পারেন।
এছাড়া, শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য তাকে নানারকম সবজি খেতে দিন। বারবার একই খাবার খাওয়ানোর চাইতে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাইয়ে শিশুকে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খেতে দেওয়াটাই ভালো। এ ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব বেশি মাটির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন খাবার না খাওয়ানোর। এতে করে আর্সেনিকের মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে সহজেই।
আপনি অবশ্যই এটা জানবেন না যে কোন খাবারটি আপনার শিশুর জন্য ভালো, আর কোনটি নয়। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে দোকান থেকে কোনো খাবার কেনার আগে সেটার উপাদান সম্পর্কে পড়ে নিন। এতে করে আগে থেকেই অনেক নেতিবাচক উপাদান থেকে আপনার শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে কখনোই পুরোপুরি নিরাপদ থাকাটা সম্ভব নয়। আপনি হয়তো ‘অর্গানিক’ হিসেবেই কোনো একটি খাবার খাচ্ছেন। তবে, সেই খাবারটি হাইওয়ের পাশে যখন ছিল, তখন সেটার গায়ে কোনো গাড়ির মবিল এসে লেগেছে কি না বা সেই এলাকার মাটিতে কোনো ধাতব পদার্থ বেশি ছিল কি না- এই সবকিছু জানাটা আপনার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।
আরও পড়ুন : আপনার শিশু ঠিকমতো কানে শুনতে পাচ্ছে তো?
এরপর রয়েছে খাবার প্রক্রিয়াজাত করার প্রক্রিয়া। এই সময়েও খাবারে দূষণ তৈরি হতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এই সমস্যা এড়াতে স্টেইনলেস স্টিলের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে সেটা ছাড়াও উষ্ণতা, চারপাশের পরিবেশ- এই সবকিছুও আপনার শিশুর খাবারকে দূষিত করে তুলতে পারে।
এই সমস্যার সমাধান কী?
শিশুদের খাবারকে সুরক্ষিত করতে সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি মনোযোগ দিয়ে থাকে। তবে তারপরও যে সমস্যাগুলো এই খাবারে থাকতে পারে সেগুলোকে এড়াতে-
১। ঘরে শিশুর জন্য খাবার তৈরি করুন। খাবার সেদ্ধ অবস্থায় দেওয়ার চেষ্টা করুন। ২। ভাত, গাজর এবং মাটির খুব কাছাকাছি জায়গা বা ভেতর থেকে জন্মানো খাবারগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ৩। দোকান থেকে খাবার কেনার সময় সেগুলোর উপাদান সম্পর্কে পড়ুন। ৪। হাত দিয়ে খাবার বানায়, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর খাবার কিনুন।
এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো হয়তো খাবারের বিষাক্ততাকে ১০০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারবে না। তবে আপনার শিশুর খাবারকে অন্যদের চাইতে নিরাপদ করে তুলবে। তাই শিশুকে বাড়িতে তৈরি খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। এতে করে ছোটবেলা থেকেই সে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
সূত্র- হেলথলাইন
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড