সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
একবিংশ শতাব্দীর মিলেনিয়ালদের মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিন্তা একটু বেশি পরিমাণেই দেখা যায়। মানসিক ও শারীরিক- দুটো দিক দিয়েই তারা আগের প্রজন্মের চাইতে বেশি সচেতন। কিন্তু তারপরেও, কিছুদিন আগে প্রকাশিত ব্লু ক্রস ব্লু শিল্ড অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, অন্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে এই প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেশি।
এই অসুস্থতাগুলোর মধ্যে তালিকায় প্রথম যে ১০টি নাম রয়েছে সেগুলো হলো-
১। হতাশা ২। মাদকাসক্তি ৩। মদ্যপানের অভ্যাস ৪। হাইপারটেনশন ৫। হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ৬। সাইকোটিক কন্ডিশন ৭। ক্রনস ডিজিজ এবং আলসেরাটিভ কলিটিজ ৮। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ৯। তামাক পানের অভ্যাস ও ১০। টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এই অসুস্থতাগুলো এই প্রজন্মের মধ্যে প্রথম দশ হিসেবে চলে এসেছে, সমস্যা এটা নয়। এখানে মূল সমস্যা হলো, আগের প্রজন্মের চাইতে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এই অসুস্থতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০১৭ সালে ৩৪-৩৬ বছর বয়সী হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের চেয়ে ২০১৪ সালে যারা ৩৪-৩৬ বছর বয়সী হয়েছেন তাদের অসুস্থতার পরিমাণ ১১ শতাংশ বেশি। এতকিছুর পরেও পরিসংখ্যানে উঠে আসে যে, মোট ৫৫ মিলিয়ন মিলেনিয়ালের মধ্য থেকে শতকরা ৮৩ শতাংশ ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ ভাবেন।
অসুস্থতার নতুন রকম
নতুন প্রজন্মের মধ্যে অন্যান্য অসুস্থতার চাইতে মানসিক অসুস্থতার পরিমাণটাই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে গবেষকেরা দায়ী করেন-
১। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
প্রযুক্তি যখন উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়েই এই প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে। ফলে তাদের মধ্যে অনুভূতিকে বোঝা, কারও সঙ্গে আবেগ নিয়ে সম্পর্ক তৈরি করা- এই ব্যাপারগুলো কমে এসেছে। এতে করে একটা সময় তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করেছে। হতাশা হয়ে পড়েছে।
২। গণমাধ্যমের ব্যাপকতা
একটাসময় খুব নেতিবাচক কোনো খবরকে শিশুর কাছ থেকে সরিয়ে রাখাটা সম্ভব ছিল। এই প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে যুক্ত। তাই সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি ভারী ভারী শব্দের সাথে তারা অনেক আগে থেকেই পরিচিত হয়েছে।
৩। সমানভাবে জয়ী হওয়ার মানসিকতা
কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবাই সমানভাবে জয়ী হওয়ার ব্যাপারগুলো আগে এতটা ছিল না। ফলে জেতার আনন্দের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পরবর্তী মানসিক সমস্যাকেও ভালোভাবে নেওয়ার মানসিকতা ছিল সবার। তবে বর্তমানে এই সহ্য ক্ষমতাও কমে এসেছে।
৪। কাজের ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়া
বর্তমানে নারী ও পুরুষ একে অপরের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করছেন। যে কোনো ব্যক্তি যত দ্রুত সম্ভব কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন। ফলে আয়ের উপায় যেমন বেড়েছে, তেমনই পারিবারিক সময় কমে গিয়েছে। এই অবস্থান থেকেও একজন মানুষের মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
৫। বাঁধাধরাহীন কর্মক্ষেত্র
কাজ বর্তমানে এমন একটা রূপ নিয়েছে যে, একজন মানুষ ছুটির দিনেও কাজ করেন। একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া, তাকে দিয়ে কাজ করানো এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে পড়েছে। ফলে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকার ফলে ব্যক্তি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়?
মানসিক এই সমস্যা বর্তমানে বেশ বড় ব্যাপার হয়ে উঠলেও আপনি এর সমাধান করতে পারেন খুব সহজেই। নিজের প্রতিটি দিনের সময়কে ভাগ করে ফেলুন। কাজ কতটুকু করবেন, কতটা সময় নিজেকে এবং পরিবারকে দিবেন তা ভেবে নিন।
সপ্তাহের একটা দিন ঘুরতে যান। বই পড়ুন এবং গান শুনুন। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
মোটকথা, উপরের যে সমস্ত কারণকে এই প্রজন্মের মানসিক সমস্যার পেছনে দায়ী বলে মনে করা হয়েছে, সেগুলোকে ধীরে ধীরে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি যেমন মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তেমনই সুস্থ থাকবেন শারীরিকভাবেও।
সূত্র- হেলথলাইন
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড