সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
'মুড সুইং' বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন কখনো বিরক্তির কারণ, কখনো হাস্যকর কোনো ব্যাপার। অন্তত, এখন পর্যন্ত মানুষ মানসিক এই সমস্যাটিকে খুব হালকাভাবে নিতেই অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যতটা সহজ এই ব্যাপারটিকে ভাবছেন, এটি কিন্তু ঠিক ততটা সহজও নয়। বরং, মানসিক অনেক সমস্যার মধ্যে মুড সুইং বেশ জটিল এবং কঠিন বিষয়। এটি বিভিন্ন কারণেই হতে পারে।
মানসিক যে সমস্যাগুলোর ফলাফল হিসেবে 'মুড সুইং' হতে পারে সেগুলো হলো-
বাইপোলার ডিজঅর্ডার
বাইপোলার ডিজঅর্ডার ঘটলে একজন মানুষের মানসিক অবস্থা খুব ভালো থেকে খুব খারাপে চলে যেতে বেশি সময় লাগে না। আর সেটিও অনেক দ্রুত, কোনো কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে, একজন মানুষ কয়েক মিনিট আগে খুব আনন্দ অনুভব করলেও কিছুক্ষণ পরেই তীব্র কষ্ট অনুভব করে থাকেন। এটি যেমন বছরে কয়েকবার হতে পারে, তেমনই একদিনেও কয়েকবার হতে পারে।
সাইক্লোথাইমিক ডিজঅর্ডার
সাইক্লোথাইমিক ডিজঅর্ডার অনেকটা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতোই। এ ক্ষেত্রেও একজন মানুষের মানসিক অবস্থা বদলাতে থাকে বারবার। তবে সেটি বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো ঘন ঘন দেখা দেয় না।
মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার
এমডিডি হলো তীব্র হতাশার ফলাফল। এ ক্ষেত্রে, একজন মানুষ অনেকটা সময় ধরে মানসিকভাবে কষ্ট ও হতাশায় ভুগে থাকেন।
ডিসথাইমিয়া
পারসিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার নামে পরিচিত এই মানসিক সমস্যাটিও তীব্র হতাশার কারণে হয়ে থাকে।
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের মধ্য থেকে কয়েকটি ধাপে একজন মানুষ বারবার মুড বদলে যাওয়ার সম্মুখীন হন।
ডিসরাপটিভ মুড ডাইসারগুলেশন ডিজঅর্ডার
এই সমস্যাটি সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়। বেড়ে ওঠার সময়ে তারা হুট করেই অত্যাধিক মানসিক আবেগে ভুগে থাকে।
এছাড়াও সিজোফ্রেনিয়া এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডারের কারণেও এমন মুড সুইং হতে পারে। এই সমস্যাগুলোর কারণ হিসেবে আরও কাজ করে-
হরমোন
হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মুড সুইং ঘটে থাকে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও নারীদের মধ্যে এই ব্যাপারটি বেশি হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে একের বেশি হরমোনও প্রভাব রাখতে পারে।
ওষুধ ও মাদক
কোনো একটি বিশেষ দ্রব্য, নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা মাদক সেবনের ফলে এমনটা হতে পারে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা
একজন মানুষ স্বাস্থ্যগতভাবে ভালো না থাকলে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, থাইরয়েড বা ফুসফুসের কোনো সমস্যা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে এটি শরীরের হরমোন এবং অন্যান্য দিকে প্রভাব ফেলে। ফলে হতাশা ও নানারকম মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে।
নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা
আপনি মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন বা না থাকেন, কিছু ঘটনা আপনাকে মানসিকভাবে অস্থির করে তুলতেই পারে। সেগুলো হলো- মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, জীবনে কোনো বড় রকমের পরিবর্তন, ঘুমের ভিন্নতা ইত্যাদি।
মানসিক এই সমস্যাকে দূর করবেন কীভাবে?
চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ দিতেই পারেন মুড সুইং-এর জন্য। তবে সেগুলোর চাইতে যে ব্যাপারগুলো বেশি কার্যকরী ফলাফল রাখে এ ক্ষেত্রে সেগুলো হলো-
১। নিজেকে পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসা। সময় ও কাজগুলোকে একটা পরিকল্পনার মধ্যে আনুন।
২। নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে করে আপনার শরীরের হরমোন সঠিকভাবে উৎপন্ন হবে। মানসিকভাবে আপনি সুস্থ থাকবেন।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো। কম ঘুমানো বা বেশি ঘুমানো- দুটোই আপনার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
৪। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। কারণ আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন সেটাও আপনার মানসিক অবস্থা কেমন হবে সেটাকে প্রভাবিত করে।
৫। মানসিকভাবে শান্ত থাকা। নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং ইয়োগার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে পারেন আপনি।
৬। নিজেকে প্রকাশ করা। হতাশা, রাগ বা কোনো সমস্যাকে নিজের ভেতরে ধরে রাখলে সেটি আপনাকে আরও বেশি কষ্ট দেবে। তাই, কথা বলুন। নিজেকে প্রকাশ করুন।
৭। মানসিক চাপ কম নেওয়া। চারপাশে নানাবিধ চাপ থাকবেই। তবে সেটাকে একটু হলেও আলাদা করে নিন। এই যেমন- কর্মস্থলের চাপকে সেখানেই রাখার চেষ্টা করুন।
এছাড়া, আপনার মুড সুইং-এর একটি জার্নাল রাখুন। কতক্ষণ এমনটা হচ্ছে, কী হচ্ছে, কীভাবে আপনি সেটা সামলাচ্ছেন ইত্যাদি লিখে রাখুন। এমন সব অবস্থাকে এড়িয়ে চলুন যেগুলো আপনাকে মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
আপনার সমস্যাটি হয়তো বাকিদের চাইতে আলাদা। তবে উপরের এই কৌশল, মানসিক শক্তি আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চললে এই সমস্যাকে জয় করতে পারবেন আপনি।
সূত্র- হেলথলাইন
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড