অধিকার ডেস্ক ১৬ জুলাই ২০১৮, ২২:৩৬
চুলের যত্নে শ্যাম্পুর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন করতে না পারলে চুলের ক্ষতি হয়। সবার চুলের গড়নও এক রকম হয় না। চুলের বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শ্যাম্পু তৈরি করেছিল। আর বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে এমন শ্যাম্পুও রয়েছে অনেক।
চলুন জেনে নিই বিশ্বজুড়ে কোন পনেরটি শ্যাম্পুর নাম ব্র্যান্ড শ্যাম্পু হিসাবে সেরা অবস্থানে রয়েছে আর কীভাবেই বা এ সকল কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল-
১। ব্রায়োজিও
ইতালিয়ান ‘ব্রায়ো’ অর্থ প্রাণবন্ত আর ল্যাটিন ‘জিও’ অর্থ প্রাকৃতিক। দুইয়ের সম্মিলিত নাম ব্রায়োজিও। ‘ব্রায়োজিও’র প্রতিষ্ঠাতা ন্যান্সি টোয়াইনের দাদী বাড়ির পেছনের উঠোনে চুল ও ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক লোশন তৈরির নানা উপকরণ চাষ করা হত এমনকি পারিবারিকভাবে নিজেদের রান্নাঘরে সাবানও তৈরি হত। সেখান থেকেই ন্যান্সির চুলের যত্নে শ্যাম্পু তৈরির আগ্রহ জন্মে। এরপর মাত্র ২৭ বছর বয়সে ওয়াল স্ট্রিটে নিজের সাত বছরের বিলাসী ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়ে স্বাধীন উদ্যোক্তার খাতায় নিজের নাম লেখান।
২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় এরপর ন্যান্সি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রায়োজিও’ নামের হেয়ারকেয়ার প্রতিষ্ঠানটি।
২। লাশ সলিড শ্যাম্পু
এই লাশ মানে কিন্তু মৃতব্যক্তি নয়। কিছুটা থিকথিকে আর কঠিন শ্যাম্পু বলেই এর এই শ্যাম্পুর এমন নামকরণ করা হয়েছে। সাবানের মত দেখতে এই সলিড শ্যাম্পু ভেজা চুলে ঘষে ঘষে ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন ফলের রস থেকে শুরু করে সামুদ্রিক লবণ, কলা সহ নানান ফ্লেভারে এই ন্যাচারাল শ্যাম্পু পাওয়া যায়।
মার্ক কন্সটেনটাইন নামের একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ও লিজ ওয়েইর নামের একজন সৌন্দর্যবিদের দেখা হয় ইংল্যান্ডের ডরসেটের একটি বিউটি সেলুনে। আর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই দু’জন মিলে ১৯৯১ সালে লাশ কসমেটিকস প্রতিষ্ঠা করেন।
৩। অব্রি অরগানিকস
‘অব্রি অরগানিকস’ এর প্রতিষ্ঠাতা অব্রি হ্যাম্পটন থাকতেন নিউইয়র্কে। আর সেই দেশের তীব্র শীতের হাত থেকে নিজের ত্বককে সুরক্ষা করতে নারিকেল তেলের সাথে ইউক্যালিপ্টাসের পাতা, স্থল আদা ও পুদিনাপাতা মিশিয়ে এক ধরণের তেল উদ্ভাবন করেন। যা তিনি ব্যবহার করতেন গোসলের পর।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘অব্রি অরগানিকস’। প্রতিষ্ঠার চার দশক পর, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪৫০০ টি নিজস্ব দোকানে অব্রি শ্যাম্পুসহ ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্ন হারবাল পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
৪। জিওভান্নি
হেয়ার স্টাইলিস্ট হওয়ার কারণে আর্থার গুইদোত্তিকে নানা কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করতে হত। আর এ কারণে তার হাতে যেন ফোস্কা পড়ে যাচ্ছিল। তাই নিজের ব্যবহার করা পণ্যে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের জন্য তিনি বিভিন্ন গবেষণা শুরু করেন।
এই গবেষণার ফলাফলস্বরূপ ১৯৭৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার বেভার হিলসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিওভান্নি’ কসমেটিকস। বর্তমানে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাচারাল হেয়ার কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে জিওভান্নি’র অবস্থান শীর্ষে।
৫। রেডক্যান
নিজেদের উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে ১৯৬০ সালে রসায়নবিদ জেরি রেডিং ও মডেল অভিনেত্রী পাউলা ক্যান্ট মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘রেডিং’। এই প্রতিষ্ঠানই প্রথমবারের মত প্রোটিন রিকন্ডিশনারের ধারণা উদ্ভাবন করে। প্রোটিন ভিত্তিক কসমেটিকস পণ্য এবং শ্যাম্পুর উদ্ভাবন তারাই করে।
৬। সানসিল্ক
সানসিল্ক শ্যাম্পুর যাত্রা শুরু হয়েছিল যুক্তরাজ্যে, ১৯৫৪ সালে। ইউনিলিভারে বর্তমানে এক নম্বরে অবস্থান করা এই শ্যাম্পুটি বাংলাদেশ, ভারত, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল এবং মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সর্বাধিক বিক্রিত শ্যাম্পু হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই শ্যাম্পু সেডা, এলিডর বা সেডাল নামেও পরিচিত।
৭। পল মিশেল
পল মিশেলে’র প্রতিষ্ঠাতা পল মিশেল ও জন পল ডিজোরিয়া। স্কটিশ আমেরিকান হেয়ার স্টাইলিস্ট এই দম্পতি ১৯৮০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করান। শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারি হিলসে তাদের সদর দপ্তর ছিল। পরবর্তীতে তা সেঞ্চুরি সিটিতে স্থানান্তরিত হয়।
পল মিশেলে’র শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও চুলের যত্নে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ছাড়াও বেশ কয়েকটি রূপচর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
৮। নেক্সাস
১৯৫৫ সালে লস এঞ্জেলসে ‘আলবার্টো কালভার’ নামের কসমেটিকস বিপণন প্রতিষ্ঠান করেন ব্লেইন কালভার। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন কিংবদন্তি হেয়ারড্রেসার ও রসায়নবিদ জেরি রেডিং। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে তারা নেক্সাস হেয়ার কেয়ার নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন।
গ্রিক শব্দ ‘নেক্সাস’র অর্থ ‘একসাথে বেঁধে ফেলা’। বিজ্ঞান আর প্রকৃতিকে একসাথে করার লক্ষ্যেই পণ্যটির এমন নামকরণ করা হয়েছিল। পাতলা ও ভঙ্গুর চুলের যত্নে প্রোটিন, ইলাস্টিন ও মেরিন কোলাজেন সমৃদ্ধ নেক্সাস শ্যাম্পুর বর্তমানে বেশ সুনাম রয়েছে।
৯। অ্যাভিনো
১৯৪৫ সালে রাইডেলি গবেষণাগারে ‘জনসন এন্ড জনসনের’ শাখা প্রতিষ্ঠান অ্যাভিনোর সূত্রপাত হয়েছিল।
এই প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হওয়া প্রসাধনী পণ্যগুলোতে ব্যবহৃত মূল উপাদান হল জই নামে এক ধরণের ছোট শস্যদানা। এই জইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম হলো অ্যাভিনা স্যাটিভা। সে অনুসারেই ব্র্যান্ডটির নাম দেয়া হয় অ্যাভিনো।
শ্যাম্পু ছাড়াও একজিমা, চিকেন পক্স, সানবার্নে আক্রান্ত ত্বকের শুশ্রূষার জন্য অ্যাভিনো’র বিভিন্ন ক্রিম রয়েছে।
১০। প্যানটিন
সুইজারল্যান্ডের ‘হফম্যান লারোচ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৪৭ সালে প্রো-ভিটামিন কমপ্লেক্স ফরমুলায় একটি বিশেষ শ্যাম্পু তৈরি করে। শ্যাম্পুতে মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল প্যানথেনল। আর এ থেকেই এর নামকরণ করা হয় প্যানটিন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, শ্যাম্পুটিকে প্রথমে স্বাস্থ্যপণ্য হিসেবে বাজারে আনা হয়েছিল! নব্বইয়ের দশকে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে প্যানটিন শ্যাম্পু শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল।
১১। গারনিয়ার
১৯০৪ সালে বিশ্বখ্যাত কসমেটিকস প্রতিষ্ঠান ‘লোরিয়েলে’র পণ্য হিসেবে গারনিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। শ্যাম্পু তৈরি হয় মূলত চুলের ধরণ বুঝে। কিন্তু গারনিয়ার শ্যাম্পু আবহাওয়ার তারতম্য অনুযায়ী দেশভেদেও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
১২। সুয়াভ
১৯৩৭ সালে হেয়ার টনিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরুর পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসায় শুরু করে ‘সুয়াভ’।
১৯৭০ সালে হেলেন কারটিস ইন্ডাস্ট্রি ও ১৯৯০ সালে ইউনিলিভার ‘সুয়াভ’কে কিনে নেয়। বর্তমানে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ছাড়াও লোশন, সাবান ও ডিওডরেন্টও প্রস্তুত করছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও কানাডায় সুয়াভের চাহিদা বেশি।
১৩। হারবাল এসেন্স
‘ক্লাইরোল হারবাল এসেন্স’ শ্যাম্পু নামে এই ব্র্যান্ডটি ১৯৭২ সালে চালু হয়। সোজা থেকে কোঁকড়ানো,ঘন থেকে ভঙ্গুর নানান রকমের চুলের যত্ন ও সুরক্ষার জন্য হারবাল এসেন্সের বিভিন্ন রকমের শ্যাম্পু রয়েছে।
১৪। নিউট্রোজিনা
নিউট্রোজিনা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জনসন এন্ড জনসনের অধিভুক্ত। ১৯৩০ সালে ইমানুয়েল স্টোলারোফ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। শ্যাম্পু ছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্ন পণ্য রয়েছে এই ব্র্যান্ডের।
মূলত দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলোতে নিউট্রোজিনার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
১৫। কেরাসটাস
ফ্রান্সের প্যারিসে লোরিয়েল গ্রুপের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ফ্রাঙ্কোস ড্যালি ১৯৬৪ সালে চুলের যত্নে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড কেরাসটাস প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্রান্সের পর ইউরোপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা কুড়ায় কেরাসটাস। এরপর ১৯৯০ সালে জাপানে ও ১৯৯৯ সালে উত্তর আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করে এই পণ্যটি।
ছেলে ও মেয়েদের সব ধরনের চুলের যত্নে কেরাসটাসের শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, স্কাল্প কেয়ার ও হেয়ার মাস্কের পণ্য রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড