• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইদ্রাকপুর দুর্গে একদিন

  শফিকুল ইসলাম মুন্না

২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৩৭
ছবি
ছবি : মুন্সিগঞ্জ জেলার ইদ্রাকপুর দুর্গ

ভ্রমণ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। এর জন্য প্রিয়ও মানুষের কাছে বকাও খেয়েছি। আমার ঘুরতে যাওয়া অথবা ভ্রমণ করতে যাওয়ার পেছনে যেকোনো একটা কারণ থাকে। সেটা হতে পারে ঐস্থান কেন্দ্রিক অথবা ইতিহাস কেন্দ্রিক।

স্থান কেন্দ্রিক বলতে কোনো বিনোদনের স্থান হতে পারে যেমন ফ্যান্টাসি কিংডম, ড্রিম হলিডে পার্ক। ইতিহাস কেন্দ্রিক বলতে তা হতে পারে মুঘলদের স্থাপনা অথবা ২৩০০ বছর আগের মহাস্থানগড় অথবা ২৫০০ বছর আগের উয়াড়ি বটেশ্বর। মহাস্থানগড় ও উয়াড়ি বটেশ্বর যাওয়া হয়নি। যাওয়ার ইচ্ছা আছে, সুযোগ পেলে যাবো।

ইতিহাস কেন্দ্রিক কোথাও যেতে আমার অনেক ভালো লাগে । যখন ঐ স্থানে হাঁটি তখন মনে হয় ২০০-৩০০ বছর আগে চলে গেছি। ২০০-৩০০-৫০০ বছর আগের স্থাপনার কারুকাজ, নির্মাণ কাঠামো এই সব আমাকে মুগ্ধ করে। একদিন বাংলাপিডিয়া পড়ার ছলে দেখলাম নারায়ণগঞ্জ জেলায় ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় মুঘলদের কিছু স্থাপনা আছে। সেগুলি হচ্ছে কিছু জল দুর্গ।

কেল্লাযেখানে সেনারা থাকতো ক্যাম্প করে এবং পানি পথে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এই দুর্গগুলি তৈরি করা হয়। মূলত মুঘল রাজধানী শহর ঢাকা অভিমুখে জলপথে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের অগ্রগতি প্রতিহত করার লক্ষ্যে দুর্গ গুলি নির্মিত হয়। এটি সম্ভবত বাংলার মুঘল সুবাদার মীরজুমলা কর্তৃক ১৬৬০-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মিত।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মধ্যে ৩টি দুর্গ স্থাপন করা আছে। তার মধ্যে হাজীগঞ্জ দূর্গ (এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত) ও সোনাকান্দা দুর্গ (হাজীগঞ্জ দুর্গের প্রায় বিপরীত দিকে এ দুর্গের অবস্থান)। এই দুটি দুর্গ নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত। এবং সবচেয়ে চমৎকার দুর্গটি হচ্ছে ইদ্রাকপুর দুর্গ, এটি মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।

ইদ্রাকপুর দুর্গটি দেখার জন্য ইমরান ভাইকে বললাম। ভাইয়া রাজি হয়ে গেল। যেই কথা সেই কাজ ৪জনের একটা টিম করে রওনা দিয়ে দিলাম ইদ্রাকপুরের উদ্দেশ্যে। (ভ্রমণে ছিলো ইমরান ভাই, নাদিম, সৌরভ এবং আমি)

প্রথমে আমরা চিটাগংরোড থেকে চাষারা পোঁছালাম। তারপর সিএনজি দিয়ে মুক্তারপুর ব্রিজ। ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় শীতলক্ষ্যার সৌন্দর্য অপূর্ব। পাশের কল-কারখানা ও সারি সারি লঞ্চ ও বালুর ট্রলারের আওয়াজ ও ঠান্ডা শীতল বাতাস উপভোগ না করলেই নয়। তার পর অটোরিকশায় করে দুর্গের সামনে। দুর্গের পাশেই ছিলো ১৮৯২ সালে তৈরি এ.ভি.জে.এম.সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১০০+ পুরানো বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত পায়। যদিও ভবন টি পরিত্যক্ত করা হয়েছে।

ভ্রমণটি ছিল এই বিগত বছরের পবিত্র আশুরার দিন। তাই ভিতরে ঢুকতে পারিনি বন্ধ ছিলো। বাহিরেই ঘুরেছি। ফিরে আসার সময় মুক্তারপুর ব্রিজের পাশের হোটেলে খাওয়া খিচুরি সেই মজা ছিলো।

এখন দুর্গের কথা-

ইদ্রাকপুর দুর্গ মুন্সিগঞ্জ সদরে অবস্থিত। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালের পশ্চিমপাড়ে এবং দেওভোগ গ্রামের পূর্বপ্রান্তে দুর্গটির অবস্থান। এই জল-দুর্গটি একসময় ইছামতী ও মেঘনা নদীর সংগমস্থলে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত হয়েছিল। তখন দুর্গের নির্মাণস্থলের নাম ছিল ইদ্রাকপুর। এ এলাকায় পরবর্তী সময়ে যে শহরটি গড়ে উঠে একসময় তার নামকরণ হয় মুন্সিগঞ্জ। শহরের উপকণ্ঠে এখনও ইদ্রাকপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। দুর্গটির চারপাশ এখন মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে এবং কোনো কোনো স্থানে মাটির স্তর দুর্গ প্রকারের প্রায় শীর্ষে উঠে গেছে। দুর্গটি উত্তর দক্ষিণে প্রসারিত এবং এর দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ মিটার ও প্রস্থ ৫৯.৬০ মিটার। দুর্গটিতে রয়েছে দুটি অংশ। এর প্রথম অংশ হলো শীর্ষভাগ খিলানকার ফোকর বিশিষ্ট মারলন শোভিত প্রাচীর বেষ্টিত উন্মুক্ত চত্বর। বেষ্টন প্রাচীরের চারকোণে রয়েছে শীর্ষভাগ মারলন শোভিত চারটি গোলাকার সন্নিহিত বুরুজ। বুরুজের গায়ে রয়েছে বন্দুকে গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর।

মোঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য কীর্তি হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি ১৯০৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। আপনিও ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড