নিশীতা মিতু
ছোটবেলায় পড়া সেই ‘রাজার অসুখ’ গল্পের কথা মনে আছে? সেই যে রাজার অসুখ হলো, কিছুতেই সারছিল না। শেষ অব্দি জানা গেল এমন ব্যক্তি যার কোনো ভাবনা নেই, যার মুখে সবসময়ই হাসি লেগে আছে, সে সর্বদাই খুশি— এমন ব্যক্তির গায়ের পোশাক রাজার গায়ে জড়ালেই সুস্থ হবেন রাজা।
কিন্তু এমন মানুষ আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ অব্দি একজনকে পাওয়া গেল যে কি না গাছের তলায় বসে আনন্দে গান করছে। তার জীবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই, সুখের কোনো কমতি নেই। অথচ তার পরনের পোশাকও নেই।
বাস্তব জীবনে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু চাওয়া-পাওয়া। নিজের স্বপ্নগুলোকে ছুঁতে অবিরাম পরিশ্রম করি আমরা। অন্যকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাই নিজের লক্ষ্যের দিকে। সবকিছু মিলিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের। বিজ্ঞানীরা যাকে বলে থাকেনো- ‘স্ট্রেস অব সারভাইভ’।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্ট্রেস নিয়ে চিন্তাভাবনার উদয় ঘটেছিল পঞ্চাশের দশকের দিকে। ১৯৫৫-’৫৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিধানে যুক্ত হয় এই স্ট্রেস শব্দটি। বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এই স্ট্রেস অবশ্যম্ভাবী। জীবন যেখানে রয়েছে সেখানে চাপ তো থাকবেই। মানসিক চাপ বা স্ট্রেসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- পজিটিভ ও নেগেটিভ।
পজিটিভ স্ট্রেস কোনোগুলো? এই যেমন পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করা, নিজের পেশার প্রতি দায়িত্ববোধ থাকা, কিছু শেখার জন্য তৎপর হওয়া ইত্যাদিকে বলা যায় পজিটিভ বা ভালো স্ট্রেস। অন্যদিকে নেগেটিভ স্ট্রেস বলতে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, রাগ, ক্রোধ এসবকে বোঝানো হয়।
এবার চলুন একটু বিশ্লেষণে আসা যাক, কেন আপনার জীবনে এত বেশি স্ট্রেস ভর করে। ধরুন, সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দেখলেন আপনার পাশের বাড়ির ছেলেটি দারুণ ফলাফল করেছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেল আপনার মানসিক চাপ। আপনার সন্তানের ছবি পত্রিকায় না এসে কেন ওই ছেলের ছবি এসেছে! কিংবা ধরুন আপনার প্রতিবেশি নতুন গাড়ি কিনেছে। সঙ্গে সঙ্গে পরশ্রীকাতরতা ঘিরে ধরল আপনাকে। ওদের কেন এত কিছু থাকবে। আপনারও ওসব চাই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, জীবনের সবচেয়ে বড় স্ট্রেস হলো পরশ্রীকাতরতা। পাশের বাড়ির লোকটি কেন নতুন ফ্ল্যাট কিনল, বোনের ছেলে কেন নামিদামি স্কুলে চান্স পেল, অল্প বয়সে কেন এত দ্রুত ব্যবসায় সফল হলো, তমুকের স্বামী তাকে এত দামি উপহার দেয় কেন— আমাকেও সব পেতে হবে, যেভাবেই হোক— এমন ভাবনাগুলোই আসে নেগেটিভ স্ট্রেস থেকে আর যার মূলে রয়েছে পরশ্রীকাতরতা।
তাহলে উপায় কী? সুখী থাকতে চাইলে আপনাকে নিজের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। কোনটি পজেটিভ স্ট্রেস আর কোনটি নেগেটিভ তা নিজেকেই বুঝতে হবে। মনে রাখবেন, ভালো চিন্তা জীবনে উন্নতি বয়ে আনে আর ঈর্ষা দেয় কেবল মানসিক অশান্তি।
অন্যের জীবন নিয়ে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজের জীবন কী করে আরও গোছানো, আরও পরিশুদ্ধ করা যায় তা নিয়ে ভাবুন। কে কী করল তা দিয়ে নিজেকে বোঝাবেন না। আপনার লড়াই হোক কেবল আপনার সঙ্গেই। নিজের পথে হাঁটাই হলো স্ট্রেস কাটানোর সবচেয়ে সহজ উপায়।
তথ্যসূত্র- ডা. সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড