• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাংলা একাডেমিতে চলছে বৈশাখী মেলা

  সৈয়দ মিজান

১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৩৬
বাংলা একাডেমী
বাংলা একাডেমিতে চলছে বৈশাখী মেলা। (ছবি : দৈনিক অধিকার )

বাংলা একাডেমির গেট দিয়ে ঢুকেই দেখা গেল একজন ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছেন। গরমে তৃষ্ণা নিবারণ করতে অনেকেই ভিড় করে আছেন ভ্যানের চারপাশে। গনগনে রোদেলা দুপুর। পুরো বাংলা একাডেমি এই সময়টাতে নির্জীব থাকে। কিন্তু গত পয়লা বৈশাখ থেকে বৈশাখী মেলা শুরু হওয়ায় গ্রীষ্মের দুপুরেও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে আছে।

মেলা

মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

একটু সামনে এগোতেই দেখা গেল নানান রকম বাহারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেক স্টল। প্রথমেই দেখা গেল বাংলা একাডেমির নিজস্ব বইয়ের দোকান। বইয়ের দোকানে খুব একটা ভিড় দেখা গেল না। আরও একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা মিলল হাতে তৈরি গহনা নিয়ে বসেছেন একজন। স্টল জুড়ে দেখা গেল হাতের নকশা করা শড়ি থেকে ওড়না পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। কথা হলো বিন্যাস এর স্বত্ত্বাধিকারী জোবাইদা লাবণীর সাথে। জানালেন, মেলা শুরু হয়েছে পয়লা বৈশাখ। চলবে এপ্রিলের ২৪ তারিখ পর্যন্ত। জানতে চাইলাম, কেমন হচ্ছে বেচাবিক্রি? মৃদু হেসে বললেন, 'বিকাল হলেই বিক্রি বাড়ে। দুপুরের রোদে কেউ বের হতে চায় না।'

তার স্টল ছেড়ে একটু সামনে এগোতেই দেখি কয়েকজন তরুণী একটি স্টলে পণ্য সাজাচ্ছেন। বেশিরভাগই হাতে ডিজাইন করা গহনা। কথা বলে জানা গেল তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী কয়েকজনের ফেসবুকে পেইজ আছে। সবাই মিলে মেলায় এই স্টল দিয়েছেন। এক পেইজের কারিগর অনামিকা দাস জানালেন, তিনি পড়ালেখা করছেন চারুকলা অনুষদের সিরামিক্স ডিপার্টমেন্টে। তাই তার বানানো গহনাগুলোতেও রয়েছে সিরামিকের ব্যবহার। দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে বললেন, 'আমাদের স্টলে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা দামের পণ্য রয়েছে।'

মেলা

বাঁশ বেতের অনেক পণ্যও পাওয়া যাবে মেলায়। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পুরো মেলা ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ স্টলেই তাদের নিজেদের বানানো পণ্য নিয়ে বসেছে। হাতের কাজের বেশ কদর দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যেও। পুরান ঢাকা থেকে মাহমুদা খাতুন এসেছেন মেয়েকে জান্নাতুন নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে। মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনেছেন। বললেন, 'প্রতি বছরই এই মেলায় আসি। অনেক বড় পরিসরে মেলায় হওয়ায় এখান থেকে অনেক কিছুই কিনি। ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে জিনিস পছন্দ করা যায় এখানে।'

মেলা

নানান স্বাদের খাবার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন অনেকে। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

তবে দুপুরের রোদে তেমন ক্রেতা না থাকলেও মেলা ঘুরতে আসা মানুষের কোনো কমতি ছিল না। সাবিনা টুম্পা নামের একজনের সাথে কথা হলো। জানালেন, পড়ালেখা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে। ক্লাসের ফাঁকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন মূলত কিছু পছন্দ করতে। মেলার শেষের দিকে কিনবেন বলে জানালে তিনি।

বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ের দিকে বেশ কিছু গাছ আছে। ওদিকটায় বেশ ছায়া। ক্রেতা-দর্শকদের ভিড়টাও তাই ওখানে বেশি। কাজী ফ্যাশন হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী কাজী মাজহারুল হকের সাথে কথা বলে জানা গেল, মেলায় বিক্রির চেয়ে প্রচারের জন্য আসেন প্রতি বছর। এখান থেকে প্রতি বছর বেশকিছু ভালো ভালো অর্ডার আসে যার জন্য বিক্রি কম হলেও কোনো সমস্যা হয় না।

মেলা

ঘর সাজানোর অনেক সামগ্রীই পাবেন এই মেলায়। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

শোলার তৈরি নানান পণ্যের সমাহার দেখা গেল বর্ধমান হাউজের পাশেই। শোলা শিল্পী নিখিল মালাকার জানালেন, তারা মাগুরায় জেলার শতপড়া থেকে এসেছেন। এক সময় শোলা শিল্পের বেশ কদর থাকলেও প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের জন্য এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্য কোনো পেশায় যেতে পারছেন না বিধায় বংশ পরম্পরার এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন অনেক কষ্ট করে।

মাটির নানান তৈজসপত্রেরও দেখা মিলল মেলায়। প্লেট থেকে শুরু গ্লাস, হাড়ি পাতিল সবই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। ৫০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যায় এইসব পণ্য।

মেলা

মাটির তৈরি তৈজসপত্র পাওয়া যাবে সুলভেই। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নকশি কাঁথার পসরা সাজিয়ে বসেছেন হোসনে আরা বেগম। নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি এই মেলায় যোগ দিয়েছেন। নানান ডিজাইনের নকশি কাঁথা বানিয়েছেন নিজের হাতেই। দামও রেখেছেন সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই।

মেলায় শীতল পাটি, তাঁতের তৈরি কাপড়, হাতে বোনা কার্পেট, বাশ-বেতের পণ্য, নানান স্বাদের খাবার আর বাদ্য যন্ত্রের দোকান নিয়ে বসেছেন অনেকে।

মেলা

মেলায় বায়োস্কোপ এবং পুতুল নাচ দেখার সুযোগ আছে। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাংলা একাডেমির আমগাছের তলে একজন বসেছেন বাঁশের তৈরি নানা রকম পণ্য নিয়ে বসেছেন। নাম জানালেন নারায়ণ। মেলায় কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে বললেন, 'গতবারের চেয়ে কম। মেট্রোরেলের জন্য বাংলা একাডেমির সামনে রাস্তাতে মানুষজন খুব কম চলাচল করে। তাই অনেকে জানেই না এখানে মেলা হচ্ছে।“

মেলা

মেলায় মিলবে হাতে তৈরি গহনা। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মধুসূদন দে বসেছেন মূল মেলা থেকে একটু দূরে। তার স্টলের সামনে শিশুদের একটা জটলা দেখা গেল। নানারকম হাড়ি পাতিল এবং বাচ্চাদের খেলনার পসরা সাজিয়েছেন তিনি। জানালেন, 'আরেকটু প্রচার হলে মেলায় মানুষের আগমন বাড়বে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মেলায় মানুষ আসছে অনেক কম।'

বাংলা একাডেমি চত্বরের মেলা ১৪ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা।

ওডি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড