• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আসমানে পাখা মেলে...

  শেখ কান্তা রেজা

০৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:২৮
প্যারাগ্লাইডিং
পাখির মত পাখনা মেলে উড়ি। (ছবি : লেখক )

সারাংকোটে তখন ভোর পাঁচটা, আস্তে আস্তে পুবের আকাশের অন্ধকার কাটছে, কালোর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে হালকা কমলা আলোর রেখা। মানুষ ভিড় জমিয়েছে সূর্যোদয় দেখবে বলে। আমি দাঁড়িয়ে আছি আরেকটু উত্তরে। অন্নপূর্ণার শিখরে একটু একটু করে আলো খেলছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছি সেটা। সারাংকোট নেপালের পোখারার একটা পাহাড় অধ্যুষিত অংশ। বিভিন্ন ছোটবড় পাহাড় ছড়িয়ে আছে এখানটায়।

সূর্যোদয় দেখার লোভেই মূলত ভ্রমণপিয়াসু মানুষ ভিড় জমায় সারাংকোটে। তবে এখানকার আরেকটা বড় আকর্ষণ হলো প্যারাগ্লাইডিং। পাহাড়ের মাথা থেকে দক্ষ পাইলটের সাহায্যে প্যারাস্যুট নিয়ে শূন্যে অবস্থান করাটাই প্যারাগ্লাইডিং। প্যারাগ্লাইডিং করতে সব থেকে বেশি আগ্রহী হয় রোমাঞ্চ পছন্দ যাদের তারা। তবে আজীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য অনেকে পরীক্ষামূলকভাবেও প্যারাগ্লাইডিং করেন।

পোখারা

ফিওয়া লেকের পাড় ধরে হাঁটতে বেশ ভালই লাগছিল। (ছবি : লেখক )

দুইদিনের পোখারা ভ্রমণের প্রথম দিনে মহেন্দ্র গুহা, বাদুড় গুহা, বারাহি মন্দির, ৩৫০০ ফুট উপরে পাহাড়ের মাথার পিস প্যাগোডা দেখে সমতলে এসে হোটেলে রাত্রিযাপন করেছি আমরা। খুব সহজেই লেকসাইডে কম খরচে উন্নতমানের হোটেল পাওয়া যায় এখানে।

প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য অনেক সংস্থা আছে পোখারাতে। এগুলোর মধ্যে পোখারা প্যারাগ্লাইডিং, বুদ্ধা প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং এজেন্সি অন্যতম। প্যারাগ্লাইডিং করতে আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়। দিনের তিনভাগে প্যারাগ্লাইডিং হয়। সকাল ৯টা, দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা। তবে সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে আবহাওয়া এবং বাতাসের গতিবেগের উপরে। যত বেশি সংখ্যক মানুষ একসাথে প্যারাগ্লাইডিংয়ের বুকিং দেবে তত কম খরচে বুকিং করা যাবে। সাধারণত ওরা ৫৫০০ থেকে ৭০০০ নেপালি রুপি পর্যন্ত চায়। একটু দরদাম করলে ৪০০০-৪৫০০ নেপালি রুপিতে বুকিং করা যায়। আমরা তিনজন মেয়ে আর একজন ছেলের টিম করেছিলাম, ৪৭০০-৫০০০ নেপালি রুপি করে পড়েছিল। এই টাকার মধ্যে হোটেল থেকে নির্ধারিত স্থানে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, আকাশে ওড়ার সময়ের ৫-৭ মিনিটের ভিডিও এবং ১০০ এর মত ছবি অন্তর্ভুক্ত থাকে। ওদেরই অ্যাকশন ক্যামে ছবিগুলো তোলা হয়। আকাশে ওড়ার সময় ২৫-৩০ মিনিট, নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর।

প্যারাগ্লাইডিং

শুরু হয়ে গেল আকাশে উড়াউড়ি। (ছবি : লেখক )

এবার আসি মূল অংশে। নির্ধারিত দিনে আমাদের ঠিক ১২টায় হোটেল থেকে গাড়ি দিয়ে সারাংকোটে প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি যে জায়গা থেকে সূর্যোদয় দেখা যায় তার থেকেও উঁচুতে, খাড়া রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। আমরা যেহেতু ভোরে সূর্যোদয় দেখেছি তাই প্যারাগ্লাইডিং এর শিফট নিয়েছিলাম দুপুর বারোটায়। পৌঁছে দেখি আকাশে উড়ছে রঙ বেরঙের প্যারাস্যুট। পাইলট আমাকে প্যারাস্যুটের সাথে অ্যাজাস্টেবল পোশাক পরিয়ে দিল এবং দেখিয়ে দিল কখন হাঁটতে হবে, কখন দৌঁড়তে হবে, কখন একবারে বসে পড়া যাবে না এবং কখন বসতে হবে।

সমস্ত প্রস্তুতি শেষে অপেক্ষা বাতাসের জন্য। এদিকে অন্নপূর্ণার মাথায় হালকা মেঘের আভাস। তবে কিছুক্ষণ পর মেঘ কেটে সুন্দর বাতাস বইতে আরম্ভ করল। ঠিক তখনই পাইলট আমাকে প্রথমে হাঁটতে, তারপর দৌঁড়াতে এবং শেষে পা উঠিয়ে রাখতে বললো। দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মাথায় আমি নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করলাম। নিচে বিস্তৃত পাহাড়, পাদদেশে ফিওয়া লেক, আমার বরাবর অন্নপূর্ণার চূড়া এবং হাড় হিম করা বাতাস।

প্যারাগ্লাইডিং

মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম নিচের পৃথিবীটাকে। (ছবি : লেখক )

আস্তে আস্তে থার্মালের নিয়ন্ত্রণ ঘটিয়ে পাইলট আমাকে উপরে ওঠাতে থাকলো। এরই মধ্যে আমার হাতে সেলফি স্টিকে দেয়া হয়েছে ক্যামেরা যা অটো ভিডিও হয়, ৫-৭ মিনিট ভিডিও হবার পরে সেকেন্ডে একটা করে ছবি ওঠে ১০০ সেকেন্ড পর্যন্ত। এই ১০০ সেকেন্ড আপনি নিজের ইচ্ছামত ভাগ করে নিতে পারেন। তবে আমি ভিডিও শেষ কয়েকটি ছবি তুলে শুধু উপভোগ করেছি সবটা। পায়ের নিচে গোটা পৃথিবী, নীল জলের লেক, দূরে অথচ কাছে মনে হওয়া হিমালয়, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। প্রায় ৩০ মিনিটের এই সময়টা আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের সেরা অর্জন। কারণ পদে পদে আমি অনুভব করেছি জীবন কতখানি সুন্দর।

তবে, যারা প্যারাগ্লাইডিং করতে চান তাদের জন্য কিছু সতর্কবার্তা। ১. হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকলে প্যারাগ্লাইডিং করবেন না।

২. পাহাড় থেকে শূন্যে ভাসার সময়টাতে অনেকের বাতাসের চাপে নাক বন্ধ হয়ে যায় বা শ্বাসকষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সাথে সাথে পাইলটকে জানাতে হবে।

৩. ঝুঁকি অবশ্যই আছে, কারণ পাহাড় থেকে টেক অফ করে ল্যান্ডিং হয় ফিওয়া লেকের পাড়ে, এই সময়টাতে বাতাসের অবস্থা খারাপ থাকলে মৃত্যুর সম্ভাবনাও রয়েছে।

৪. অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত মোটামুটি আবহাওয়া ভাল থাকে, এর পর থেকে ঝড়-বৃষ্টি চলতে থাকে, তখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।

তবে, যারা আমার মত ঝুঁকি এবং অতিমাত্রায় রোমাঞ্চ পছন্দ করেন তাদের জন্য প্যারাগ্লাইডিং একটি দারুণ বিনোদনের মাধ্যম হবে। বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে বা আকাশপথে কাঠমান্ডু যান, সেখান থেতে সড়কপথে ৬ ঘণ্টা লাগে পোখারা যেতে, তারপর উপভোগ করুন পৃথিবীর সৌন্দর্য। হিমালয়ের সাথে এক উচ্চতায় ভাসুন, নিজেকে রাজা ভাবুন, যেমন ইচ্ছা তেমন সময় কাটান।

ওডি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড