নাবিলা বুশরা
বন্ধুদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছেন অথবা বের হয়েছেন শহর ঘুরতে। নিত্যদিন নতুন নতুন মানুষ, নতুন নতুন জায়গায় যেতে হচ্ছে কাজের প্রয়োজনে অথবা মনের রসদ যোগাতে। আর সাথে নিয়ে যাচ্ছেন ফেলুদা, শংকু, আফ্রোদিতি, সত্যজিত রায় অথবা শার্লক হোমসকে। কিংবা সাথে রয়েছে শাপলা, পদ্ম, গাড়ি, রিকশা অথবা পছন্দের বিশেষ কোনো চরিত্র। আপনার হাতের আঙুলের ফাঁক গলে অথবা গলায় শোভা পাচ্ছে তারা। বলছিলাম আরুনিকার কথা। যে চরিত্র বা জিনিসগুলোর কথা বলছি সেগুলো মূলত আরুনিকার গয়না।
হাতের বালা, গলার মালা অথবা আঙুলের আংটি, টি শার্ট, মগ, ডায়েরি সব কিছুতেই আরুণিকা চেয়েছে একটু ভিন্ন ছোঁয়া রাখতে। অন্যরা হয়ত ভাবে কিন্তু আরুনিকা সব ইতোমধ্যে ফুটিয়ে তুলেছে নিজেদের কাজে।
২০১৬তে পথচলা শুরু করা আরুনিকার দেখতে দেখতে দুই বছর হয়ে গেলো। এ সময়ের মাঝে আরুনিকা পেয়েছে অনেক ভালো গ্রাহক। তাদের কাজের পরিধি বেড়েছে। এক ধরনের ভাবনা থেকে বের হয়ে তারা এখন অনেক কিছু নিয়ে কাজ করছে।
আরুনিকার পথচলা নিয়ে জানতে চাইলে পেইজের কর্ণধার অরুণিতা ঘোষাল বলেন, কীভাবে পথ চলা শুরু তা ভেবে দেখতে গেলে ছোটবেলা থেকেই শুরু করতে হয়। নিজের হাতে কিছু বানিয়ে ভাই-বোন,বন্ধু,প্রিয় মানুষদের দেওয়াটা একরকম শখ ছিল।তখন মফস্বলে তো এত কিছু পাওয়া যেত না, জানতামও না বেশি কিছু। জামা,জুতা থেকে পড়ে যাওয়া পুঁতি,পাথর কাগজে বসিয়ে বা সেলাইয়ের সুতায় গেঁথে টুকটাক বানাতাম। ভার্সিটিতে উঠতে উঠতে এরপর অনেক রকম ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে জানলাম, সব কিছু টুকটাক কিনে জমালাম।
ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ম্যাটেরিয়াল কালেক্ট করার জন্য মূলত একটা ক্রাফট ম্যাটেরিয়াল সেলিং গ্রুপ শুরু করি। হাতে টাকা-পয়সা বলতে শুধুই ৩০ টাকা ছিল। বাসা থেকে চাওয়া কিংবা নিজের শখের জন্য মায়ের টাকা নষ্ট করার ইচ্ছা ছিল না একদমই। তাই ওই ৩০ টাকা দিয়েই শুরু। ভাল ম্যাটেরিয়াল পাওয়ায় তখন থেকেই গয়না বানানো শুরু করি। পরিচিত মহলে প্রশংসা, উৎসাহ পেয়ে ২০১৬র ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরুণিকার পথচলা শুরু হয়।
আজিমপুর হোম ইকোনোমিক্স কলেজে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন অরুণিতা। কাজের জন্য সাথে বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন বন্ধু ডেভিডকে। টেকনিক্যাল, ম্যানেজমেন্ট আর ডেলিভারির দিকটাতে বন্ধু ডেভিড সাহায্য করে। ডেভিড শপের এই কাজগুলো ছাড়াও সব সময় উৎসাহ,অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকে। তাই আরুনিকার কথা বললে ডেভিডের কথা সবার আগে আসে বলে জানান অরুণিতা। ডেভিড পাশে না থাকলে হয়ত আজকের আরুনিকার পথচলাটা এত সুন্দর হত না। ডেভিড পড়ছেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ৫ম বর্ষে।
আরুনিকার কাজ মূলত কাঠের,হাতে তৈরি নানা রকমের গয়না নিয়ে। পাশাপাশি তারা বেশি কাজ করে চাবির রিং,নোটবুক,স্কেচবুক,টিশার্ট, মগ এসব তৈরি করি।দেশি,বিদেশি চিত্রকলা নিয়ে।
স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করলেও গ্রাহকদের কেমন ভালোবাসা পেয়েছেন জানতে চাইলে অরুণিতা জানান, আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি কারণ যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই আরুনিকা গ্রাহকদের অনেক সমর্থন ও ভালবাসা পেয়েছে। তাদের জন্যই আরুনিকা নিয়ে এতদূর আসতে পেরেছি এত কম সময়ে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের উপর ভরসা রাখার জন্য।
আরুনিকাকে নিয়ে ভবিষ্যত ভাবনা কী এমন প্রশ্নের জবাবে অরুণিতা বলেন, অনলাইনে কাজ করাটাকে এতদিন প্রাধান্য দিয়েছি কারণ অফলাইনে কাজ করতে অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও সময়ের কথা বিবেচনা করতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি সেটা খুব কঠিন হয়ে যায়। তাই অনার্স শেষ হবার পর ইচ্ছা আছে সব ঠিক থাকলে ছোট পরিসরে একটা শোরুম খোলার,আরুনিকার পরিসর আরো বড় করার, বাংলাদেশের কুটির শিল্পকে নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করার ইচ্ছা আছে। পাশাপাশি অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে,যেমন যাদের আমরা হিজড়া বলি তাদের কোনোভাবে হাতের কাজের সাথে যুক্ত করে আরুনিকার মাধ্যমে সম্মানজনক স্বাধীন রোজগারের উৎস তৈরি করে দেওয়ার ইচ্ছাটাই বেশি।
আরুনিকার অসাধারণ এই কাজ আরও এগিয়ে যাক। তাদের জন্য রইলো 'দৈনিক অধিকার' পরিবারের পক্ষ থেকে অসংখ্য শুভকামনা।
'আরুনিকা' পেইজের লিংক: https://www.facebook.com/aarunikaa/
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড