• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘স্ত্রীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ভয়’- কতটা যুক্তিযুক্ত?

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪২
সম্পর্ক
ছবি : প্রতীকী

প্রেক্ষাপট ১- রাহাত আর শর্মিলির বিয়ের বছরখানেক পার হয়েছে। প্রেমের বিয়ে। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা আছে দুজনেরই। শর্মিলি গোছালো মেয়ে। ঘর গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে সে। চায় রাহাত যেন আরও একটু সামাজিক হয়ে ওঠে। দিনশেষে বাড়ি ফিরে সবকিছু গোছালোভাবে পেতে ভালো লাগে রাহাতেরও। নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস নেই তার। তবু শর্মিলি তাকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। মনে মনে খুশি হয় সে।

কিন্তু, ভোগান্তিও কম পোহাতে হয় না তাকে। শর্মিলির ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ এর একটা বড় তালিকা আছে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। রাহাত পুরোটা মনে রাখার চেষ্টা করে। তবে মনে রাখা সম্ভব হয় না। কিছু না কিছু ভুল হয়ে যায়। নতুন নিয়ম জারি হয়।

একটা সময় এই নিয়ম মনে রাখতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়লো রাহাত। মনে হলো, শর্মিলি তাকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। ব্যাচেলর জীবনেই যেন ভালো ছিল সে। শর্মিলির চাওয়া বেশি না। কিন্তু সেই চাওয়া পূরণ করতে পারে না রাহাত। নিজেকে খুব খারাপ সঙ্গী মনে হয় রাহাতের।

প্রেক্ষাপট ২- সেলিম আর নিকিতার সম্পর্ক অনেক বছরের। তারা খুব ভালোবাসে একে অন্যকে। নিকিতার ঘর সংসারে মন নেই। একটু অগোছালো থাকতে ভালো লাগে সেলিমেরও। কিন্তু সেলিমের ছোটোখাটো ব্যবহারে কষ্ট পায় নিকিতা। নিকিতার আবদারগুলো খুব ছোট। একটু রাস্তার পাশে হাঁটতে ইচ্ছে করে নিকিতার। হুট করে আইসক্রিম খেতে মন চায়। নিকিতা চায় সেলিম তাকে দিনে কয়েকবার ফোন করুক, খোঁজ নিক।

সেলিম যে নিকিতার আবদার পূরণ করতে চায় না তা না। কখনো কখনো হাঁসফাঁস লাগে তার। মাঝেমধ্যে ফোন দিতে ভুলে গেলে প্রচন্ড রেগে যায় নিকিতা। এর আগে সেলিম কী কী করেছে সেগুলোকে বৃথা চেষ্টা বলে মনে হয় সেলিমের। সম্পর্কের ঝামেলাগুলোও হয় এসব থেকেই।

উপরের দুটি কেস স্টাডিতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের মানুষ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তবে, মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যেকোন সম্পর্কে, বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ‘অভিভাবক-সন্তান’ ধরণের রূপটি বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে, সম্পর্কে একজন অভিভাবকের মতো ব্যবহার করে থাকেন। যিনি অনেকটা ধৈর্য্যশীল ও দায়িত্বশীল হন। অন্যদিকে, অপরজন হয়ে থাকেন অনেকটা রাগী, বিরক্ত ও একগুঁয়ে সন্তানের মতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সন্তানের ভূমিকা স্বামী পালন করেন।

আর এর কারণ হিসেবে কাজ করে পুরুষের নারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ভয়। চেতন বা অবচেতনভাবে পুরুষের মনে এই ভয়টি কাজ করে। অনেকেই ব্যাপারটিকে রাগ বা বিরক্তি বলে প্রকাশ করেন। তবে রাগ বা বিরক্তির চাইতে ভয় এক্ষেত্রে কাজ করে সবচাইতে বেশি। পুরুষ সবসময় অন্য কারও সাহায্য ছাড়া কাজ করতে, নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পছন্দ করে। অন্তত, এমনটা ভাবতে পছন্দ করে। তবে সেটা কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই পুরোপুরি সম্ভব হয় না। এই কথাটি বুঝতে পারলেই পুরুষ তার সঙ্গীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ভয় পান।

অন্যদিকে, সম্পর্কের অসন্তুষ্টি প্রাথমিকভাবে আসে নারীর কাছ থেকে। এই আবেগ একটা সময় পুরুষের ভেতরেও চলে যায়। ফলাফল দাঁড়ায় অসুখী একটি সম্পর্কের। যেখানে হয়তো নারী ও পুরুষ দুজনেই দুজনকে ভালবাসেন। তবে, তারা একে অন্যের সাথে কীভাবে থাকতে হবে সেটা জানেন না। পুরুষ এক্ষেত্রে নিজের জীবনে নারীর কারণে আসা পরিবর্তনগুলোর ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে ভুলে যান।

এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে, একজন পুরুষের একটা সময় পর পর শোনার প্রয়োজন পড়ে যে, সে অনেক ভালো করছে। তাকে যে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না, পরিবর্তনের যে ভালো দিক আছে সেটা তাকে জানানোর দরকার পড়ে। অন্যথায়, সবকিছু জানার পরেও নিজেকে নিয়ন্ত্রিত ভাবেন পুরুষ। তৈরি হয় মানসিক সমস্যার। সম্পর্কের সমস্যাগুলোও শুরু হয় এখান থেকেই।

মূল লেখক- আব্রাম ওয়েইস, সাইকোথেরাপিস্ট

সূত্র- সাইকোলজি টুডে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড