• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্লে দিয়ে কাজ করাতেই নাবিলার আনন্দ

  নাবিলা বুশরা

০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:৫২
রঙিন কাগজ
ক্লে দিয়ে নাবিলার হাতে বানানো অসাধারণ কিছু কাজ

ছবিতে দেখা কোন খাবারটা খেতে ইচ্ছে করছে আপনার? পিজ্জা, বার্গার, ফুচকা, কেক, পুডিং, পাস্তা নাকি কুকিজ? বেছে নিন আপনার যেটাই খুশি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলো শুধু আপনার বেছেই নিতে হবে, খেতে পারবেন না কিন্তু! কারণ এগুলোর কোনোটিই যে সত্যিকারের খাবার নয়! ক্লে দিয়ে বানানো অসাধারণ হাতের কাজ এগুলো। আর দারুণ এই কাজগুলোর কারিগরের নাম নাবিলা আনোয়ার।

ভিন্ন ঘরানার এই জিনিসগুলো বানানো নিয়ে কথা হচ্ছিল নাবিলার সাথে। কীভাবে শুরু করেছিলেন ক্লে’র কাজ- এ প্রশ্নের জবাবে নাবিলা বলেন, ‘ক্লে নিয়ে বর্তমানে কাজ করলেও আমার প্রথম কাজ ছিল কাগজ নিয়ে। ছোট থেকেই হাতের কাজ করতে ভালোবাসতাম। কারো জন্মদিন বা বিশেষ দিন আসলেই নিজ হাতে গিফট বানিয়ে দিতাম। নিজের ঘরের জন্যও অনেক কিছু বানিয়েছি।

পরিবারের সবার মধ্যে আমার হাতের কাজের জন্য অনেক সুনাম আছে। ঠিক এভাবেই ২০১৭ সালের প্রথম দিকে কাছের একজন মানুষের জন্য গিফট বক্স বানাই। সেটা দেখে সে বললো, ‘তুমি এতো ভালো কাজ করো তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করো না কেন? সবাই জানুক তোমার এই প্রতিভা।’

তার কথায় ২টা গ্রুপে কাজ শেয়ার করলাম। অনেক বেশি সাড়া পেয়ে যাই। সাথে কাজের অর্ডারও। তবে তখনো ইচ্ছে ছিলো না এটা নিয়ে ব্যবসা করার। কিন্তু অনেকেই খুব রিকোয়েস্ট করে কাজটা শুরু করালো। এপ্রিল ২০১৭ তে নিজের কাজকে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘রঙিন কাগজ’ নাম দিয়ে একটা পেইজ খুললাম।

নাবিলা

রঙিন কাগজের কর্ণধার নাবিলা আনোয়ার

প্রথমে শুধু কাগজ নিয়ে কাজ করতাম সেই হিসেবে পেইজের নাম দিয়েছিলাম ‘রঙিন কাগজ’। কিন্তু পরে মনে হলো আমি তো আরও কাজ পারি। সেটা নিয়েও কাজ করা উচিত। তাই ক্লে নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আর ক্লের কাজটার প্রসার আমাদের দেশে তেমন নেই, তাই অনেকেই নতুন একটা জিনিস জানতেও পারবে। এই চিন্তায় ক্লে নিয়ে কাজের শুরু।’ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ডিগ্রিতে পড়া শেষ করে সেখানেই মাস্টার্স করেছেন নাবিলা। পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ আইটি ইন্সটিটিউট থেকে শিখেছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন।

রঙিন কাগজ

ক্লে দিয়ে তৈরি কেক এবং বার্গার

পড়াশোনা শেষেই এমন একটি কাজ একাই সামলাচ্ছেন কীভাবে প্রশ্ন ছিল নাবিলার কাছে। স্মিত হেসে তিনি জানান, ‘আমার কাজটা সম্পূর্ণ আমার একার। কখনো কারো সাহায্য নেয়া হয়নি। কারণ আমি একদম নিখুঁত কাজে বিশ্বাসী। অন্য কেউ আমার মতো করে কাজটা করতে না পারলে এতে আমার কাস্টমার খুশি নাও হতে পারেন। তাই কাঁচামাল আনা থেকে শুরু করে জিনিস প্যাক করা পর্যন্ত সব একা হতেই সামলাই। সবকিছু ঠিকমত হয়ে গেলে ভালো লাগার সাথে সাথে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিও কাজ করে। আর এই ব্যাপারটিই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

আগের চেয়ে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ এখন অনেক বেশি। কুরিয়ার সার্ভিসে এখন ঘর থেকেই পণ্য নিয়ে গ্রাহকের দুয়ারে সহজে যাওয়া যায়। আর এ কারণে বেশ সুবিধাই হয়েছে নাবিলার। পণ্য গ্রাহক পর্যন্ত কীভাবে পৌঁছাবে সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না এখন। তবে হ্যাঁ, প্যাকেটের ভিতরে থাকা হাতে বানানো জিনিসগুলোর যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে অবশ্যই বেশ ভালো মনোযোগ দিতে হয় তাকে।

রঙিন কাগজ

ক্লে দিয়ে বানানো নকশি পিঠা, নুডুলস, ডিম পোচ, স্যান্ডউইচ আর স্ট্রবেরী

কাজ নিয়ে গল্পের সাথে সাথে নাবিলার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ক্লে দিয়ে বানানো জিনিসগুলো নিয়ে কোনো মজার অভিজ্ঞতা আছে কিনা। এবার মুখের হাসিটা চওড়া করে জানালেন,কাজ নিয়ে মজার একটি ঘটনা আমার বাসাতেই হয়েছে। একদিন ক্লে দিয়ে একটা বার্গার বানিয়ে আমার ঘরের টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম শুকানোর জন্য। সেদিন আমার বাসায় একজন মেহমান এসে বেশ অবাক হয়ে বলছিলেন, খাবার এভাবে খোলা রেখেছ কেন? মাছি বসবে তো!’ বার্গারটি ক্লে দিয়ে বানানো শুনে বেশ অবাক হয়েছিলেন তিনি।

আর অনলাইনে কোনো গ্রুপে ক্রাফটের ছবি পোস্ট করলে বেশির ভাগ সময়েই রেসিপি চেয়ে কমেন্ট আসে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ মজা লাগে। প্রথম দেখায় অনেকেই ভাবেন এগুলো আসলে রান্না করা খাবারের ছবি।

ভিন্নধর্মী এ কাজে পরিবারের পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন নাবিলা। তার কাজ সবার ভালো লাগে এটি তাকে বেশ আনন্দ দেয়।

কখনো অফলাইনে গ্রাহকের সামনে যাওয়া হয়নি। তবে দেশের মানুষ ক্লে ক্রাফটার হিসেবে একনামে চিনবে এমনটাই স্বপ্ন দেখেন ‘রঙিন কাগজ’র এই কর্ণধার।

‘রঙিন কাগজ’ পেইজের লিংক: https://www.facebook.com/RonginKagojByNabila/

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড