• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাংলার দর্শনীয় স্থানের অপূর্ব নিদর্শন চুনতি অভয়ারণ্য

  আরিফুল ইসলাম রিফাত

২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৭
অভয়ারণ্য
চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য (ছবি : সংগৃহীত)

সবুজ শ্যামল গ্রাম বাংলার দর্শনীয় স্থানের অপূর্ব নিদর্শন চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য। চট্টগ্রাম জেলার সর্ব দক্ষিণে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ের পাশ ঘেঁষে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিজড়িত এই অভয়ারণ্য। ১৯৮৬ সালে চুনতির এ বনকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালি এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়াসহ ৭টি সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে প্রায় ৭৭৬৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই অভয়ারণ্য।

এতে রয়েছে- ২২ প্রজাতির স্থন্যপায়ী, ১৬০ প্রজাতির পাখি, ২৩ প্রজাতির উভচর এবং ৩৩ প্রজাতির সরিসৃপ। এশিয়ান হাতি ছাড়াও এ অভয়ারণ্যের উল্লেখযোগ্য প্রাণি হলো- বানর, কয়েক ধরনের বিড়াল, বন্য শুকর, হনুমান, মায়া হরিণ, সাম্বার প্রভৃতি। কাঠঠোকরা, ছোট বসন্ত বৌরি, বনস্পতি, কানাকুয়া, আবাবিল, টিলাঘুঘু, বনময়না প্রভৃতি। এছাড়া গর্জন, রাতকান, জাম, উড়িআম, চাপালিশসহ ১০৭ প্রজাতির সুসজ্জিত বৃক্ষরাজির সমন্বয়ে গঠিত এ অভয়ারণ্য। পাহাড়ের উপরিভাগে বৃক্ষের সৌন্দর্য, উচু-নিচু পাহাড়ে সৃজিত বাগান আর পাখ পাখালীর কিচিরমিচির মিষ্টি সুরে মুখরিত অভয়ারণ্যটি।

বন্য এশীয় হাতি এ বনের অন্যতম আকর্ষণ। এক পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২৬৪টি বন্য হাতির উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক বাস করছে এ অভয়ারণ্যে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে এশীয় হাতির চলাচলে করিডোর হিসেবে এ বনের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও চুনতি অভয়ারণ্য দক্ষিণ এশিয়ার হাতিদের অন্যতম একটি প্রজনন স্থল। মায়ানমার ও ভারতের হাতিও অনেক সময় প্রজননকালীন সময়ে চলে আসে বলে এ অভয়ারণ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হাতি ছাড়াও অনেক বিরল প্রজাতির জীবজন্তু এবং বিরল বৃক্ষের অবস্থান এই অভয়ারণ্যে। এই বনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য শতবর্ষী মাদার গর্জন গাছ। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, অসাধু বন কর্মকর্তা- কর্মচারীর যোগসাজশে অবাধে গাছ কাটা, বনের জমি কৃষি জমিতে রূপান্তর, অবৈধ বসতবাড়ি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ ইটভাটা স্থাপনাসহ নানা মনুষ্যসৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে অভয়ারণ্যটির জীববৈচিত্র আজ হুমকির সম্মুখীন।

বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা চুনতি অভয়ারণ্যের সতেজতা যে কেউ একবার অনুভব করতে পারলে তার মন চাইবে না এ বন ছেড়ে চলে আসতে। তাইতো অনিন্দ্য সুন্দর এর সতেজতা অনুভব করতে এখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পিকনিকসহ নানা অনুষ্ঠান আড্ডার আয়োজন করেন।

পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অভয়ারণ্য এলাকায় বনপুকুর প্রাকৃতিক গর্জন বনাঞ্চল, এশীয় বন্যহাতির বিচরণ ক্ষেত্র, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হৃদ, বনপুকুর ফুটট্রেইল, জাঙ্গালিয়া ফুটট্রেইল, পর্যটন টাওয়ার, গোলঘর, স্টুডেন্ট ডরমিটরি, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্র, ইকোকর্টেজসহ বিভিন্ন প্রতিবেশ পর্যটন বা ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হয়। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাধ্যমে সহজে অভয়ারণ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যসহ বনের অন্যতম আকর্ষণ এশিয়ান হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণি ও পাখপাখালির অবাধ বিচরণ উপভোগ করা যায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে, চুনতির বনে ঢুকতেই নজর কেড়ে নিয়েছে পাহাড়ের উপরিভাগে বিচিত্ত বৃক্ষরাজির সমারোহ, সবুজে সবুজে চেয়ে গেছে চারপাশের প্রতিটি গাছ- গাছড়া লতাগুল্ম পাখির কিচিরমিচির শব্দে চমকে উঠেছে মন। আর গাছের প্রতিটি ডালে-ডালে বসে থাকতে দেখা হরেক রকমের পাখ- পাখালি যা মনে এনে দিয়েছে অনাবিল সুখ, শান্তি! সবমিলে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে চুনতির এ বন। যা প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা ভ্রমণ-পিপাসু ব্যক্তির নজর কেড়ে নেবে মুহূর্তেই।

লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগণি এম. ই. এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড