• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঘুরে এলাম লাল কাঁকড়ার সোনাদিয়া দ্বীপ

  আবু নাসের

১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১৭
সোনাদিয়া দ্বীপ
লাল কাঁকড়ার সোনাদিয়া দ্বীপ (ছবি কৃতজ্ঞতা: আবু নাসের)

লাল কাঁকড়ার সোনাদিয়া দ্বীপ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা:

সোনাদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার অর্ন্তগত কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত একটি দ্বীপ। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার।

ভ্রমণ বৃত্তান্ত:

সাগর আর পাহাড় এই দুটো জিনিস আমার খুব প্রিয় আর তাই তাদের হাতছানিতে ছুটে যাই বারবার। চট্টগ্রামে থাকার সুবাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সৈকত থেকে সাগর দেখার সুযোগ হয়েছে। যখনই সাগরের পাড়ে যাই মন ভালো হয়ে যায়। প্রতিবারই সকল বিষণ্ণতা আর একঘেয়েমিকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রিফ্রেশ হয়ে আসি। বেশ অনেকদিন ধরেই সোনাদিয়া দ্বীপ মাথার ভেতর পোকার মত ঘুরছিলো। কিছুতেই ব্যাটে বলে মিলাতে পারছিলাম না। অবশেষে এল সেই সুযোগ। ব্যস্ততার কারণে একদিনেই ঘুরে আসার প্ল্যান করে ফেললাম। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে রাত ২টার বাসে রওনা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যেন ভোরে কক্সবাজারে পৌঁছে সকাল সকাল সোনাদিয়া যাত্রা শুরু করতে পারি।

বাসে উঠে ঘুম দিবো বলে চোখ বুজতে না বুজতেই বাসের হেল্পারের ডাক। রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেকটা মাত্র ৩ঘন্টায় ভোর ৫টায় কক্সবাজারে ল্যান্ড করলাম। কুয়াশা আর অন্ধকারে কি করবো কোনদিকে যাবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাদের আরো ৪সাথী ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আমাদের আগে পৌঁছে যায় এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করে সুগন্ধা বীচে যাওয়ার জন্য খোলা রাস্তা শুনশান নীরবতায় শীতে কাঁপতে কাঁপতে পায়ে হেঁটে চলেছি আমরা নয়জন। এর মধ্যে ফজরের আযান দেওয়ায় আমরা সুগন্ধা পয়েন্টে নামায পড়ে বীচে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি ও ছবি তুলে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। তারপর ১৩জন মিলে টমটমে চড়ে গেলাম ৬নম্বর ঘাটে। এখান থেকে মূলত মহেশখালির ট্রলার বা স্পীডবোট ছাড়ে।

সোনাদিয়া দ্বীপ

আমাদের প্ল্যান ছিলো ঘাটে গিয়ে সারাদিনের জন্য ট্রলার রিজার্ভ করে রওনা হব সোনাদিয়া কিন্তু বিপত্তি বাঁধল যখন শুনলাম ঘাটে সোনাদিয়া যাওয়ার মত কোন ট্রলার নেই আর জোয়ার ছাড়া কোন ট্রলার সোনাদিয়া যায় না আর ভাটা শুরু হওয়ার আগেই ফিরে আসতে হয়। তাই বিকল্প উপায় ২টা। এক- লোকাল স্পীডবোটে মহেশখালি দিয়ে সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে যাওয়া আর দুই- স্পীডবোট রিজার্ভ করে চলে যাওয়া।

সোনাদিয়া দ্বীপ

আমরা ঝামেলা এড়াতে আর সময় বাঁচাতে দুটো স্পীডবোট রিজার্ভ করে রওনা হলাম স্বপ্নের সোনাদিয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের একটি বোটের চালক লাইফ জ্যাকেট না দেওয়ায় কিছুদূর যাওয়ার পর কোস্টগার্ড বোটটি আটকে রাখে। সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পড়ানোর পর চালককে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়। ঢেউ কেটে কেটে প্রচন্ড গতিতে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের দুটি বোট। দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে মাত্র ৩০মিনিটেই পৌঁছে গেলাম সোনাদিয়ায়।

বোট পাড়ে ভীড়ার আগেই চোখে পড়লো বীচ জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছড়াছড়ি। নেমেই কাঁকড়ার পিছে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিলাম! কাছে গেলেই সেগুলো টুপ করে গর্তে লুকিয়ে পড়ে, স্থানীয় বাচ্চারা কয়েকটা কাঁকড়া ধরলো আমরা ছবি তুলে আবার ছেড়ে দিলাম। এরপর স্থানীয় এক জেলের সাথে দুপুরে খাবারের ব্যাপারে কথাবার্তা বলে ঠিক করলাম দুপুরে লাঞ্চ হবে ছুড়ি- লইট্যা- পোয়া আর বিভিন্ন রকমের শুটকি দিয়ে। কিছুক্ষণ স্থানীয়দের শুটকি বানানোর প্রসেস দেখে আমরা ঝাউবনের মধ্য দিয়ে চলে গেলাম দ্বীপের ভিতরের দিকে। সেখানে কেয়া আর ঝাউবনের সাথে জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট সরু খালের মিতালী দেখে ঝাউবনে ঝাউগাছের ছায়ায় কেউ ঘুমিয়ে কেউ শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে নিলাম ঠান্ডা বাতাসে।

সোনাদিয়া দ্বীপ

তারপর আবার জেলের ঘরে এসে খোজ নিলাম রান্নার, বললো আরো ১ঘন্টা লাগবে। এদিকে জুম্মার নামাযের সময় হয়ে যাওয়ায় আমরা স্পীডবোট নিয়ে চলে গেলাম পশ্চিম পাড়ায় সেখানেই মসজিদ আছে। উল্লেখ্য আমরা প্রথমে নেমেছিলাম পূর্ব পাড়ায় এদিকে মসজিদ নেই তেমন বসতিও নেই, কয়েকটি পরিবার থাকে তাই একটু নীরব আর শান্ত পূর্বপাড়া। বিশাল তপ্ত বালির বীচ পেড়িয়ে আমরা পৌঁছালাম মসজিদে, অবকাঠামোগত তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি এই দ্বীপে। তবে সাগরের এত কাছে টিউবওয়েলে মিঠা ঠান্ডা পানি আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া আর কিছুই না।

নামায শেষে আবার চলে এলাম পূর্বপাড়ায়। এসে দেখি ঝাউবনে বিশাল তেরপাল বিছিয়ে আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। প্রচন্ড ক্ষুধা আর তাজা মাছ ও শুটকি রান্নার সুগন্ধে আমাদের যেন আর তর সইছিলো না। সবাই ঝাপিয়ে পড়লাম। সাগরের তাজা কয়েক রকমের মাছ আর কয়েকরকমের শুটকি দিয়ে খাওয়া চললো। বিশেষ করে মিক্সড শুটকি ভর্তার স্বাদ আমরা কেউই ভুলতে পারবো না। লাইফে খাওয়া বেস্ট শুটকি ভর্তা সেদিন খেয়েছিলাম আর তাই খাওয়া শেষ হতেই সবাই শুটকি কিনতে আড়ত ঘরে ঢুকে গেলাম। দরদাম করে যারযার পছন্দমত যতটুকু সম্ভব শুটকি কিনলাম। এত পিউর আর ফ্রেশ শুটকি কোথাও পাবো না তাই যার যার সাধ্যমতো নিলাম।

সোনাদিয়া দ্বীপ

এরপর ব্যাগ গুছিয়ে দুপুরের খাবারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়েই বিপত্তি বাধলো আগে দরদাম করে ঠিক না করায় ১৫জনের খাবারের জন্য ৭০০০টাকা চেয়ে বসলো তাতে হজম হওয়ার আগেই মাছ শুটকি বমি হয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। শেষে অনেক কষ্টে রাজি করে ২০০০টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। শেষ বিকেলে কক্সবাজারে ঝাপাঝাপি আর সূর্যাস্ত ছিলো বোনাস। সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের বাসের টিকেট কেটে হালকা নাস্তা করা আর বার্মিজ মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটার মধ্যদিয়ে শেষ হল স্বপ্নের সোনাদিয়া ট্যুর। একদিনের ট্যুর হলেও স্মরণীয় একটি দিন কাটালাম।

যাওয়ার উপায়:

দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে আসতে হবে। টমটম বা সিএনজি করে কক্সবাজার এর ৬নম্বর ঘাটে যেতে হবে। সেখান থেকে ট্রলার বা স্পীডবোট রিজার্ভ করে সোনাদিয়া দ্বীপ।

থাকা ও খাওয়া:

সোনাদিয়ায় থাকার জন্য কোন হোটেল বা রিসোর্ট নেই। ক্যাম্পিং করে তাঁবুতে বা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তাদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। খাওয়ার বেলাতেও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে রান্না ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।

খরচাবলী:

ননএসি বাস ঢাকা-কক্সবাজার ৮০০ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ২৫০, কলাতলী মোড় থেকে ৬নং ঘাট টমটমে জনপ্রতি ২০টাকা, ঘাট থেকে সোনাদিয়া আসা-যাওয়া রিজার্ভ স্পীডবোট ২৫০০-৩০০০(পূর্বপাড়া) আর পশ্চিম পাড়ায় গেলে আরেকটু বেশি নিবে আমরা নামাযে যাওয়ার জন্য ৫০০টাকা বেশি দিয়েছিলাম। ট্রলার ৩০০০-৪০০০ টাকা তবে ট্রলারে গেলে সময় বেশি লাগবে আর ভাটা শুরু হওয়ার আগেই ব্যাক করতে হবে। একবেলা খাওয়া বিভিন্ন মাছ ও শুটকি দিয়ে ১০০-১৫০ টাকা।

নির্দেশনা:

ভাড়া বা খাবারের খরচ অবশ্যই দরদাম করে ফিক্স করে নিবেন। বোটে কতটুকু যেতে চান বা সেখানে কতক্ষণ থাকতে চান আগেই কথা বলে ক্লিয়ার করে নিবেন। স্থানীয়দের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়াবেন না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হানি ঘটে এমন কিছু করা বা যত্রতত্র ময়লা ও প্লাস্টিক দ্রব্য ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।

ভ্রমণ হোক নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড