• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মহামারির সময়টায় ক্যানসার আক্রান্তদের অবহেলা নয়

  লাইফস্টাইল ডেস্ক

২২ এপ্রিল ২০২০, ২৩:২৩
ক্যানসার
ক্যানসার (প্রতীকী ছবি)

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লকডাউনে সমস্যায় পড়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত এবং নিয়মিত কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন চলছে এমন রোগীরা। এক দিকে করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে নিয়মিত চিকিৎসা করানোর অসুবিধা। ফলে রোগী তো বটেই বাড়ির লোকজনও পড়েছেন ঝামেলায়।

মহামারির এই সময়টায় তাদের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ। প্রথমত, এখন হাসপাতালে পৌঁছনোর সমস্যা অনেক। অন্যদিকে হাসপাতালে গিয়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এ দিকে, ক্যানসারের মতো ক্রনিক অসুখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায় বলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।

ভারতের বিখ্যাত ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ক্যানসার হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনিতা রমেশচন্দ্রন বলেন, ‘ক্যানসার রোগীদের দুই ভাগে ভাগ করে নিয়ে চিকিৎসা প্রোটোকল ঠিক করে দেওয়াই ভাল। যারা ক্যানসার চিকিৎসায় সেরে উঠবেন বলে আশা করা যাচ্ছে এবং যাদের সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম হওয়ায় প্যালিয়েটিভ থেরাপি চলছে, তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে টিউমার বোর্ড গঠন করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।’

টিউমার বোর্ড গঠন করা হয় মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট, সার্জিকাল অঙ্কোলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, নার্স, সাইকোলজিস্ট ও সোশ্যাল ওয়ার্কারদের নিয়ে। কেননা, ক্যানসার আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চিকিৎসা চলাকালীনও রোগীদের শরীরও কমজোরি থাকে। এই সময় অন্যান্য সংক্রমণের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়ে।

তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, নিতান্ত দরকার না পড়লে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। তবে অনিতা রমেশচন্দ্রনের মতে, যেসব ক্যানসার আক্রান্তের কেমোথেরাপি চলছে এবং সেরে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে ক্যানসার তাদের কিন্তু থেরাপি নিতে হাসপাতালে যেতে হবে। তবে যদি খাওয়ার ওষুধ দিয়ে কেমো দেওয়া সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সে অনুযায়ী কেমো নেওয়া যেতে পারে। তখন আর হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হবে না। টার্মিনাল স্টেজের ক্যানসার আক্রান্তদের এমন ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে বাড়িতে রাখাই ভালো। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্যানসার রোগীদের এইভাবে চিকিৎসা করা যায়।

মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনিতা আরও বলেন, এখন যদি কেউ নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে টিউমার বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কী ভাবে চিকিৎসা করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যানসারযুক্ত টিউমারে অস্ত্রোপচার করতেই হয়। কিন্তু করোনার বাড়বাড়ন্তের সময়ে চট করে অস্ত্রোপচারে সায় নেই চিকিৎসকদের। তখন রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির সাহায্যে টিউমারের বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রেখে রাখাই এই পরিস্থিতিতে বাঞ্ছনীয়। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলে অস্ত্রোপচার অথবা বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। তবে যদি কারও ব্রেন টিউমার বা স্পাইনাল কর্ডের ক্যানসারের কারণে রক্তপাত শুরু হয়, সে ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতেই হবে।

আরও পড়ুন : নতুন রূপে কোভিড-১৯! ‘গ্যাস্ট্রো-করোনাভাইরাসের’ লক্ষণ কী?

তিনি বলেন, যাদের রেডিয়েশন নিতে হচ্ছে, তাদের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ রেডিয়েশন পিছিয়ে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ২৫টার পরিবর্তে ১২টা রেডিয়েশন দিয়ে রোগ আটকানোর চেষ্টা করা হয়। তবে কোনও জরুরি অবস্থা হলে রোগীকে হাসপাতালে এনে রেডিয়েশন দিতেই হবে। অনেক সময় ব্রেস্ট ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসারে হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমলে এই ইঞ্জেকশনের ডোজ দেওয়া যেতে পারে। তবে যে কোনো জরুরি অবস্থাতেই রোগী ও পরিবারের লোকজনকে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

সুতরাং ক্যানসারের রোগীর স্বাভাবিক চিকিৎসা বন্ধ করা নয়, বরং লকডাউনের সময়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে বিকল্প উপায়ে তার প্রয়োজনীয় কোনো চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড