লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে হাজার হাজার মানুষ। ঘরবন্দি এই সময়টায় বাড়িতেই কমানো যাবে ওজন। এ ক্ষেত্রে খাবার খেতেও নেই বাধা। তবে মানতে হবে নিয়ম আর করতে হবে যোগব্যায়াম। এতে ঘরবন্দি সময়টাতেই কমবে ওজন, স্বাস্থ্য থাকবে নিরোগ।
পদ্মাসন
পদ্মফুলের মতো একটি যোগব্যায়াম। এটি ফুসফুস ভালো রাখে। করোনার এই সময়ে এই ব্যায়ামটি খুব দরকারি। নিয়ম মেনে এটি কররে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্প দিনে সেরে যায়। পাশাপাশি মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। আর ওজন তো কমবেই।
শুরুতেই উরুর ওপর ডান পা এবং ডান উরুর ওপর বাঁ পা রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। এরপর দুই হাত সোজা করে হাঁটুর ওপর রাখুন। এই সময়টায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এটিই হলো পদ্মাসন। বদল করে আবারও একই আসন নিতে পারেন।
ধনুরাসন
ধনুকের মত বাঁকা হয়ে ব্যায়ামটি করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে। প্রথমেই উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুতিকে উপরমুখি করে শরীরের দুপাশে রাখুন। নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আপনার হাঁটু বাঁকিয়ে নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন। হাত পেছনের দিকে নিয়ে এবার গোড়ালি শক্ত করে চেপে ধরুন। এই সময় দুই হাঁটুর মাঝে অবশ্যই কিছু ফাঁকা অংশ রাখবেন।
এবার শ্বাস নিতে নিতে গোড়ালি দুটোকে নিতম্ব থেকে দূরে সরিয়ে নিন এবং একই সাথে উরুও ফ্লোর থেকে উপরের দিকে উঠে যাবে। এসময় শোলডার ব্লেড পেছন দিকে চলে যাবে এবং বুক মাটি থেকে একটু উপরে উঠবে। এসময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ২০ সেকেন্ড পরে আস্তে আস্তে আসন ছেড়ে দিন। এভাবে ৩ বার করুন।
প্রাণায়াম
প্রাণায়াম অনেক উপকারী। আমরা যখন শ্বাস ত্যাগ করার পর শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ফুসফুসে যে পরিমাণ বাতাস প্রবেশ করে, তাতে ফুসফুস মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ প্রসারিত হয়। কিন্তু প্রাণায়াম করার মাধ্যমে ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করা যায়। ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণ বাতাস প্রবেশের ফলেই ফুসফুস প্রসারিত হয়। এর মধ্য দিয়ে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায়। রক্ত চলাচল ও হৃদযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান কিংবা ধ্যান করার মত করে আসন করে বসুন। ধীরে ধীরে নাক দিয়ে যতটা সম্ভব নিঃশ্বাস নিন। বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বলতে আমরা যেমনটা বুঝি। যেমন করে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন তেমনি ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে (হা করে) নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এইভাবে দিনে তিন মিনিটে যতবার পারেন নিঃশ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
তবে মনে রাখতে হবে নিঃশ্বাস নিতে হবে নাক দিয়ে কিন্তু নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে মুখ দিয়ে। আর যে সময় ধরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন ততটা সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে।
ভুজঙ্গাসন
ভুজঙ্গাসনটি করতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে তবে কপাল যেন মাটি ছুঁয়ে থাকে। হাত ভাঁজ করে কাঁধ বরাবর আনুন। হাতের তালু নিচের দিকে রেখে হাত দুটোকে কাঁধের নিচে রাখুন। এবার শ্বাস নিতে নিতে হাত সোজা অবস্থায় নিয়ে আসুন যাতে বুক উপরের দিকে উঠে যায়। এভাবে উপরের দিকে তুলতে থাকুন (নাভি পর্যন্ত) যতক্ষণ না শরীরের উপরের অংশে একটা কার্ভ তৈরি হচ্ছে। এভাবে ২০ সেকেন্ড থাকুন। তারপরে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
উস্ত্রাসন
এই ব্যায়ামটি করার সময় নিচে নরম কাপড় দিয়ে নেবেন। প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে হাঁটুর ওপর দাঁড়ান। শরীরের দুপাশে হাত রাখুন। এবার আস্তে আস্তে পেছনের দিকে বাঁকিয়ে প্রথমে এক হাত পরে দুই হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি ধরতে হবে। এবার আস্তে আস্তে পেছনের দিকে বাঁকিয়ে বুক এবং পেট প্রসারিত করতে হবে। এসময় শরীরের ওজন হাত ও পায়ের ওপর থাকবে। এইভাবে ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারেন। তারপর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
মৎস্যাসন
শরীরের মেদ কমাতে এটি খুবই কার্যকরী একটি আসন। পেটের পেশীগুলি প্রসারিত করে পেটের বাড়তি মেদ কমাতেও সাহায্য করবে। প্রথমে একটি সরু স্থানে শুয়ে হাতগুলো দুপাশে সোজা করে রাখতে হবে এবং হাতের তালু মাটিতে লেগে থাকবে। লক্ষ্য রাখতে হবে পা দুটি যেন একসঙ্গে থাকে। পা দুটো কোমরের দিকে বটে নিতে হবে। এরপর নিতম্ব পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাত দুপাশে রাখতে হবে। এবার বুক উঁচু করে রাখতে হবে এবং মাথার তালু মাটিতে ঠেকাতে হবে। এক্ষেত্রে নিঃশ্বাস একেবারে স্বাভাবিক রাখতে হবে।
শবাসন
প্রতিটি ইয়োগা শেষে এই যোগব্যায়াম করা হয়। এটি শরীরের কোষ এবং টিস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল প্রাণবন্ত করে তোলে।
পরামর্শ:
* এই যোগব্যায়াম গুলো পেট, কোমর ও পিঠের ওপর চাপ ফেলবে। তাই প্রথম কয়েকদিন শরীরের এই অংশগুলোতে ব্যথা করলেও কয়েকদিন পর সেরে যাবে।
* ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করার আগে ট্রেইনারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোনো যোগব্যায়াম করার ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সেটি বন্ধ করে দিবেন।
আরও পড়ুন : মহামারির এই সময়টায় বয়স্কদের দুশ্চিন্তা কমাতে যা করবেন
* যোগ ব্যায়ামের সময় এমন কোন পোশাক পরা উচিত নয় যাতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
* প্রচুর আলো-বাতাস আছে এমন ঘরেই যোগব্যায়াম করুন কারণ যোগ ব্যায়ামের সময় প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে।
* অফুরন্ত ধৈর্য থাকতে হবে। যোগ ব্যায়ামের রাতারাতি ফল আসে না। নিয়মিত চর্চা করে যেতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড