স্বাস্থ্য ডেস্ক
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাবানলের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের কারণে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। সম্প্রতি বাংলাদেশেও তাণ্ডব চালাচ্ছে মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ভয়াল থাবার মধ্যে বিদেশ থেকে কেউ দেশে এলে তাকে নির্ধারিত কয়েক দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের তথ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক তথ্যবিবরণীতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়ে বেশ কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চলুন জেনে নেই নির্দেশনাগুলো-
* বাড়ির অন্য সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকুন। তবে যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন। পাশাপাশি ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন।
* আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা আছে পৃথক এমন ঘরে থাকুন। একই সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন।
* সম্ভব হলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করুন। তা সম্ভব না হলে, অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান এবং ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
* বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। তবে শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
* আপনার সঙ্গে কোনো পশু-পাখি রাখবেন না।
* বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
* প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
* মুখে মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। একই সঙ্গে ব্যবহারের পর মাস্ক ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
* টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন।
* ব্যক্তিগত ব্যবহার সামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
* আপনার খাওয়ার বাসনপত্র, থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার কোয়ারেন্টিন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মতে একজন থেকে অন্যজনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।
* কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে সবার সঙ্গে মুঠোফোন বা ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন।
* সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে থাকুন।
* আপনার দৈনন্দিন রুটিন, যেমন- খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন।
* শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝান। তাদের পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিন এবং খেলনাগুলো খেলার পরে জীবাণুমুক্ত করুন।
* বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপযুক্ত নিয়মগুলোর সঙ্গে পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন বা ব্যস্ত রাখুন।
* পরিবারের সদস্য যারা সুস্থ আছেন এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টিনে আছেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দেবেন না।
* পরিচর্যাকারী খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।
* কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
* ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সব পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন। ওই দ্রবণ দিয়ে সব স্থান ভালোভাবে মুছে ফেলুন। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
* কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান, কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন : আপনার রান্নাঘর করোনার জীবাণুমুক্ত তো?
* নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মলমূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।
* কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কোনো উপসর্গ দেখা দিলে (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) অতি দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে অবশ্যই যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন।
ওডি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড