করোনার ঝুঁকি রোধে মুখে হাত দেওয়া এড়াবেন যেভাবে

চীন থেকে ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। এরই মধ্যে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঝরে গেছে কয়েক হাজার প্রাণ। খালি চোখে দেখা যায় না- এমন ক্ষুদ্র এই শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সহজ কথা নয়। তাই প্রতি মুহূর্তেই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

এরই মাঝে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এত এত সাবধানবাণী ও সতর্কবার্তা প্রচারের পরও কেন অনেকেই তা মানছে না? চোখে, মুখে ও নাকে হাত দিলে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করে। বাসায় বা রাস্তায় যেখানেই থাকবেন বা যাবেন, এসব পরামর্শ যে বেশির ভাগ মানুষ মানছে না দেখা যাবে।

এ দিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা শুধু বাংলাদেশের বা কোনো নির্দিষ্ট দেশের মানুষের স্বভাব তা না। মানুষের মৌলিক যে কটি আচরণ আছে, তার মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর মুখে হাত দেওয়া অন্যতম। কারণ, মানুষ ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ পরপর মুখে চোখে হাত দেয়। অতি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ও অন্য বড় প্রাণীরাও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে মুখে হাত দেওয়া শুরু করে। এমনকি বিষণ্ন হলে, রাগ করলে, বিস্ময় প্রকাশ করার সময় মানুষ মুখে হাত দেয়।

বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মেরি লাউস ম্যাকলিউস ২০১২ সালে মানুষের মুখে হাত দেওয়া নিয়ে একটি গবেষণা করেন। ওই গবেষণার ফলে দেখা যায়, মানুষ গড়ে ২৩ বার মুখে হাত দেয়। এছাড়া অপর একটি দল গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের একটি সাবওয়েতে সাধারণ মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে। তাদের অজান্তে করা ওই পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, একেকজন মানুষ গড়ে তিনবারেরও বেশি মুখে হাত দিচ্ছে।

কিন্তু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এই সময়ে তো এসব পরামর্শ মানতে হবে। তাই গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চোখেমুখে হাত দেওয়া বন্ধে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু করোনা ভাইরাসই নয়, অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াও মুখে হাত দেওয়ার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে এই জরুরি পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য ও নিজের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য মুখে-নাকে ও চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে প্রথম পরামর্শ হিসেবে বসে বা শুয়ে থাকার সময় দুই হাতের আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে রাখার কথা জানিয়েছেন। মুষ্টিবদ্ধ থাকা অবস্থাতেই কথা বলা বা হাঁটা-চলার চেষ্টা করতে বলছেন। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক সময় হাতের মুষ্টি ছুটে যেতে পারে। ফলে কিছুক্ষণ পরপর দুই হাত নাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দুই হাত ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবারও মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা উচিত।

দ্বিতীয় পরামর্শ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চোখে চশমা দেওয়ার কথা বলছেন। এতে চোখে আঙুল চলে গেলেও বাধা আসবে। সারা দিন চোখে চশমা পড়ার অভ্যাস করলে চোখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ধারাবাহিকভাবে কমে আসবে।

আরও পড়ুন : আপনার রান্নাঘর করোনার জীবাণুমুক্ত তো?

এছাড়া তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মুখে মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলেছেন। এতে হাতে থেকে ভাইরাস মুখের মধ্যে প্রবেশ করবে না।

সর্বোপরি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় সতর্ক ও সচেতন থাকা।

ওডি