• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কম সময়ে ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড-মিরসরাই রেঞ্জ থেকে

  ফরহাদ দেওয়ান

০৮ আগস্ট ২০১৮, ১২:১৬
ঘুরে আসুন সীতাকুন্ড-মিরসরাই রেঞ্জ থেকে

কম খরচে কম সময়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্যে আমি মনে করি সীতাকুন্ড আর মিরসরাইয়ের রেঞ্জগুলো অনেক বেশী সুবিধাজনক। কেউ চাইলে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে পারেন অথবা রাতে রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুরোঘুরি করে রাত ১২ টার মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করতে পারবেন।

এখানে আপনি পাবেন ঝর্না,পাহাড়,লেক আর সমুদ্র বীচসহ অনেক কিছুই। রেঞ্জটিতে অনেকগুলো ঝর্না পাহাড় সী বীচ রয়েছে। একদিনে সবগুলো স্পটে ঘুরতে পারা সম্ভব না হলেও, বেশ কয়েকটি স্পট দেখে আসতে পারবেন। সাথে পাবেন পাহাড় ঝর্না পেরিয়ে রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের ছোঁয়া। নতুনদের জন্যে এই রেঞ্জ হবে শেখার একটি জায়গা, যারা ট্রেকিং কখনোই করেননি।

তবে হ্যাঁ আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক প্লান করে যেতে হবে। বর্ষা, শীত যেকোনো সময়ে আপনি চাইলে যেতে পারবেন। তবে ঝর্নায় পানি দেখতে চাইলে বর্ষা সময়টা বেশী উপযুক্ত সময়। ঢাকা থেকে যাওয়ার দূরুত্ব ১৯৭ থেকে ২১৩ কিলোমিটার।

একদিনে সারাদিন ঘুরোঘুরি আর খাওয়া দাওয়া করে খরচ পরবে অবস্থানভেদে ৪০০-১৫০০ টাকার মধ্যেই। তবে ট্রেকিং ট্যুরে ট্যুরমেট ৪-৫ জন হলেই ভালো। খুব ভালোভাবে ঘুরতে পারা যায় আর খরচ ও সাশ্রয়ী হয়। গ্রুপ করে বেশী লোক না যাওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

যাতায়াত খরচ বিস্তারিত :

ঢাকা-সীতাকুণ্ড-ঢাকা:

ট্রেনে যাতায়াত

আপ-ডাউন ট্রেন ১০০+১০০=২০০ টাকা ( আপনি যদি ৪/৫ জন সদস্য হোন তাহলে চিটাগাং মেইল ট্রেনের স্টাপ বগি ম্যানেজ করে শুয়ে বসে আরাম করে যাওয়া আসতে পারবেন)

বাসে যাতায়াত:

আপ-ডাউন বাসে হলে ভাড়া ৪৭০+৪৭০ =৯৪০ টাকা। আপনি সিডিএম লোকাল বাসে করে ২৫০ +২৫০=৫০০ টাকায় খুব ভালোভাবেই আসতে পারবেন। অনেকেই যাওয়ার সময় ট্রেনে যান এবং আসার সময় বাসের ভ্রমনটি বেছে নেন। এতে করে ভ্রমনটি সাশ্রয়ী হয়।

প্রাইভেট মাইক্রো যাতায়াত:

প্রাইভেট মাইক্রো রেন্ট নিয়ে আপনি ট্যুরটি দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ একটু বেশিই পরবে। অথবা খুব সকালে ৫ টায় রওনা দিলে ৯ টায় পৌছে যেতে পারবেন। সারাদিনের জন্যে আপনি রেন্ট নিলে দরদাম করে ৭০০০ থেকে ১২০০০+ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০ /১২ জনের গ্রুপ হলে বেশ ভালো হয়। খরচ কমে যায়। মাইক্রো নিয়ে ইচ্ছে মত ঘোরাঘুরিও করা যায়।

অভ্যন্তরীন যাতায়াত :

মিরসরাই এবং সীতাকুণ্ডের রেঞ্জগুলোতে যাতায়াত খরচ ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা। সারাদিন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ঘুরতে আপনার ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশী খরচ হবে না।

খাওয়া-দাওয়ার খরচসমূহ:

যেহেতু ট্রেকিং ট্যুর করা হয় এই রেঞ্জে তাই সঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়াটা হয় না অনেকেরই। অনেকেই শুকনো খাবার পানি স্থানীয় দোকানগুলো থেকে কিনে নিয়ে যায়। এতে খরচ ৬০ টাকা থেকে ১০০ এর মধ্যেই হয়ে যায়। দুপুরের খাবারও একে বারে কম দাম ৮০ থেকে ১৩০ এর মধ্যে সেরে নিতে পারবেন। তবে খাবার খুব বেশী মুখরুচক না।

তাই আপনি আপনার ট্যুর প্লান আর খরচ হিসেব করেই নিজেই ২ /৩ টা স্পট খুব সহজে ৪০০-১৫০০ টাকার মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন। আমরা ২ জন গিয়েছিলাম, ৩ টা স্পট ঘুরে খরচ পরেছিলো ৭০০ টাকা মাত্র।

মিরসরাই রেঞ্জে আপনি কী কী দেখতে পাবেন:

মহামায়া লেক : এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা -চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই ঠাকুরদিঘী বাজার। সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই অথবা ১০ টাকা সিএনজি ভাড়া নিয়ে মহামায়া লেক। এইখানে বোটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন অথবা আপনি চাইলে কায়াকিং করতে পারবেন। কেউ চাইলে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন। ক্যাম্পেইনের বিশেষ সুবিধা আছে।

খৈয়াছড়া ঝর্না: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই বড়তাকিয়া বাজার। সেখান থেকে সিএনজি যোগে ঝিরি পথ। পাহাড়ী ঝিরি পথ ধরে প্রায় ২০/৩০ মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন ঝর্নার রানী খৈয়াছড়া। ১২ টি ধাপে বিশাল এই ঝর্নাটি যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে দেবে। তবে ১২ টা ধাপ সবার জন্যে শেষ করা এতটা সহজ নয় অনেক কষ্টকর।

নাপিত্তাচড়া ট্রেইল: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা -চিটাগাং হাইওয়েতে। এর সাথেই নয়দুয়ারি বাজার থেকে প্রায় ১ ঘন্টা হাঁটলেই প্রথমে পাবেন কুপিকাটাখুম, মিঠাছড়ি ঝর্না তারপর বান্দরখুম ঝর্না। পুরো ট্রেইলটি অসাধারন। দারুন একটা এডভেঞ্চার ফিল এনে দেবে আপনার মনে।

বোয়ালিয়া বাউশ্যা ট্রেইল: মিরসরাই বাজার থেকে পূর্বদিকগামী মীরসরাই কলেজ রোডে ধরে যাত্রা শুরু। সিএনজি ভাড়া ১০ টাকা। সিএনজি থেকে নেমে ব্রাক পোল্ট্রি ফিড কমপ্লেক্সর সামনে ছড়া ধরে উত্তরদিকে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন ঝর্নাগুলো।

সীতাকুন্ড রেঞ্জে আপনি কী কী দেখতে পারবেন:

চন্দ্রনাথ পাহাড়: সীতাকুন্ড বাজার নেমেই আপনি অটো নিয়ে চলে যেতে পারবেন সীতাকুন্ড ইকো পার্ক। চন্দ্রনাথ মন্দিরের মুল গেটে।সেইখান থেকে পায়ে হেটে সিড়িঁ বেয়ে প্রায় ১০২০ ফিট উচ্চতায় পৌছালে দেখতে পাবেন। পাহাড় থেকে দারুন কিছু ভিউ, সময় লাগবে প্রায় ১.৩০ ঘন্টা। এখানেই হয়ে যাবে আপনার পাহাড় ট্রেকিং এর হাতেখড়ি। ছোটখাটো একটা পাহাড় সামিট। তবে চেষ্টা করবেন খুব ভোর বেলায় যাওয়ার, তাহলে কষ্ট কম হবে। ভাগ্যে থাকলে মেঘের উড়ুউড়ি দেখতে পাববেন।

সুপ্তধারা সহস্রধারা ট্রেইল: সীতাকুন্ড বাজার নামলেই ১০ টাকা অটো ভাড়া করে চলে যাবেন সীতাকুন্ড ইকো পার্ক, চাইলে ভিতরে হেঁটে যেতে পারবেন অথবা সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ২ টা ঝর্না ঘুরে আসতে পারবে। খুব একটা কষ্টসাধ্য না হলেও ৪০০/৫০০ সিড়িঁ ভেঙে আপনাকে ঝর্নার কাছে পৌছাতে হবে। পানি বেশী থাকলে সুপ্তধারা ঝর্না অসাধারন লাগে। ইকো পার্কে অবশ্যেই টিকেট করে ঢুকতে হয়।

কমলদহ ট্রেইল: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা -চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই বড় দরগার হাটে। সেইখান থেকে ইট ভাটার পাশ দিয়ে ২০ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন মূল ঝর্না। তবে পানি বেশী থাকলে এই ঝর্না দেখার জন্যে পারফেক্ট। এই ট্রেইলে আপনি পাবেন কমলদহ ঝর্না সহ ছাগলকান্দা ঝর্না। সাথে ছোট বড় মিলিয়ে অসংখ্য কেসকেড। আপনি ঝর্নার আপ স্ট্রীম দেখতে চাইলে সারাদিন অথবা হাফ বেলা ট্রেকিং করতে পারবেন।

ঝরঝরি ঝর্না: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা -চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই পান্থছিলা বাজারে। সেখান থেকে সোজা রাস্তা ধরে হাঁটলেই পাবেন বেশ জংগলী একটা ট্রেইল। ঝর্না বেশ বড় না হলেও বেশ সুন্দর ঝিরিগুলো। পথঘাটে অবশ্যই আপ স্ট্রীমের ভিউগুলো দেখে আসবেন।

সহস্র ধারা-২: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা -চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই ছোট দরগার হাট। সেখান থেকে সিএনজি ১০ টাকা করে নেমে হাটা শুরু। প্রথমে সহস্র ধারা লেক বেশ বোটে করে যেতে ভালো কিছু উপভোগ করতে পারবেন। বোট ভাড়া ৫০ টাকা। এর আপ স্ট্রীমের ঝিরিগুলো অনেক বেশী সুন্দর।

সোনাইছড়ি ট্রেইল: এখানে আসতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ের সাথেই মীরসরাই এরপর ফকিরহাট বাজার নেমে পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে হাঁটলেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। সীতাকুন্ড-মীরসরাই জোনের সবচেয়ে কঠিন ট্রেইল বর্ষায় যাওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়,তবে শীতে গেলে দারুন ভিউ পাবেন গিরিপথ, বড় বড় বল্ডার পাথর, খুম সহ অসাধারন কিছুর এডভেঞ্চার ফিল নিয়ে আসতে পারবেন।

গুলিয়াখালি সী বীচ: পড়ন্ত বিকেলে প্রিয় জনকে নিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে অথবা সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষে বিশ্রাম নিতে গুলিয়াখালি সী বীচ দেখতে আসাটা আপনার জন্যে হবে ভালো সিদ্ধান্ত। সীতাকুন্ড বাজার থেকে জনপ্রতি সিএনজি ভাড়া নেয় আপ ডাউন ৬০ টাকা।

বাঁশবাড়িয়া সী বীচ: সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া আপ-ডাউন ৫০ টাকা। একেকটা সমুদ্র বীচ একেক রকম। এখানে আপনি দেখতে পাবেন ঝাউবন, নতুন জেগে ওঠা বিশাল বালির মাঠ। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে আধা কিলো রাস্তা হেঁটে যেতে পারবেন ছোট একটা জেটি ধরে।

কুমিরা ঘাট: আপনি চিটাগাং যাওয়ার পথে কুমিরা ঘাট রোডে নেমে সিএনজি ভাড়া ২০ টাকা। আর সীতাকুন্ড থেকে ৪০ টাকা করে টাকা ভাড়া দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। কুমিরা ঘাট হচ্ছে সন্দীপ যাওয়ার জন্যে ১ কিলোমিটারের বিশাল একটা জেটি। দিনের শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত আর শীপ ইর্য়াড বাড়তি সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

এছাড়া আরো অনেক স্পট রয়েছে তার মধ্যে উপরেরগুলো উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকার খুব কাছেই এতো সুন্দর জায়গা রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। কিন্তু আমরা প্রকৃতিকে ভালোবেসেই তার কাছে যাই, আর সেই ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারি না। যেখানে সেখানে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবেশ নোংরা করে চলে আসি। তাই ঘুরতে গিয়ে শুধু অভ্যাস পরিবর্তন নয় সব সময়ই আমাদের অভ্যাসে পরিনত করে নিতে হবে যেখানে সেখানে চিপ্সের প্যাকেট, বোতল ইত্যাদি ফেলে আসবো না। যদি পারি ঘুরতে গিয়ে এমন ময়লা চোখে দেখলে নিজ উদ্যোগে নিয়ে আসবো অথবা পুরিয়ে ফেলবো।

হ্যাপি ট্রাভেলিং

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড