• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ন্যাপথলিন বা কর্পূরের চমৎকার কিছু ব্যবহার

  অধিকার ডেস্ক    ২৬ জুলাই ২০১৮, ১৯:৪০

ছবি: সংগৃহীত

ন্যাপথলিন একটি জৈব-রাসায়নিক বস্তু। বাজারে দুই ধরণের ন্যাপথলিন বা কর্পূর পাওয়া যায়। একটি কর্পূর গুল্ম থেকে পাওয়া যায় এবং অন্যটি কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়। সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজায় কৃত্রিমভাবে তৈরি কর্পূর ব্যবহার করা হয় এবং এডিবল কর্পূর মিষ্টি খাবারে সুগন্ধ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়।

বর্ষা বাদলার দিন থেকে শুরু করে বছরের পুরোটা সময় জুড়েই কিন্তু ন্যাপথলিন বা কর্পূরের উপর আমরা বেশ নির্ভরশীল। ন্যাপথলিন বা কর্পূরের উপকারিতা ও নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে চলুন ঝটপট জেনে নিই -

কাপড়ের আলমারিতে- কাপড়ের মধ্যে অর্থাৎ যেসব স্থানে পোকামাকড় বা জীবাণুর উৎপাত বেশি হয় এবং অবশেষে কাপড় নষ্ট করে ফেলে, সে সব স্থানে ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয়। ন্যাপথলিন বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরির মাধ্যমে এসব পোকামাকড় দূরে ঠেলে দেয়। এতে ওই সব জীবাণু থেকে কাপড় রক্ষা করা সম্ভব হয়। আরও দেখা গেছে যে ন্যাপথলিন শুধু এ ধরনের জীবাণু ছোট ছোট পোকামাকড়ই নয়, একটু বড় পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গও দূরে ঠেলতে পারে। এ জন্য তেলাপোকার কবল থেকে কাপড় ভালো রাখতে ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয়।

বুক শেলফে বইয়ের যত্নে- ন্যাপথলিন বইপত্র, কাগজ, নথিপত্র ইত্যাদিকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। বিশেষ করে অনেকদিন ধরে বই থাকলে তাতে কালো ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা যায়। আবার বর্ষার মত স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এসব বইপত্রের আলমারি বা সেলফে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। বুকসেলফের অগ্রভাগে সাধারণত বই রাখা হয়। এর পেছনের খালি জায়গায় ৪-৫টা ন্যাপথালিন ফেলে দিন। ন্যাপথলিন উবে না যাওয়া পর্যন্ত বই পোকায় কাটা থেকে নিরাপদে থাকার সাথে থাকবে সুগন্ধময়।

পিঁপড়া দূর করতে- আপনার ঘরে যদি পিঁপড়ার উপদ্রব বেশি হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে কর্পূর ব্যবহার করুন। খাওয়ার উপযোগী কর্পূর সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে নিন এবং পিঁপড়ার আনাগোনা যেখানে সেই স্থানগুলোতে এই মিশ্রণটি ছিটিয়ে দিন, দেখবেন পিঁপড়ারা উধাও হয়ে গেছে। ঘরকে পিঁপড়া মুক্ত করার এটি সবচেয়ে সহজ উপায়।

রোগ নিরাময়ে- বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয় কর্পূর এসেনশিয়াল অয়েল। এছাড়াও ন্যাপথলিন বা কর্পূর মিশ্রিত তেল বাহ্যিকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেক ব্যথা নাশক ওষুধে ন্যাপথলিন বা কর্পূরের মিশ্রণ থাকে। চুলের ত্বকের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কর্পূরযুক্ত নারিকেল তেলের ব্যবহার দেখা যায়।

ছারপোকা তাড়াতে- ছারপোকা তাড়াতে কর্পূর অত্যন্ত কার্যকরী। ছারপোকার সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিছানার চাদর ধুয়ে ফেলুন। তোষক ও জাজিম বা মেট্রেস রোদে শুকাতে দিন। তারপর একটি বড় কর্পূরের টুকরো মসলিন ব্যাগে ঢুকিয়ে বিছানা ও মেট্রেসের মাঝামাঝি স্থানে রেখে দিন। এতে বিছানা থেকে ছারপোকা দূর হবে এবং পরবর্তী আক্রমণ থেকেও রক্ষা করবে।

ব্রণ ও ব্রণের দাগ নিরাময়ে কয়েক ফোঁটা ভালমানের কর্পূর এসেনশিয়াল অয়েল অন্য একটি তেলের সাথে মিশিয়ে ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে মালিশ করলে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়। তবে মনে রাখবেন কখোনোই কর্পূর এসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা আমন্ড তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।

ত্বকের সমস্যায়- আপনার যদি চুলকানি ও র‍্যাশের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কর্পূর হতে পারে এর প্রতিকার। এক টুকরো এডিবল কর্পূর নিন এবং সামান্য পানির সাথে মেশান। আক্রান্ত স্থানটি এই দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আস্তে আস্তে চুলকানি কমে যাবে। কিন্তু কখোনোই কাটা বা ক্ষতে কর্পূর ব্যবহার করবেন না। কারণ কর্পূর রক্তের সাথে মিশে গেলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।

চুল পরা রোধে ও খুশকি দূর করতে- আপনি নিয়মিত মাথায় যে তেল ব্যবহার করেন তার সাথে কর্পূর এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল পরা কমে। চুলে শ্যাম্পু করার আগে এই তেলের মিশ্রণ মাথার তালুতে ও চুলে ব্যবহার করুন। এটি খুশকি নিরাময়েও সাহায্য করবে।

গর্ভবতী নারীর জন্য- অনেক গর্ভবতী নারীর পায়ের পেশীতে সংকোচনের সমস্যা দেখা যায়। সরিষার তেল বা নারিকেল তেলের সাথে সিনথেটিক কর্পূর দিয়ে তাপ দিন যতক্ষণ না পুরোপুরি মিশে যায়। তারপর মিশ্রণটির তাপমাত্রা কমলে কুসুম গরম অবস্থায় পায়ে মালিশ করুন। মাংস পেশীর সংকোচনের সমস্যা দূর হবে নিমেষেই।

শিশুর ঠাণ্ডায়- শিশুর বুকে কফ জমে গেলে তা দূর করতে সাহায্য করে কর্পূর। সরিষা বা নারিকেল তেলের সাথে সামান্য কৃত্রিম কর্পূর মিশিয়ে তাপ দিন। উষ্ণ অবস্থায় এই তেলের মিশ্রণটি শিশুর বুকে ও পিঠে মালিশ করুন।

মশা তাড়াতে- ঘরের অন্ধকার স্থানে যেখানে মশারা ঘাপটি দিয়ে বসে থাকে সেখানে কর্পূরের ট্যাবলেট রেখে দিন। এটি শুধু ঘরের বাতাসেই সুগন্ধই ছড়াবে তা না বরং মশার উৎপাত থেকেও মিলবে মুক্তি।

কীটনাশক হিসেবে- ন্যাপথলিন কখনো কখনো চাষের মাটিতে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকায় গাছে বসবাসকারী আপসাম নামক একজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী থাকে। এসব প্রাণী থেকে মানুষ নিরাপদে থাকার জন্য বাসায় ন্যাপথলিন ব্যবহার করে। তবে শিশুদের জন্য ন্যাপথলিন ক্ষতিকর। তাই যেখানে শিশুদের চলাফেরা বেশি সেখানে ন্যাপথলিন রাখা বা ব্যবহার করা ঠিক নয়।

বেসিন ও সিঙ্কে ব্যবহার- ন্যাপথলিন আপনার রান্নাঘরের পরিবেশ রক্ষা করবে ব্যাকটেরিয়া আর দুর্গন্ধ থেকে। ডাইনিং এর বেসিন ও রান্নাঘরের সিঙ্কে ন্যাপথলিনের ব্যবহার দেখা যায়। বেসিনে ৫-৬টা ন্যাপথলিন ফেলে রাখুন। এতে তেলেপোকা বা এ জাতীয় পোকা মাকড় বেসিন ও সিঙ্কে উঠে আসে না। সেই সাথে দুর্গন্ধও দূর হয়।

টয়লেটে ব্যবহার- টয়লেট হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াদের আবাসভূমি। লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়া ভেসে বেড়ায় নোংরা টয়লেটে। এজন্য টয়লেটও ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয়। প্রস্রাবের মধ্যে থাকে অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ইউরিয়া। অ্যামোনিয়ার কারণে প্রস্রাবে একাট ঝাঁঝালো গন্ধ তৈরি হয়। ন্যাপথলিন প্রস্রাবের ভেতরের অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া দূর করে দেয়। এতে টয়লেটের গন্ধ দূর হয়।

প্রাকৃতিক রঙ তৈরিতে - প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে কাপড় রাঙাতে ব্যবহার হয় ন্যাপথলিন। পানিতে থাকা আয়রনের জন্য কাপড়ে লালচে ভাব দূর করতে নীল ব্যবহৃত হয়। এই নীল বা ইনডিগো প্রস্তুতির অন্যতম উপাদান হল ন্যাপথলিন বা কর্পূর। এছাড়াও কাপড়, সিল্ক, কাগজ প্রভৃতির রং প্রস্তুতিতে ন্যাপথলিনের প্রয়োগ দেখা যায়।

গরম কাপড় ভালো রাখতে- উলের সোয়েটার, চাঁদর, বা অন্য সব গরম কাপড় শুধু শীতকালেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাও ঢাকার মত শহরে মাস দুয়েকের বেশি না। এছাড়া বছরের অন্যসময় এগুলো আলমারি বা বাক্স বন্দি হয়েই পড়ে থাকে। এভাবে লম্বা একটা সময় এই কাপড় বদ্ধ হয়ে থাকতে থাকতে এতে গুমোট ভাব আসে। এছাড়া পোকামাকড়ের উপদ্রব আর ফাঙ্গাসের আক্রমণ তো থাকেই। এই সমস্যা খুব সহজেই দূর হবে ন্যাপথলিন বা কর্পূরের ব্যবহারে।

জেনে গেলেন, ন্যাপথলিন বা কর্পূরের উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যবহার। গ্রাম থেকে শহর, নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হচ্ছে ন্যাপথলিন বা কর্পূর। যার ব্যবহার ছাড়া আমাদের একটা দিনও কল্পনা করা যায় না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড