ডা. নাহিদ হাসান
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাসিয়াকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আমি কখনো ভাবিনি এ লেখাটা আমাকেই লিখতে হবে। এটা সত্যি যে আমার দুঃখের গল্প লিখতে ভালো লাগে, কিন্তু এ লেখাটা লিখতে মোটেও ভালো লাগছে না। একদমই না। আমি ব্যাকুল হয়ে বার বার চাইছি আমার প্রতিটা গল্পের মতো এ লেখাটিও অসত্য হয়। কিবোর্ডের ওপর আমার কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো মিথ্যা হোক। মিথ্যা হোক। মিথ্যা হোক। আমার গল্পের চরিত্রগুলোর মতো জাসিয়ার গল্পটাও হোক মিথ্যা। কাল্পনিক।
জাসিয়া আমার ছোটবোন। জাসিয়া তোমার বন্ধু। জাসিয়া আমাদের মেয়ে। প্রিয়জন। জাসিয়াকে আপনারা চিনবেন। তাকে তোমরা তুমি বলে ডাকো। তোরা বলিস তুই। আর আপনারা তাকে আপনি বলে সম্বোধন করেন। জাসিয়াকে না দেখলেও আপনারা চিনবেন। খুব ভালো করে চিনবেন। মুখচ্ছবি না হোক, আমি জানি তার ভেতরের শ্বাশত সুন্দর মানুষটাকে আপনারা চিনতে ভুল করবেন না কখনোই। জাসিয়া সন্ধানী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার দপ্তর সম্পাদক।
২০১৬-১৭ সেশনে, ডাক্তার হওয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫৮তম এমিবিবিএস ব্যাচে ভর্তি হয়। মানুষের জন্য কাজ করার এ মহিমান্বিত রানওয়েতে অন্যদের চেয়ে সে আগেভাগেই পা ফেলে। যোগদান করে সন্ধানীতে। দিনে দিনে সন্ধানী হয়ে ওঠে তার দ্বিতীয় পরিবার। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে টুকটুক করে মেয়েটা অফিসে কাজ করে। খাতাগুলো জড়ো করে রাখে। ফ্রিজে অগোছালো ব্লাড ব্যাগগুলো গুছিয়ে রাখে। খাতার নাম্বার মেলায়। ভ্যাক্সিনের হিসাব করে। বোর্ডে পিন দিয়ে আটকায় নতুন ছবি। ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতি নেয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলপনা আঁকে। কর্কশিট দিয়ে বানায় শত শত রক্তবিন্দু। পরম মমতায় নিভৃতে কাজ করে যায় জাসিয়া।
জাসিয়ার কাছে আপনারা একদিন এসেছিলেন, মনে আছে? সে কিন্তু আপনাদের ঠিকই মনে রেখেছে। মনে রেখেছে আপনাদের মুখ নয়, ভেতরের মানুষটাকে। সে খুব ভালোভাবে বুঝেছে মানুষের বেঁচে থাকার তীব্র বাসনা। তাকে আপনারা ব্লাডের জন্য ছুটতে দেখেছেন। অসহায় মানুষের জন্য তার মুখ দুশ্চিন্তায় চুপসে যেতে দেখেছেন, কিন্তু কেউ কি লক্ষ্য করেছেন, অমন হাসি খুশি কাজে-কর্মে মুখরিত মেয়েটার জীবনে আঁধার ঘনিয়ে আসতে চেয়েছে। নিতান্ত অগোচরে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে অত্যন্ত অনাড়ম্ভরভাবে জাসিয়ার একটা ভয়ংকর রোগ ধরা পড়ে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওশাদ আলী নিজে বায়োপসি নেন। কিছুদিন পর রিপোর্ট আসে। বুঝতে আর কিছু বাঁকি থাকে না। যে রক্তের জন্য তার আপ্রাণ ছুটে চলা, যে রক্ত মানুষের হাতে হাতে বিলিয়েছে ফুলের মতো, সে রক্তের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে দানব। দানবের নাম নন-হজকিন্স লিম্ফোমা। তার এখন মেডিকেল কলেজে প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা, ওয়ার্ডের রোগীদের রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা, ভ্যাকসিনের হিসাব রাখার কথা, কিন্তু সে পড়ে আছে ঢাকা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডা. অখিল রঞ্জনের তত্ত্বাবধানে হেমাটোলজি বিভাগে তার কেমো চলছে। ইতোমধ্যে ৬টা কেমো হয়েছে। বর্তমান পিইটিসিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আরও ৩টা কেমো দেওয়ার পর অটোলোগাস বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করতে হবে। ডা. অখিল রঞ্জনের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। এই হয়তো শেষ প্রচেষ্টা। এই মুহূর্তে জাসিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বিপুল অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অবস্থা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
অসম্ভব অমায়িক-বিনয়ী-লাজুক প্রকৃতির মেয়েটা প্রথমে কাউকে এ ব্যাপারগুলো জানাতে চায়নি। নিজের সব দুঃখগুলো বুকের মধ্যে পাথর চাপা দিয়ে রাখতে চেয়েছে। ৬টা কেমো পর্যন্ত যে অজস্র টাকা (প্রায় ১৫ লক্ষ) খরচ হয়েছে তার সবটাই করেছেন জাসিয়ার মধ্যবিত্ত বাবা। তিনি পেশায় একজন সরকারি চাকরিজীবী। দিন দিন তিনি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ভদ্রলোকের তিন মেয়ে। সুন্দর একটা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, কিন্তু এ দানবীয় অসুখের জন্য সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সব শেষের আগে শেষ কথা বলে একটা ব্যাপার থাকে, থাকে কিন্তু। আমরা ইচ্ছে করলেই শেষের কবিতার আগেই একটা নতুন জীবনের কবিতা লিখতে পারি, জাসিয়া ও তার পরিবারের পাশে আমরাই দাঁড়াতে পারি, পারি কিন্তু।
আমাদের একটু স্বদিচ্ছা, একটু সাহায্যের হাত বাড়ালেই একটা পরিবার ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাবে, সবচাইতে বড় কথা একজন মানুষ ফিরে পাবে প্রাণ যে প্রাণের ভেতরে আজীবন খেলা করেছে উজ্জ্বল স্বপ্ন, আমাদের এক একটা সাহায্যের হাতই এখন রূপকথার সোনার কাঠি রূপোর কাঠি হয়ে ফোটাবে জীবনের আরাধ্য ফুল, ময়ুরের পালকে আবারও লিখবে জীবনের অসমাপ্ত মহাকাব্য। আমাদের এমন একফোঁটা ভালোবাসা পেলেই, হাসপাতালের বদ্ধ ঘর ছেড়ে আবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ফিরে আসবে জাসিয়া। আমাদের জাসিয়া। আপনাদের জাসিয়া। তোমাদের জাসিয়া। তোদের জাসিয়া। মৃত্যু দুয়ার থেকে ফিরে আবারো সে ডি কে আগরওয়ালা সরণী ধরে হেঁটে যাবে লেকচার ক্লাসে-ওয়ার্ডে-সন্ধানীতে, ডাক্তার হয়ে মানুষের জন্য কাজ করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আপনার আমার আমাদের প্রিয়জনের রক্তের জন্য একদিন এই জেসিয়াই এর ওর দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে, বিশ্বাস করুন।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : অ্যাকাউন্টের নাম. মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া (জাসিয়ার বাবা), অ্যাকাউন্ট নাম্বার : ১৪১৭৫০১০০৬০৩৩, সোনালী ব্যাংক, নিউ মার্কেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্রাঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অথবা অ্যাকাউন্টের নাম. মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া, অ্যাকাউন্ট নাম্বার : ৬০৪৩৪০০০৬৩১, ব্যাংক এশিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অথবা বিকাশ করতে পারেন-০১৯১৪-৫৩১৮১৮ (জাসিয়ার মা), ০১৭১৬-৮৭৪৩৮১ (জাসিয়ার বাবা), রকেট অ্যাকাউন্ট : ০১৭১৬-৮৭৪৩৮১৪ (জাসিয়ার বাবা)।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড