সৈয়দ মিজান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির গেটে শুক্রবার দুপুরের দিকে দেখা গেল বেশ একটা জটলা। একটা ছোট্ট টেবিলের ওপর কয়েকটি প্লেট, দুটো হাড়ি, আরও দুটি বাক্সে কিছু খাবার রাখা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে খাবারের কোনো আয়োজন চলছে। এগিয়ে যেতেই দেখা গেল ডিম ভুনা, মুরগির মাংস, মাছ ভাজা, বেগুন ভাজা, ভাত, ডাল আর পায়েস নিয়ে বসেছেন কয়েকজন তরুণ- তরুণী। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী তারা। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী খাবার খেয়ে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। একটি বাক্সে সেখানে লেখা “মামার জন্য”।
কৌতূহল মেটাতে গিয়ে জানা গেল, যিনি এই আয়োজনটি করেছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা সুলতানা। তার মামা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। সিসিইউতে রাখতে বেশ খরচ তাছাড়া অর্থবিত্তহীন মামার পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করার কোনো সামর্থ নেই। তাই দেশবাসীর সহযোগিতা নিয়েই সারিয়ে তুলতে চান অসুস্থ মামাকে।
খাবারের আয়োজন করার কথাটি হঠাৎ করে মাথায় আসে। বন্ধু-বান্ধব আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং সুফিয়া কামাল হলের মধ্যেও এই আয়োজন করেন। যারা ফারাজানা সুলতানার মামাকে চিকিৎসায় সহায়তা করতে চান তারা বক্সে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। সবাই যে খাচ্ছেন তাও না।
গত রাতে ফারজানা সুলতানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিল। সেখানে তিনি তার মামার অসুস্থতার কথা লিখেছিলেন। তিনি ইন্টার্ন টিচার হিসেবে কাজ করছেন উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কীভাবে তার ছাত্র-ছাত্রীদের ভালবাসা পেয়েছেন মামার জন্য সেটিও তুলে ধরেছেন। “উদয়নে সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে আমার মাঝে মাঝে মুড অফ হয়ে যাচ্ছে। ক্লাসের মাঝের দিকে অনেকে বলল, “মিস আজ এমন মনমরা কেন মাঝে মাঝে?” বললাম, “মামার আর্থিক সংকট কিন্তু কদিনের মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে, নয়ত অবস্থা বেগতিক হতে পারে। বিএসএমএমইউ-এর সিসিইউতে ভর্তি আছেন।“ ক্লাস শেষে ক্যাপ্টেন বলল ওদের সেকশন থেকে টাকা তুলে দিবে। ইন্টার্ন টিচার হওয়ায় নিষেধ করলে তারা পারসোনালি হেল্প করতে চাইল এবং চার হাজার টাকা পাঠিয়েছে।“
টিএসসির গেটে এভাবেই সাজিয়েছিলেন খাবারের টেবিল। (ছবি : সংগৃহীত)
স্ট্যাটাসে ফারজানা সুলতানা লিখেন তার মামার শরীরের অবস্থার অবনতির কথা। “স্কুল শেষে হাসপাতালে গিয়ে আকাশ থেকে পড়লাম। মামি জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি! তিনি কাউকে কল দিতে পারেন না, শুধু রিসিভ করতে পারেন। ৯৯ ভাগ ব্লক থাকায় দুপুরে একদম বাজে অবস্থা শুরু হলে মামির ডাকাডাকিতে সবাই চলে এসে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। অপারেশনের যে ১৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে সেটাও তখন দিতে পারেন নি। চারশ টাকা কে কে যেন নিয়েছে। ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় পরদিন রিঙয়ের টাকা কোম্পানিকে দেয়ার কথা বলে ২টা রিং পড়িয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। আজ কোম্পানির অর্ধেক টাকা পরিশোধ করে সোমবার পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছি রিকুয়েস্ট করে।“
তিনি স্ট্যাটাসে আরও জানান, “প্রায় ৪০ হাজার টাকা এই কদিনের মধ্যে দরকার। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ৬ মাস পরে বাকি আর একটা রিং পড়াতে হবে।“
“টাকা চেয়ে কতটুকু পাব জানিনা, আজ ১২ জন ক্লাসমেটের জন্য পরিক্ষামূলকভাবে খাবার রান্না করে পাঠিয়েছিলাম। প্রীতি, নওশিন ও শেফা আপুর সাহায্য ছাড়া ঠিকঠাক করতে পারতাম না। খেয়ে দেয়ে মোটামুটি তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়ায় কাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সুফিয়া কামাল হল ও টিএসসিতে বিভিন্ন রকম ভর্তা, ভাত, মাছ, মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের স্টল দিতে চাচ্ছি। এক কোণে "মামার জন্য" লেখা বক্সে যে যা পারে সাহায্য দিবে। ছেলে এবং মেয়ে ভলান্টিয়ার দরকার। মেয়েরা সুফিয়া কামাল হলে আমার সাথে রান্না করবে আর ছেলেরা স্টলের দায়িত্বে থাকবে। যারা ভলান্টিয়ার হবে তারা অর্ধেক টাকায় দুপুরের খাবার খেয়ে মামার জন্য একটু সাহায্য করবেন।“
তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক বন্ধু, সহপাঠী এগিয়ে এসেছে তার পাশে। ফারজানা সুলতানার মামার চিকিৎসার জন্য যে টাকার প্রয়োজন তার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফারজানা।
সাহায্য পাঠাতে বিকাশ : ০১৭৩৯৮৯৩৫০৪ ০১৭৪৭৭১২৬৫৯ ০১৯৯৫৩২৬৩০৩ রকেট : ০১৫২১৩১৯১০৯৫ ০১৯৯৫৩২৬৩০৩০
ওডি/এসএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড