মামুন সোহাগ
মোড়ের দোকান থেকে ষাটোর্ধ্ব রহমত মিয়া কেবল জেনেছে দূরদেশে এক রোগ শুরু হয়েছে। ‘ছুইলে পরেই রোগে ধরতেছে, মানুষ মইরা যাইতেছে’ এসব শুনে ভীতসন্ত্রস্ত হলেও থেমে যাননি। গ্রামের ছেলে হীরকের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে এ ভাইরাসের আদ্যোপান্ত। গোটা দেশে এমন হাজার হাজার রহমত মিয়াদের সেবা করে যাচ্ছে তরুণেরা। কখনো সচেতন করে, কখনো সহায়তা করে।
করোনাভাইরাস সতর্কতায় বেশির ভাগ মানুষ পরিবার ও নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাচ্ছেন না। কিন্তু এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সহায়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসবী সংগঠনগুলো। দেশের এমনই এক স্বেচ্ছাসবী সংগঠন ‘করোনা স্কোয়াড’। ঝিনাইদের সন্তান ও নাট্যকর্মী হীরক মুশফিকের নেতৃত্বে একদল তরুণ করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে লাগাতারভাবে কাজ করে চলেছেন।
গ্রামাঞ্চলের অসচেতন মানুষকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করাই এই তরুণতূর্কীদের মূল লক্ষ্য। কাজের পরিধি হিসেবে তারা ঝিনাইদহের শৈলকূপার ভাটই বাজার ও স্থানীয় গ্রামগুলোতে মানুষের সহায়তা করে চলেছে। দেশে করোনা আবির্ভাবের পর গুছিয়ে ওঠা এ সংগঠনের কাজের ক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে নানা আয়োজন, সফলতার গল্প। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণকে সহায়তা করা, কোয়ারেন্টিন, লকডাউন সম্পর্কিত ধারণা প্রদান এবং অসহায়, কর্মহীন মানুষকে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মাধ্যমে সাহায্য করা, ইফতার সামগ্রী, ইদ উপহার, নগদ অর্থ প্রদানের মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা স্কোয়াডের স্বপ্নদ্রষ্টা হীরক মুশফিকের নেতৃত্ব কাজ করেছে প্রায় ২০ জনের অধিক সদস্য। তারা সকলেই তরুণ, শিক্ষার্থী। করোনাকালের ছুটিকে কাজে লাগাতে লেগে পড়েছেন সকলে মানুষের সেবায়।
ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হীরক মুশফিক। তারই নেতৃত্বে এবং সদিচ্ছায় মফস্বল শহর ঝিনাইদহ থেকেও বেশ খানিকটা দূরের গ্রামগুলোতে পৌছে যাচ্ছে ত্রাণসামগ্রী, অর্থ সহায়তা ও সচেতনতার বাণী।
হীরক মুশফিক বলেন, ‘আমরা কাজ করে চলেছি তিন মাস হলো, করোনাকালে মানুষকে সহযোগিতার লক্ষ্যে আমাদের পথ চলা শুরু। আমরা আসলে নানা পরিস্থিতিতে ঝিনাইদহের গ্রামাঞ্চলে সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে চলেছি। নিয়মিত সহযোগিতা অথবা সেবার গাড়ি ছাড়াও আমরা করোনাট্য উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, যা বেশ ফলপ্রসূ। প্রত্যশা করি সংকট যতদিন থাকবে করোনা স্কোয়াড মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে সমাজে ভালো কাজ করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা আসবেই। তবে আমাদের কাজটিকে অসহযোগিতা করা মানুষের সংখ্যা কম বরং বেশিরভাগ মানুষ ব্যাপারটিকে ভীষণ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন, নানাভাবে সাহস জুগিয়ে চলেছেন বলেই কাজটি করে যেতে পারছি।’
আরও পড়ুন : দুঃসময়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে অসহায়দের পাশে কবি রুদ্র মানিক
দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকতে করোনা স্কোয়াড টিম খাদ্যদ্রব্য বিতরণ, ইফতার সামগ্রী, ইদ সামগ্রী প্রদান, ভ্রাম্যমাণ সেবার গাড়ির মাধ্যমে ছয়শোর অধিক পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, পাঁচশো মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, ১০টি গ্রামের মসজিদসহ পাব্লিক প্লেসে জীবাণু নাশক স্প্রে ছিটিয়েছেন। এছাড়া নগদ অর্থ প্রদান, স্থানীয় লোক শিল্পী, সাপুড়েদের মধ্যে উপহার সামগ্রী প্রদান, নিয়মিত মাইকিং এর মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা, বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন ভাবে নাট্য অভিনয়ের উপস্থাপনের মাধ্যমে সচেতনায়ন। যার নাম দেয়া হয়েছে করোনাট্য'।
শুরুর দিকে পুরো কাজের অর্থের যোগাড় করেছিলো স্বেচ্ছাসেবক নিজেরাই। পরবর্তী সময়ে তাদের কার্যক্রম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজে থেকেই আর্থিক বা পণ্য দিয়ে অংশগ্রহণ করে এলাকার মানুষজন। বিশেষ করে এলাকার শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ সুপার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সচেতন মানুষের একাংশ সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছে দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকা এ সংগঠনকে।
শুধু মাঠে নেমে হাড়ভাঙুনি পরিশ্রমে মানুষের পাশে থেকেই ক্ষ্যান্ত হননি এ স্বেচ্ছাসেবকেরা। নিয়মিতভাবে ফেসবুক লাইভ টকশোতে মানুষকে সচেতন করছেন। করোনা স্কোয়াডের প্রতিষ্ঠাতা হীরোক মুশফিকের সঞ্চালনায় এসব টকশোতে উপস্থিত থাকছেন এপার ওপার বাংলার অভিনয় শিল্পীসহ আরও অনেকেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড