আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইতিহাস গড়ে চতুর্থ বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পর অতি মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারটি অর্জন করেন তিনি।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল পৌনে চারটায় রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবার ‘বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের পরীক্ষামূলক পদ্ধতির জন্য’ অর্থনৈতিক বিজ্ঞানের সম্মানজনক নোবেল পুরষ্কারটি প্রদান করা হয়। ক্ষেত্রটিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, এস্থার ডুফলো এবং মাইকেল ক্রেমার। এদের মধ্যে অভিজিৎ হচ্ছেন বাঙালি। এছাড়া তিনি এবং এস্থার ডুফলো হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী।
যদিও অনন্য এই বিজয়ের পর এরই মধ্যে তার সম্পর্কে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে তার সঙ্গে বামপন্থিদের একটি মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা অসীম দাশগুপ্ত। তার মতে, ‘অভিজিতের এই কর্ম পদ্ধতি ভারতে প্রয়োগ করা হলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরাট সুফল মিলবে।’
পশ্চিমবঙ্গের এই সিপিএম নেতা গণমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে বলেছিলেন, ‘অভিজিতের নোবেল পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে বৈষম্য কমানোর ওপরই কেবল সেখানকার উন্নয়ন নির্ভর করে। অভিজিৎ সব সময় এটাই বলতে চেয়েছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবত আমরাও এটিই বলে আসছি। তাই এক্ষেত্রে আমাদের একটি মিল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আরও একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো যে, অভিজিৎ কেবল তাত্ত্বিক কারণেই এই নোবেল পুরস্কারটি পাননি, বিষয়টি বারংবার তিনি প্রয়োগও করেছিলেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজ্যের সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘এ ধরনের গবেষণা ভারতের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরাও এ কথাই অনেকদিন যাবত বলে আসছি; যেখানে মোট দুই ধরনের উন্নয়নের কথা বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ১৯৯১ সাল থেকে যে পদ্ধতিটা চলে আসছে, সেখানে উন্নয়নের জন্য কেবল বিদেশি ঋণের কথা বলা হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হয়। এই ভাবনায় বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে পৃথকভাবে কিছুই ভাবা হয় না। মনে করা হয়, বৈষম্য আপনা-আপনি কমে আসবে।’
এ দিকে নোবেল পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত হতে নারাজ বাঙালি এই অর্থনীতিবিদ। এ জন্য নাকি নোবেল পাওয়ার খবর পেয়েই তিনি ঘুমিয়ে যান। এ সম্পর্কে অভিজিৎ বলেন, নোবেল পাওয়ার খবর পেয়েই আমি ঘুমাতে চলে যাই। এখন আমাকে ফোন করছে সবাই, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
১৯৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য কোথাও কোথাও তার জন্ম মহারাষ্ট্রে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিজিতের বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। আর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অর্থনীতির অধ্যাপক। অর্থাৎ, অর্থনীতির দুই অধ্যাপকের ছেলে অভিজিৎ অর্থনীতিতেই নোবেল পেয়েছেন।
অভিজিৎ বেড়ে উঠেছেন কলকাতায় এবং এই শহরেই অনেকটা সময় ছিলেন। তিনি কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল শেষ করে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ালেখা করেছেন। এরপর দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষকতা করেছেন। অভিজিৎ এর স্ত্রী এস্থার ডুফলো ফরাসি অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ডুফলোও এমআইটি এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন।
আরও পড়ুন :- ২০১৯ সালের নোবেল বিজয়ী যারা
অপর দিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর টুইটারে অভিজিৎকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট বার্তায় মমতা লেখেন, ‘সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোবেল পাওয়ার জন্য অভিনন্দন। আরও এক বাঙালি পুরো জাতিকে গর্বিত করলেন। আমরা খুবই আনন্দিত।’
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড