আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তুরস্কের চলমান অভিযানে নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) পর্যন্ত অন্তত চার শতাধিক কুর্দি সেনাকে ‘নিউট্রালাইজ’ করেছে তুরস্ক। কোনো সন্ত্রাসীকে হত্যা, আটক বা কোনো সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করলে তুরস্ক নিউট্রালাইজ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তুর্কি জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এরই মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
অঞ্চলটির কুর্দি নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ন্যাটো মিত্র তুরস্কের হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাটি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৪ অক্টোবর) তিনি তুরস্কের দুইটি কোম্পানি এবং তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণাটি দেন। একই সঙ্গে তুরস্কের সঙ্গে দশ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত ও তুরস্কের স্টিলের ওপর ৫০ শতাংশ কর বসানো হয়েছে বলেও জানা যায়।
এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তুরস্ক যদি এমন মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক পথ অব্যাহত রাখে তাহলে খুব দ্রুতই তাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তাছাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া সেনাদের পুনরায় সেখানে মোতায়েন করা হবে।’
টুইটার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি; তুর্কিদের সামরিক অভিযানে বেসামরিকদের বিপদগ্রস্ত করেছে। যে কারণে বর্তমানে অঞ্চলটির শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এক রকম হুমকির মুখে পড়েছে।’
বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সঠিকভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পরিষ্কার করে বলেছি: তুরস্কের এসব কর্মকাণ্ড মানবিক সংকট এবং সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের শর্ত তৈরির কারণ হতে দাঁড়াচ্ছে। তাই তাদের অবশ্যই ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুসহ বেসামরিক মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে অঞ্চলটিতে আটক আইএস জঙ্গিদের সব ধরনের দায় পর্যন্ত তাদের ঘাড়ে বর্তাবে।’
এ দিকে অবিলম্বে এই সেনা অভিযান বন্ধ করার জন্য তুর্কি প্রশাসনকে এরই মধ্যে অনুরোধ জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরান। তাছাড়া তুরস্কের এই আগ্রাসন ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত, ইতালির মতো বহু দেশ। এমনকি সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থন কিন্তু তুর্কি প্রশাসনের প্রতিই আছে।
এত কিছুর পরও এরদোগান কিন্তু একরোখা। নিজের টুইট পোস্টে ‘পিস স্প্রিং’ (শান্তির বসন্ত) আনার কথা উল্লেখ করে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করেছেন তিনি।
কোনো দেশের পরোয়া না করে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) উল্টো ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) হুমকি দিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘তুরস্কের এই অভিযানকে আগ্রাসনের তকমা দেওয়া হলে আঙ্কারা থেকে অবিলম্বে ৩৫ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সরাসরি ইউরোপেই ফেরত পাঠানো হবে।’
অপর দিকে সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে তুর্কি হামলা অব্যাহত থাকায় দেশটির ওপর অচিরেই এক বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমনকি ন্যাটো বাহিনীতে তুরস্কের সদস্য পদ থাকা নিয়েও এবার আলোচনা শুরু হয়েছে বলে এরই মধ্যে দাবি করেছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স।
আরও পড়ুন :- তুরস্ককে ঠেকাতে এবার সিরীয় সেনাদের সঙ্গে সমঝোতায় কুর্দিরা
এর আগে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর ওপর সশস্ত্র অভিযান শুরু করে তুরস্ক। যা এখনো অব্যাহত আছে।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড