আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের চলমান অভিযানে নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) পর্যন্ত অন্তত চার শতাধিক কুর্দি সেনাকে ‘নিউট্রালাইজ’ করেছে তুরস্ক। কোনো সন্ত্রাসীকে হত্যা, আটক বা কোনো সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করলে তুরস্ক নিউট্রালাইজ শব্দটি ব্যবহার করে। তুর্কি জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তুরস্কের চলমান এই অভিযানকে আগ্রাসনের তকমা দিয়ে খুব শিগগিরই দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন। যা চলতি সপ্তাহেই জারি হতে পারে বলে সূত্রের বরাতে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দি সেনাদের রক্ষার্থে আমাদের সৈন্যদের কাজে লাগানোর বিষয়টি এখন পর্যন্ত বিবেচিত হয়নি। যে কারণে গত রবিবার (১৩ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সকল মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন জানান, তুরস্ককে লক্ষ্য করে খুব শক্তিশালী নতুন নিষেধাজ্ঞার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে তুরস্কের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যাচ্ছে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে বহুবার কংগ্রেস থেকে সমালোচিত হয়েছি। সেই আলোচনায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান; উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যা নিয়ে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় আলোচনার পর এবার তুরস্কের বিরুদ্ধে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি।’
টুইট বার্তায় তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তুত, হয়তো তাদের নতুন বিল প্রয়োজন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে এক বড় ধরনের সচেতনতা রয়েছে। তুরস্ক হয়তোবা এটা চেয়েছে, না করে আর উপায় নেই। সঙ্গে থাকুন।’
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষা।
এ দিকে অবিলম্বে এই সেনা অভিযান বন্ধ করার জন্য তুর্কি প্রশাসনকে এরই মধ্যে অনুরোধ জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরান। তাছাড়া তুরস্কের এই আগ্রাসন ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত, ইতালির মতো বহু দেশ। এমনকি সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থন কিন্তু তুর্কি প্রশাসনের প্রতিই আছে।
এত কিছুর পরও এরদোগান কিন্তু একরোখা। নিজের টুইট পোস্টে ‘পিস স্প্রিং’ (শান্তির বসন্ত) আনার কথা উল্লেখ করে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত কুর্দিবাহিনীর বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করেছেন তিনি।
কোনো দেশের পরোয়া না করে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) উল্টো ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) হুমকি দিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘তুরস্কের এই অভিযানকে আগ্রাসনের তকমা দেওয়া হলে আঙ্কারা থেকে অবিলম্বে ৩৫ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সরাসরি ইউরোপেই ফেরত পাঠানো হবে।’
অপরদিকে সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে তুর্কি হামলা অব্যাহত থাকায় দেশটির উপর অচিরেই এক বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমনকি ন্যাটো বাহিনীতে তুরস্কের সদস্য পদ থাকা নিয়েও এবার আলোচনা শুরু হয়েছে বলে এরই মধ্যে দাবি করেছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স।
আরও পড়ুন :- তুরস্ককে ঠেকাতে এবার সিরীয় সেনাদের সঙ্গে সমঝোতায় কুর্দিরা
এর আগে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সমর্থিত কুর্দিবাহিনীর ওপর সশস্ত্র অভিযান শুরু করে তুরস্ক। যা এখনো অব্যাহত আছে।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড