• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘নিজে ধর্ষিত হয়েছি, এবার ভয়ে আছি সন্তানদের নিয়ে’

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১২
ধর্ষণের শিকার নারী
ধর্ষণের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকান আলোকচিত্র সাংবাদিক সারাহ মিডগ্লে। (ছবিসূত্র : বিবিসি নিউজ)

দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৭ বছর বয়সী আলোকচিত্র সাংবাদিক সারাহ মিডগ্লে বর্তমানে দুই কন্যা সন্তানের জননী। দেশটির প্রধান শহর জোহানেসবার্গে বসবাসকারী এই নারী গত এক দশক আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। মূলত তখন তিনি যে মানসিক আঘাতটি পেয়েছিলেন, সেটি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি এই সাংবাদিক।

দীর্ঘদিন আগে নিজের সঙ্গে ঘটা সেই কঠিন ও দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'বিবিসি নিউজে'র সঙ্গে কথা বলেছেন ফটোসাংবাদিক সারাহ।

২০১০ সালে প্রথম নিজের সাবেক প্রেমিকের হাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এই নারী। টানা আঠারো মাস যাবত সেই প্রেমিক তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছিলেন বলে জানান তিনি। সারাহের ভাষায়, 'আমি তখন অনেকবার তাকে ছেড়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম, যদিও সে এরপরও আরও বেশি সহিংস আচরণ শুরু করেছিল।'

৩৭ বছর বয়সী এই আলোকচিত্র সাংবাদিক আরও বলেন, 'আমাকে লাথি মারা, গলা টিপে ধরাসহ আরও বিভিন্নভাবে নির্দেশ করা হতো। এমনকি আমি তাকে যদি ছেড়ে যাই, তাহলে সে আমার মেয়েদের ধর্ষণ ও তাদের হত্যা করবে বলেও হুমকি দিয়েছিল। তখন একবার সে আমাকে ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দিয়েছিল।'

সারাহ বলেন, 'এসব ঘটনা আমি কখনোই কারও কাছে বলিনি কারণ এটি ছিল আমার জন্য অত্যন্ত লজ্জা এবং বিব্রতকর একটি বিষয়।' তার মতে, 'আমি তখন সম্পূর্ণই পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। এমনকি আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে, সে আমার সন্তানদেরও ক্ষতি করতে পারে।'

ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দশ দিন পর সে আমার বাড়ি এসেছিল। তখন আমাকে বলেছিল, সে শেষবারের মতো সহযোগিতা চায়। তার ভাষায়, ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থানরত একজন চাচার খামারে যাওয়ার মতো পয়সাও তার হাতে নেই। যদিও তখন সে আমার কাছে অঙ্গীকার করেছিল যে, তাকে সেখানে পৌঁছে দিলে আমাদের জীবনের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।'

নির্যাতনের শিকার এই নারী বলেন, 'আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম, আমাকে সে একটি যন্ত্রণামুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু গাড়িতে করে তাকে দিয়ে আসার সময়ই আমি বুঝতে পারলাম যে, সে আসলে হেরোইন সেবন করে। তার সঙ্গে আমার কথা ছিল, তাকে খামার বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়েই আমি ফিরে আসব। যদিও যখন আমি তাকে নিয়ে খামারে পৌঁছালাম সে দৌড়ে এসে আমার চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে গাড়ি থেকে বের করে ফেলে।'

'বিবিসি নিউজ'কে সেই নারী সাংবাদিক বলেছেন, ‘আমি গাড়ির বাহিরে পড়ে গেলে সে আমার মাথায় লাথি মারে। আর এতেই আমি মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারাই। পরবর্তীতে যখন জ্ঞান ফিরল তখন খামারের বাইরে একটি কোয়ার্টারে আমার ওপরে তাকে দেখতে পাই। এ সময় তার এক বন্ধুও তার সঙ্গে যোগ দিল। এরপর তাদের নির্যাতনের কারণে আমি আবারও জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি তারা সবাই চলে গেছে, আর খামারের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।'

তিনি বলেন, 'এ সময় পুলিশি সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্স এসে আমাকে উদ্ধার করে। আমার শরীরে বেশ গভীর গভীর ক্ষত ছিল। যে কারণে তখন আমাকে একটি ছোটো অপারেশনও করতে হয়। অনেক সময় লাগে সেই ধাক্কা থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করতে।'

সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন

সারাহের ভাষায়, 'ছোট বেলায় একবার যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর থেকে থেরাপি নেওয়ার অভিজ্ঞতাও ছিল আমার। তবে ভয়ঙ্কর বিষয়টি হলো যে, ধর্ষণের শিকার এক মাকে এমন যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হবে, যার দুটি সন্তান রয়েছে।'

আরও পড়ুন :- কাশ্মীর ইস্যুতে বিজেপির তোপের মুখে মালালা

তিনি বলেন, 'আমি তখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এই ভেবে যে, আমি যে ঘটনার শিকার হয়েছি, তেমনটি যদি আমার সন্তানদের ক্ষেত্রেও ঘটে! মূলত এর পর থেকেই আমি নিজের মেয়েদের বোঝাতে শুরু করি যে, আমি সবসময়ই তাদের জন্য একমাত্র নিরাপদ জায়গা। তারা যেন সবসময় মাকে বিশ্বাস করে এবং মা হিসেবে আমিও সন্তানদের বিশ্বাস করি। তবে এখনো আমি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছি।'

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড