• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যে কারণে দীর্ঘ হচ্ছে আফগানিস্তান যুদ্ধ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৭
তালেবান
ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই তালেবানদের সঙ্গে চলা শান্তি আলোচনা বাতিল করে দিয়েছেন। অথচ এটি বাতিল না হলে দুপক্ষই হয়ত একটি সমঝোতায় পৌঁছে যেত।

সমঝোতা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তান যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র কেন যুদ্ধ করছে এবং কেনইবা এটি এতো দীর্ঘায়িত হলো। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

টুইন টাওয়ার হামলা

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন। এই হামলার জন্য দায়ী করা হয় আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে। ওই সময়টায় আফগানিস্তান শাসন করছিলো ও বিন লাদেনকে সুরক্ষা দিচ্ছিল তালেবান ইসলামি উগ্র গোষ্ঠী। কিন্তু তারা লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়।

টুইন টাওয়ার হামলার এক মাস পর আফগানিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আরও কয়েকটি দেশ যোগ দিলে দ্রুতই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় তালেবান। কিন্তু তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বরং আবার ফিরে এসেছে। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আফগান সরকারের পতন ঠেকাতে এবং তালেবানদের রক্তক্ষয়ী হামলায় ঠেকাতে লড়াই করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিমান হামলার ঘোষণা দেন ২০০১ সালের ৭ই অক্টোবর। তিনি বলেছিলেন, এ মিশন হলো আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং তালেবানদের সামরিক সক্ষমতায় আঘাত করা।

শুরুতেই তালেবানদের সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আল কায়েদার প্রশিক্ষণ শিবিরেও আঘাত হানা হয়। এরপর ১৮ বছর পার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশন সফল হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই।

তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ প্রথমে নিয়েছিল ১৯৯৬ সালে এবং পরে দুবছরের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা উগ্র ইসলামি পন্থা অনুসরণ করে এবং প্রকাশ্যে শাস্তি কার্যকরের পদ্ধতি চালু করে।

যুক্তরাষ্ট্র হামলা শুরুর দুই মাসের মধ্যে তালেবানের পতন হয় ও তাদের যোদ্ধারা অনেকেই পাকিস্তানে চলে যায়। ২০০৪ সালে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকার ক্ষমতা নেয়। যদিও পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় তালেবানদের ব্যাপক সমর্থন ছিল।

তালেবান মাদক পাচার, খনি নিয়ন্ত্রণ ও কর আদায় করে শত মিলিয়ন ডলার আয় করে। যেহেতু তালেবান একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছিল তাই আন্তর্জাতিক বাহিনী আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে থাকে।

২০১৪ সালে ন্যাটোর আন্তর্জাতিক বাহিনী তাদের মিশন শেষ করে তালেবানদের সঙ্গে লড়াইয়ের দায়িত্ব আফগান বাহিনীকে দেয়। কিন্তু সেটিই তালেবানকে সুযোগ করে দেয় এবং তারা বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে এবং সরকারি বাহিনী ও বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলা করতে থাকে। গত বছর আফগানিস্তানের ৭০ ভাগ এলাকায় তালেবান সক্রিয় বলে জানতে পারে বিবিসি।

তালেবানের উত্থান যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের আগে থেকেই প্রায় বিশ বছর যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে আফগানিস্তান। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আর্মি দেশটির কমিউনিস্ট সরকারকে সহায়তার জন্য আগ্রাসন চালায়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা চলে যায় কিন্তু গৃহযুদ্ধ অব্যাহত থাকে। আর এ নৈরাজ্যের মধ্যেই তৈরি হয় তালেবান, পশতু ভাষায় যার অর্থ ছাত্র।

তারা প্রথমে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় অবস্থান তৈরি করে এবং ১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান নেয়। গৃহযুদ্ধে অতিষ্ঠ আফগানদের তখন তারা দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা উন্নত করার অঙ্গীকার করেছিলো। প্রধানত সৌদি অর্থায়নে তারা ধর্মীয় স্কুল গুলোতে সরব হয়ে উঠে।

যুদ্ধ কেন দীর্ঘতর হলো?

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ অনেক। তবে আফগান সরকার ও বাহিনীর সীমাবদ্ধতা ও দীর্ঘ সময়ের জন্য সৈন্য রাখতে অন্য দেশগুলোর অনিচ্ছার সুযোগে, আবারো শক্তি ফিরে পাওয়ার সুযোগ পায় তালেবান।

২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ও এক লাখ সৈন্য আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। এটা তালেবানকে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তি পুনরুদ্ধারের সুযোগ করে দেয়।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের দায়ুদ আজামীর মতে যুদ্ধ এখনো চলার কারণগুলো হলো-

১. হামলার রাজনৈতিক অস্পষ্টতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

২. শান্তি আলোচনা চলার সময়েও তালেবানরা তাদের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে

৩. ইসলামি জঙ্গিদের সহিংসতা বেড়ে যাওয়া

৪. পাকিস্তানের ভূমিকা

তালেবান এখনো শক্তিশালী যেভাবে

তালেবান বছরে দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ আয় করেছে। এর বড় অংশই মাদক থেকে। আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আফিম উৎপাদনকারী দেশ যার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয় হেরোইন তৈরিতে।

নিজের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কর আদায়ের মাধ্যমেও বিপুল অর্থ আয় করেছে তালেবান। আর খনি, টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যবসা তো রয়েছেই। পাকিস্তান ও ইরান তাদের অর্থায়নের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে কিন্তু ওই অঞ্চলের কিছু ব্যক্তি তালেবানকে সহায়তা করেছে বলেই মনে করা হয়।

কতটা মূল্য নিয়েছে এ যুদ্ধ?

এর উত্তর - সর্বোচ্চ। এতে কত আফগান সৈন্য মারা গেছে তার হিসাব নেই। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বলেছেন ২০১৪ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৫ হাজার সদস্য নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাহিনীর সাড়ে তিন হাজার সেনা মারা গেছে যার মধ্যে আমেরিকান ২ হাজার ৩০০। আফগান বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি। চলতি বছরের এক রিপোর্টে জাতিসংঘ বলছে, ৩২ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

এদিকে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইন্সটিটিউট বলছে ৪২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তাদের হিসেবে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে ২০০১ সাল থেকে প্রায় ৫ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি এখন বিষয়টি দেখছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনিও এখন সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাচ্ছেন।

ওডি/ডিএইচ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড